করোনাভাইরাস মহামারীর সূচনা থেকেই এই রোগটিতে আক্রান্ত হওয়া এবং ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে প্রাণীদের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে বিজ্ঞানীরা খুব গভীরভাবে পরীক্ষা করছেন।
কারণ করোনাভাইরাস পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে রোগ সৃষ্টি করে।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে প্রমাণিত হয় যে ভাইরাসটি বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়িয়েছে।
ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন, করোনাভাইরাসের যে সাবগ্রুপে নভেল ভাইরাসটি আছে তা ১৯৪০-এর দশকেই বাদুড়ের মধ্যে ছড়িয়েছিল।
সুতরাং গবেষকরা চিন্তা করছেন যে এই ভাইরাসটি গৃহপালিত প্রাণীগুলোকে সংক্রমিত করতে পারে কিনা, প্রাণীগুলোতে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে পারে কিনা এবং তারা এই রোগের মহামারীতে কোনো ভূমিকা নিতে পারে কিনা।
বিড়াল যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় পোষা প্রাণী।
২০১৯ সালের একটি জরিপ অনুযায়ী দেশটির পরিবারগুলোতে প্রায় ১১ মিলিয়ন বিড়াল প্রজাতির প্রাণী পোষা হয়।
নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস চিড়িয়াখানায় বাঘ ও সিংহ কভিড-১৯-এ সংক্রমিত হওয়ার পর পোষা প্রাণীতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল।
এছাড়া হংকং, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্রে পোষা বিড়ালের মধ্যে কভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া গিয়েছিল।
মে মাসের গোড়ার দিকে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষক দলকে বিড়ালের মধ্যে কভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নৈতিক অনুমোদন দেয়া হয়েছিল এবং দ্রুত তারা পুরো যুক্তরাজ্যে বিড়ালের কাছ থেকে নেয়া নমুনাগুলো পরীক্ষা করা শুরু করেছিল।
সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টায় শত শত নমুনা পরীক্ষার পর শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের দক্ষিণে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত একটি বিড়ালকে শনাক্ত করা হয়।
পশু চিকিৎসকদের জমা দেয়া আরো নমুনা পরীক্ষা করে দলটি দেখেছে বিড়ালটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
এটা প্রমাণ করে যে বিড়ালে ভাইরাসটির সত্যিকারের সংক্রমণ হয়েছে এবং এটা নিশ্চিত করে যে এটা নমুনা দূষণের সহজ ঘটনা নয়।
পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে বিড়ালটি তার মালিকদের কাছ থেকে সংক্রমিত হয়েছিল, যিনি এর আগে কভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছিলেন।
গবেষণাটিতে জড়িত গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি ইনফেকশাস ডিজিজের অধ্যাপক উইলি ওয়েয়ার বলেন, আমাদের এ গবেষণাটি যুক্তরাজ্যে কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে মিলে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার লক্ষণ বিড়ালদের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
শত শত পরীক্ষার মধ্যে একটি সংক্রমিত সন্ধান আমাদের জানিয়ে দেয় যে বিড়ালের সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে অতি নগণ্য।
যদিও বিড়ালটির মধ্যে হালকা লক্ষণ দেখা গেছে, পানিতে ছলছল করা চোখ ও নাক সর্দিযুক্ত ছিল।
তবে এ লক্ষণগুলো হার্পিসভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কভিড-১৯ বিড়ালটিকে অসুস্থ করে তুলেছিল এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং বিড়াল ও তার মালিক ভাইরাসটি থেকে সেরে উঠেছিল।
এখন পর্যন্ত পাওয়া সব প্রমাণ জানিয়েছে যে বিড়ালরা কভিড-১৯ ছড়িয়ে দেয়ার সঙ্গে জড়িত নয়।
উইলি ওয়েয়ার বলেন, আমাদের ফলাফল এবং যুক্তরাজ্যের পরীক্ষামূলক কাজ প্রমাণ করে যে বিড়াল কেবল ক্ষণস্থায়ীভাবে সংক্রমিত হয়েছিল, যা পোষা প্রাণীর মালিকদের নিশ্চিন্ত করতে পারে।
আপনার বিড়ালটিতে করোনাভাইরাস রয়েছে এটা অসম্ভব এবং এটা যদি হয়েও থাকে তবে সেটা কোনোভাবেই ছড়িয়ে দেয়ার সঙ্গে জড়িত থাকবে না।
স্ক্রল ডট ইন