মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতায় ১০ দিন পর সূচকে পতন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘদিনের মন্দা বাজারেও বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ারের দর কিছুটা বেড়েছিল টানা ১০ দিন উত্থানে। ফলে গতকাল দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। এতে গতকাল বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ ছিল বেশি। কারণে টানা ১০ দিন উত্থানের পর গতকাল দুই স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক কমেছে। তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আগের দিনের তুলনায় গতকাল লেনদেন কমলেও বেড়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে কয়েক মাস ধরেই পুঁজিবাজার তলানিতে রয়েছে। অবস্থায় সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি, সুশাসন নিশ্চিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি ধীরে ধীরে অর্থনীতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। আর এর প্রভাবে টানা ১০ দিন পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে। সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়ানো। টানা দুদিন হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে পুঁজিবাজারে। টানা উত্থানের পর দুয়েকদিন দর সংশোধন হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে গতকাল শেয়ার বিক্রির চাপ কিছুটা বেশি থাকলেও অনেকেই কিন্তু শেয়ার কিনেছে, যা ইতিবাচক।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১২ পয়েন্ট কমে হাজার ৫৩৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইএক্স কমলেও ব্লুচিপ সূচক ডিএস৩০ প্রায় পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে হাজার ৫৪৪ পয়েন্টে। আর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস প্রায় পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৬৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

গতকাল ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে লাখ ৪৫ হাজার ৪১৬ কোটি ৮৬ লাখ ৪৯ হাজার টাকা, যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ২৮২ কোটি ৪৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা বেশি। রোববার বাজার মূলধন ছিল লাখ ৪৫ হাজার ১৩৪ কোটি ৩৯ লাখ ১৯ হাজার টাকা।

ডিএসইতে গতকাল মোট হাজার ৪৮ কোটি লাখ ৬৫ হাজার টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসের চেয়ে যা ৮০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা কম। রোববার লেনদেন হয়েছিল হাজার ১২৮ কোটি ৬৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকার শেয়ার। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৫৪টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১১১টির, কমেছে ২১৭টির অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টির শেয়ারদর। এদিন বাজারে লেনদেন হওয়া মোট সিকিউরিটিজের ৬১ দশমিক ২৯ শতাংশের দর কমেছে।

খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইতে ১৮ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষে রয়েছে ওষুধ খাত। ১২ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাত। আর ১০ শতাংশ লেনদেন নিয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল সাধারণ বীমা বিবিধ খাত।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো  লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, এসকে ট্রিমস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি, গ্রামীণফোন, ব্র্যাক ব্যাংক, কনফিডেন্স সিমেন্ট, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট।

দর বাড়ার শীর্ষ তালিকায় থাকা সিকিউরিটিজ হচ্ছে আইসিবি তৃতীয় এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড, দেশ গার্মেন্টস, ইসলামী ব্যাংক, নর্দান জুট, স্টাইলক্রাফট, বেক্সিমকো লিমিটেড, আজিজ পাইপস, ন্যাশনাল টি, এপেক্স ফুটওয়্যার এসকে ট্রিমস।

অন্যদিকে দর কমার শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল শ্যামপুর সুগার মিল, জুট স্পিনার্স, মেঘনা পিইটি, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, ইমাম বাটন, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, ইউনাইটেড এয়ার, বিডি ফিন্যান্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।

দেশের আরেক স্টক এক্সচেঞ্জ সিএসইতে আজ প্রধান সূচক সিএসসিএক্স প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকালের চেয়ে সূচক কমেছে দশমিক ৮৮ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য শতাংশ। এদিন লেনদেন শেষে সূচকটি অবস্থান করছে হাজার ৮০০ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে, আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ৮০১ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট। আজ সিএসইর ব্লুচিপ সূচক সিএসই৩০ বেড়েছে ৪৯ দশমিক ১১ পয়েন্ট বা দশমিক ৪৪ শতাংশ।

গতকাল সিএসইতে মোট লেনদেন বেড়েছে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫৯ কোটি ৮৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা, আগের দিনে যা ছিল ২৬ কোটি ৫৪ লাখ হাজার টাকা। গতকাল সিএসইতে ২৮৩টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১১৩টির, কমেছে ১৪৪টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টির শেয়ারদর।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন