জুলাইয়ের শেষ দুই সপ্তাহ

যুক্তরাষ্ট্রে ৯৭ হাজার শিশু কভিড-১৯ পজিটিভ

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসে শিশুরা অপেক্ষাকৃত কম সংক্রমিত হয় কিংবা তাদের মৃত্যুঝুঁকিও কমএমন ধারণা যুক্তরাষ্ট্রে ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাইয়ের শেষ দুই সপ্তাহে দেশটিতে অন্তত ৯৭ হাজার শিশু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস অ্যান্ড দ্য চিলড্রেনস হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশনকর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সমীক্ষার আওতায় থাকা রাজ্য শহরে জুলাইয়ের শেষ দুই সপ্তাহে শিশুদের সংক্রমণের হার ৪০ শতাংশ বেড়েছে। 

সব মিলিয়ে মহামারী শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে লাখ ৩৮ হাজার ৯৮২ শিশু সংক্রমিত হয়েছে। তার মানে, মোট সংক্রমণের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি হয়েছে শেষ দুই সপ্তাহে।

শিক্ষার্থীদের বাবা-মা কিংবা শিক্ষা খাতের নেতারা যখন পুনরায় স্কুল খুলে দেয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন, ঠিক তখনই এল এমন ভয়াবহ প্রতিবেদন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু সংক্রমণে শীর্ষ দশটির মধ্যে সাতটিই পশ্চিম দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে। গুয়াম, পুয়ের্তো রিকো ওয়াশিংটন ডিসি ছাড়াও ৫৯টি রাজ্য থেকে তথ্য সংগ্রহ করার পর প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। টেক্সাস নিউইয়র্ক রাজ্যের পরিপূর্ণ তথ্য নেয়া হলে সংখ্যা আরো বাড়তে পারত।

রাজ্যভেদে অবশ্য বয়সের ব্যাপ্তি ছিল। কোথাও কোথাও ১৭ কিংবা ১৯ বছরের ঊর্ধ্বের শিশুদের বিবেচনায় নেয়া হয়নি। শুধু আলাবামা রাজ্যে ২৪ বছর বয়স সমীক্ষার আওতায় রাখা হয়। ফ্লোরিডা ইউটাহতে বয়সসীমা ছিল ১৪। শিশু সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয়েছে মিসৌরি, ওকলাহোমা, আলাস্কা, নেভাদা, ইদাহো মন্তানায়। নিউইয়র্ক, নিউজার্সিসহ আগের রাজ্যগুলোতে শিশু সংক্রমণের হার বেশ কম।

কিছু স্কুল পুনরায় খুলে দেয়ার পর সংক্রমণের চিত্রটা তুলে ধরা হয়েছে। আসলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বোঝাতে চাইছেন যে শিশু তরুণরা ভাইরাসটিতে কতটা সংক্রমিত হয় এবং ছড়ানোর ক্ষেত্রেই বা তা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। অবশ্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুরা কভিড-১৯- গুরুতরভাবে অসুস্থ হয় বেশ কমই।

শিশুদের এতটা বেশি সংক্রমণের খবর প্রকাশের পর এখন স্কুল পুনরায় খুলে দেয়ার বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিতভাবেই ভাবতে বসবেন আমেরিকান নীতিনির্ধারকরা।

জর্জিয়ার একটি স্কুলের জনাকীর্ণ ছবি সম্প্রতি সংবাদ শিরোনাম হয়। স্কুলটির প্রিন্সিপালের এক চিঠি থেকে জানা যায়, সেখানকার নয়জন করোনাভাইরাসে পজিটিভ; যার মধ্যে ছয়জন শিক্ষার্থী তিনজন স্টাফ।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নেতা বলে থাকেন, ভাইরাসটি শিশুদের জন্য বড় কোনো ঝুঁকির নয়। যদিও সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বয়স্ক শিশুরা ঠিক প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই সমানভাবে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। সম্প্রতি আরেক গবেষণা বলেছে, যেসব শিশুর বয়স পাঁচ বছরের কম তাদের নাক গলার সোয়াবে ভাইরাসের উপস্থিতি থাকে অনেক বেশি। দুটি বিষয় থেকেই করোনাভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে শিশুদের ভূমিকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

নতুন প্রতিবেদন বলছে, মে থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৮৬ শিশু। গত সপ্তাহে জর্জিয়ায় সাত বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে আগে কোনো ধরনের জটিলতাই ছিল না। মাসের শুরুর দিকে ফ্লোরিডায় দুই টিনএজের মৃত্যু হয়। রাজ্যটিতে সব মিলিয়ে মারা গেছে সাত শিশু।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, কৃষ্ণাঙ্গ আর হিস্পানিক শিশুরা করোনাভাইরাসে উচ্চহারে আক্রান্ত হয়, হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় করোনাভাইরাস সম্পর্কিত জটিলতা তৈরি হয়।

কভিড-১৯- বিশ্বে মোট সংক্রমণ দুই কোটি ছুঁই ছুঁই। এর মধ্যে ৫০ লাখেরও বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে প্রায় লাখ ৬৩ হাজার। জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির তথ্যমতে, দেশটিতে গত শনিবার পর্যন্ত সর্বশেষ পাঁচদিন গড়ে এক হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

রাজ্য স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, বৃহত্তর জমায়েতের কারণেই নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে এবং তরুণদের মধ্যেও সংক্রমণ বাড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ . অ্যান্থনি ফাউসি তরুণদের বিনীতভাবে অনুরোধ করেছেন যেন তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘শেকলে দুর্বল আংটা হয়ো না তোমরা। তরুণদের এই বার্তাটিই দিচ্ছি আমরা। অবশ্যই তারা ইচ্ছেকৃতভাবে কিংবা বিদ্বেষপূর্ণভাবে কিছুই করবে না, কিন্তু অসাবধানতাবশতই তারা যে কাজটি করছে তার মধ্য দিয়ে প্রাদুর্ভাবটি ছড়াচ্ছে।

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস সিএনএন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন