যদিও রাজনীতিবিদরা কভিড-১৯-এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছেন, কিন্তু বিজ্ঞানীরা একে অন্যকে যেভাবে সহযোগিতা করছেন তা আগে কখনো দেখা যায়নি।
করোনাভাইরাস যেহেতু নতুন ভাইরাস এবং এর সম্পর্কে আমরা সবকিছু ঠিকভাবে জানিও না।
ফলে যতই নতুন বৈজ্ঞানিক ডাটা সামনে আসছে আমাদেরও সম্ভবত একে মোকাবেলার উপায় বদলাতে হবে।
এর মানে এই নয় যে বিজ্ঞান বিশ্বাসযোগ্য নয়।
আমরা সময়ের সঙ্গে পুরো চিত্রটি পেয়ে যাব।
এরই মধ্যে দারুণ গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে যা কিনা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।
এখানে তিনটি বিষয় আলোচনা করা হলো যা নিয়ে বিজ্ঞানীরা দ্বিমত পোষণ করেছেন।
ফেস মাস্ক
নভেল করোনাভাইরাস বিস্তৃত হয় হাঁচি, কাশি এবং কথা বলার মধ্য দিয়ে।
ভাইরাসের এই বিস্তৃতি ঠেকাতে ফেস মাস্ক অনেক দেশে বাধ্যতামূলক।
রয়াল সোসাইটির একটি রিপোর্টেও জনসম্মুখে মাস্ক পরার পক্ষে মত দেয়া হয়েছে।
পিআর রিভিউ না করা এই গবেষণায় যুক্তি দেখিয়ে বলা হয়েছে যে যদি কোথাও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না হয় তবে সেখানে ফেস মাস্ক পরে কভিড-১৯-এর সংক্রমণ হ্রাস করা সম্ভব।
আরেকটি অপেক্ষাকৃত ছোট ক্লিনিক্যাল স্টাডিতে বলা হয়েছে, সংক্রমিত শিশুরা যদি মাস্ক পরিধান করে তবে তারা পরিবারের অন্যদের মাঝে ভাইরাস ছড়াতে পারে না।
কিন্তু এক্ষেত্রে বিজ্ঞান বেশ জটিল।
ফেস মাস্ক যে পরে সে নিজেকে করোনাভাইরাসের বাতাসে ভাসমান কণাকেও নিশ্বাসের মাধ্যমে টেনে নেয়, যা কিনা সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
আরেকটি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে মাস্ক পরা সুরক্ষার একটি গোলমেলে ধারণা দেয়।
অর্থাৎ যিনি মাস্ক পরেন তিনি হয়তো নিয়ন্ত্রণের অন্যান্য যেসব উপায় সেগুলো এড়িয়ে যান।
আমরা জানি যে ফেস মাস্ক আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসকে অনেক দ্রুত ও গভীর করে।
এতে অনেক দূষিত বাতাস ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।
অনেক বিজ্ঞানী যে কারণে রয়েল সোসাইটির প্রতিবেদনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
তারা মাস্কের কার্যকারিতার আরো অনেক বেশি প্রমাণের দাবি করেছেন।
অবশ্য বেশির ভাগ বিজ্ঞানী বলছেন, নিরাপদে থাকতে যথাযথ প্রমাণের স্বল্পতা থাকার পরও মাস্ক পরা উচিত।
ইমিউনিটি
কভিড-১৯-এর ইমিউনিটি কেমন হবে তা নির্ধারণ করতে কাজ করে যাচ্ছেন ইমিউনোলজিস্টরা।
বেশির ভাগ গবেষণা মনোযোগ দিয়েছে অ্যান্টিবডি নিউট্রোলাইজিং করার দিকে, যা উৎপাদিত হয় তথাকথিত বি সেল দ্বারা।
যা আবদ্ধ ভাইরাল প্রোটিনের সঙ্গে এবং সরাসরি সংক্রমণ রোধ করে।
গবেষণা বলছে, নিউট্রোলাইজিং অ্যান্টিবডির স্তর সংক্রমণের কয়েক সপ্তাহে খুব উচ্চ থাকে।
কিন্তু ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে।
চীনে এক গবেষণায় দেখা গেছে, সংক্রমণের দুই-তিন মাস পর থেকে অ্যান্টিবডি লেভেল কমতে থাকে।
এটা সন্দেহ তৈরি করেছে যে লোকেরা আসলেই দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা পেতে পারে কিনা।
এ গবেষণা সত্যি হতে হলে অবশ্য আরো কিছু গবেষণা দ্বারা এটি সমর্থিত হতে হবে।
এটি দীর্ঘমেয়াদি ইমিউনিটিসহ ভ্যাকসিন উৎপাদন করা সম্ভব কিনা এ বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।
যেখানে অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন অ্যান্টিবডি ইমিউনিটির মূল চাবিকাঠি, সেখানে অন্যরা মত দেন যে ইমিউন সেল যাকে টি সেল বলা হয়, সেটি উত্পন্ন হয় যখন শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়।
এগুলো ভবিষ্যতে একই বা অনুরূপ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
গবেষণা বলছে, কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াই করা অনেক রোগীর ক্ষেত্রে টি সেলগুলো কাজ করছে।
সাম্প্রতিক আরেকটি গবেষণা বলছে, মৃদু ও উপসর্গহীন অনেক রোগীর ক্ষেত্রে টি সেলগুলোর মাধ্যমে পাওয়া ইমিউনিটি রয়েছে, এমনকি যখন অ্যান্টিবডি চিহ্নিত করা যায় না তখনো।
গবেষকরা বিশ্বাস করেন, এটা পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টিকে রুখতে অথবা সীমিত রাখতে পারবে।
ধারণা করা হচ্ছে এক-তৃতীয়াংশ উপসর্গহীন কভিড-১৯ রোগীর ক্ষেত্রে হয়তো এ ধরনের ইমিউনিটি রয়েছে।
যদিও এটা কীভাবে এবং কতক্ষণ কাজ করে তা পরিষ্কার না।
সংক্রমণের সংখ্যা
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সংখ্যা বিশ্বব্যাপী মারাত্মকভাবে ওঠানামা করে।
কিছু অঞ্চলে ১ শতাংশেরও কম জনগণ আক্রান্ত হওয়ার খবর জানা গেছে, আবার অন্য কোথাও কভিড-১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি।
একটি গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে কেবল ৩৫ শতাংশ উপসর্গসম্পন্ন সংক্রমণের কথা রিপোর্ট করা হয়েছে, যা অন্য কিছু দেশের আরো কম।
সত্যিকারের বিস্তার অনুমান করার সময় বিজ্ঞানীরা প্রধান দুটি পদ্ধতির একটি ব্যবহার করেন।
তারা হয় জনগণের কাছ থেকে নমুনা নিয়ে অ্যান্টিবডি টেস্ট করে সে সংখ্যা প্রকাশ করেন অথবা ম্যাথমেটিক্যাল মডেল ব্যবহার করে কীভাবে ভাইরাস জনগণকে আক্রান্ত করে তার ভবিষ্যদ্বাণী করেন।
এ ধরনের মডেলগুলো আলাদা হিসাব দেয়।
কানাডার টরন্টো ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় বিশ্বের নানা জায়গার মানুষের কাছ থেকে রক্ত পরীক্ষার ডাটা সংগ্রহ করে তা মূল্যায়ন করে আবিষ্কার করেছে যে ভাইরাসের অনুপাতের পরিমাণ দেশের ভিত্তিতে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়।
আমরা জানি না কেন।
তবে বয়স, স্বাস্থ্য ও ভাইরাসের বিস্তৃতির কারণে পার্থক্যের সম্ভাবনা থাকতে পারে কিংবা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের নীতির কারণেও।
দ্য কনভারসেশন