লকডাউন শেষে যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে খুনোখুনি

বণিক বার্তা অনলাইন

উষ্ণ আবহাওয়ার সঙ্গে সহিংস অপরাধপ্রবণতার একটা সম্পর্ক রয়েছে। খুন-খারাবির ঘটনার সরকারি পরিসংখ্যানেই যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রবণতা বেশ লক্ষ্যণীয়। তবে এবার করোনাভাইরাসের কারণে টানা কয়েক সপ্তাহের লকডাউন শেষে যুক্তরাষ্ট্রে রক্তক্ষয়ের ঘটনা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। 

মিসৌরি-সেন্ট লুই বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধী বিশেষজ্ঞ রিচার্ড রোজেনফেল্ডের মতে, ২০টি বড় শহরজুড়ে জুনের শেষ দিকে মে মাসের তুলনায় খুনের হার গড়ে ৩৭ শতাংশ বেশি ছিল। অথচ এক বছর আগেও এ সময়ে খুনের হার বৃদ্ধি ছিল মাত্র ৮ শতাংশ। 

কানসাস সিটিতে গ্যাস স্টেশনের বাইরে দুইজন অপরিচিত লোক তর্ক করতে করতে গুলি চালিয়ে একজনকে মেরে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। কিছু জায়গায় রক্তক্ষয়ের ঘটনাগুলো কানসাসের চেয়েও অনেক বেশি নির্মমতার গল্প তুলে ধরেছে। এগুলোর বেশিরভাগই গ্যাস স্টেশনের সংঘাতের মতো বিচ্ছিন্ন, সহিংসতার এবং অপরিচিতদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে হত্যার মতো পরিস্থিতি, যার আসলে ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া মশকিল।

হত্যার শিকার হওয়া গর্ভবতী এক নারীর স্বজন বলছেন, আমাদের চারদিকে খালি খুনোখুনি। একটা ভয়ানক পরিস্থিতি!

তবে এই কয়েক মাসেই বিশেষজ্ঞরা সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করছেন। আর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রক্তাক্ত ঘটনাগুলোর জন্য বিরোধী জোট ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতৃত্বাধীন শহরগুলোতে নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং মে মাসের শেষ দিকে পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভকে দায়ী করেছেন। তবে অপরাধবিদরা প্রেসিডেন্টের এমন দাবির সঙ্গে দ্বিমত করছেন।

কিছু বিশেষজ্ঞ খুনের ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে কমিউনিটি প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্থিতিশীলতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। আবার তাত্ত্বিকভাবে তারা বলছেন, সহিংসতাপ্রবণ লোকদের ঘরে থাকার নির্দেশনাকে গুরুত্ব দেয়ার সম্ভাবনা কম। তবে শহরের পর শহরে অপরাধ, খুন, আক্রমণ এবং কিছু জায়গায় গাড়ি চুরি ছাড়া বড় ধরনের অপরাধ কিন্তু কমেছে। 

নিউইয়র্কে গত বছরের তুলনায় হত্যার ঘটনা ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এ ঘটনায় শহর ও পুলিশ কর্মকর্তারা একটি নতুন আইনকে দায়ী করার চেষ্টা করেছেন, যেখানে আসামিকে বন্ড পোস্ট না করে মুক্তি দিতে এবং করোনাভাইরাসের কারণে জেল থেকে গণমুক্তি দেয়ার বিষয়টি যুক্ত। তবে মে মাসের মাঝামাঝিতে আগ্নেয়াস্ত্র জব্দে শৈথিল্যও এখানে বড় কারণ হতে পারে। 

বেশ কয়েকটি শহরের পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, জর্জ ফ্লয়েড হত্যার পর বিক্ষোভের ফলে কর্মকর্তারা অপরাধ দমনের দায়িত্ব থেকে দূরে সরে গেছেন। ফ্লয়েডের ঘটনা পরবর্তী পরিস্থিতি অপরাধীদের উৎসাহিত করেও থাকতে পারে।

ডেট্রয়েটের চিফ জেমস ক্রেগ বলেছেন, সহিংসতা বেড়েছে তবে গত দুই সপ্তাহে সেটা কমতেও শুরু করেছে। আমার অন্য শহরগুলোর মতো আইন প্রয়োগ শিথিল করিনি। 

অন্যান্য শহরের মতো কানসাস সিটিতেও লকডাউনের পর সহিংসতার ঘটনা উর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। সপ্তাহান্তে ৬টি নতুন খুনের পর চলতি বছর ১২২ জন খুনের ঘটনা ঘটেছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৯০ জন। ১৯৯৩ সালে ১৫৩ জন খুনের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে এগোচ্ছে এ শহর।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন