বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে ওরিক্স বায়ো-টেক

কর্মসংস্থান হবে দুই হাজার মানুষের

নিজস্ব প্রতিবেদক

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ‘বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি’-তে বায়োটেকনোলজি নিয়ে কাজ করবে ওরিক্স বায়ো-টেক লিমিটেড। এলক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে ব্লক-২ এ ২৫ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি-তে প্রতিষ্ঠানটি ৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানা গেছে।

আজ মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) আগারগাঁও এ আইসিটি টাওয়ারের অডিটোরিয়ামে এ-লক্ষ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম এর সভাপতিত্বে উক্ত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে হবে ৩০ কোটি ডলারের বৈদেশিক বিনিয়োগ, প্রায় দুই হাজার জনের উচ্চ বেতনের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দেশ বায়ো-প্রযুক্তিতে অনেক দূর এগিয়ে যাবে; যা ভিশন- ২০২১ বাস্তবায়নে ব্যাপক অবদান রাখবে বলে উপস্থাপনায় বলা হয়।

উন্নত বিশ্বে এখন (বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরেোপ, চীন, জাপান) বায়ো-টেকনোলজির ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে আরো বলা হয়, মূলত Human Plasma থেকে বায়ো-টেক পণ্য উৎপাদিত হয়। এইচআইভি এইডস এবং ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় এসব বায়ো-টেক ওষুধ এখন ব্যবহার হচ্ছে। ওরিক্স বায়ো-টেক লিমিটেড বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি-তে বছরে ১২০০ টন প্লাজমা বিশ্লেষণে সক্ষম প্ল্যান্ট নির্মাণ করতে চায়; যার সাথে ২০টি প্লাজমা সংগ্রহ স্টেশন সংযুক্ত থাকবে। প্রতিষ্ঠানটি এক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্যান্য উন্নত বিশ্বের মান বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজারে বায়ো-টেক পণ্য সহজলভ্য হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, কালিয়াকৈরে অবস্থিত ‘বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি’ দেশের প্রথম ও বৃহত্তম হাই-টেক পার্ক। ২০১৪ সালে আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ সরেজমিনে এই পার্কটি পরিদর্শন করে পার্কের উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ৩৫৫ একর জমিতে স্থাপিত ‘বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি’-তে বর্তমানে ৩৭টি কোম্পানিকে জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে ৫টি কোম্পানি উৎপাদন শুরু করেছে। কোম্পানিগুলো এই পার্কে মোবাইল ফোন এসেম্বলিং ও উৎপাদন, অপটিকাল কেবল, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ডাটা-সেন্টার প্রভৃতি উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবে।

এই হাই-টেক পার্কে ইতোমধ্যে ৩২৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে এবং প্রায় ১৩ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ২০২৫ সনের মধ্যে হাই-টেক পার্কগুলোতে ২৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে বলে আমরা আশাবাদী। তিনি হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগ সম্ভবনা ও সুযোগ সম্পর্কে একটি উপস্থাপনা পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে তুলে ধরেন।

আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, আইসিটি বিভাগ করোনা মোকাবেলায় যে ভূমিকা রেখেছে তা দেশের সর্বস্তরে প্রশংসিত হয়েছে। করোনার সংক্রমণ রোধে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে আইসিটি বিভাগ। লাইভ করোনা টেস্ট, কভিড-১৯ ট্র্যাকার, টেলি-মেডিসিন ও টেলিহেলথ, সহযোদ্ধা-প্লাজমা প্লাটফর্ম ইত্যাদি বহু উদ্যোগের সুফল পেয়েছে দেশবাসী। এর থেকেই একটি দেশের আইসিটি খাতের অগ্রগতির চিত্র সুস্পষ্ট।

সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান বলেন, সামিট টেকনোপলিসে দেশের সর্বপ্রথম বায়ো-টেক শিল্প স্থাপনের জন্য ওরিক্সকে স্বাগত জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত। প্রাক-কোভিড পরিস্থিতিতে যখন এই বিনিয়োগের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা হয় তখন প্লাজমা ফ্রাকশানেশন প্ল্যান্ট স্থাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। করোনাভাইরাসের একটি সম্ভ্যাব্য চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে এখন যার তাৎপর্য বহুমাত্রায় উন্মোচিত হয়েছে।

অনষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) জনাব হোসনে আরা বেগম এনডিসি বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মানবসম্পদ উন্নয়নে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ একেবারে ন্যূনতম জনবল নিয়েও নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হন ওরিক্স বায়ো-টেক লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব ডেভিড বো। অনুষ্ঠান শেষ হয় ওরিক্স বায়ো-টেক লি. এর চেয়ারম্যান জনাব কাজী শাকিল এবং সামিট টেকনোপলিশ লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব আবু রেজা খান এর ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতপূর্বক আইসিটি পরিবারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন