প্রস্তাবনার ছয় বছর পর সম্প্রসারিত হচ্ছে সিসিক

বণিক বার্তা প্রতিনিধি সিলেট

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সম্প্রসারণের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৪ সালে। নানা জটিলতায় দীর্ঘ ছয় বছরে কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে শুরু হচ্ছে সিসিক সম্প্রসারণের কার্যক্রম। এরই অংশ হিসেবে গত রোববার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সিলেট জেলা প্রশাসন। এর মধ্য দিয়ে আকার বাড়তে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে ছোট এই সিটি করপোরেশনের।

সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে সিলেট সদর দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বেশকিছু এলাকা সিলেট সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।

আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সবচেয়ে ছোট সিটি করপোরেশন সিলেট। ২৬ দশমিক বর্গকিলোমিটার আয়তনের নগরকে ২০১৪ সালে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয় সিসিক। নগরীর বর্তমান আকারের প্রায় ছয় গুণ আয়তন বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব জমা দেয়া হয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়ে। তবে পাঁচ বছর ধরে আটকে ছিল প্রস্তাবনা।

অবস্থায় গত বছরের নভেম্বর সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সিটি করপোরেশন সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নিয়ে সিলেট- আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী . কে আব্দুল মোমেন নগরীর আয়তন বাড়ানোর প্রস্তাবে একাত্মতা পোষণ করেন। ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনাও দেন তিনি।

এর প্রায় নয় মাস পর গত রোববার নগর সম্প্রসারণে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে জেলা প্রশাসন।

গণবিজ্ঞপ্তি জারির বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার শামমা লাবিবা অর্ণব বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের এলাকা সম্প্রসারণের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা থেকে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তিতে, সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের কোনো পরামর্শ বা অভিযোগ থাকলে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে জানানোর জন্য বলা হয়েছে।

গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে, সিলেট সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হতে যাওয়া এলাকাগুলো হলো সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নের কুমারগাঁও, মইয়ারচর (দাগ নম্বর ৭৭, ৮২, ৮৩, ৮৯, ৯০, ৯১ ব্যতীত) টুকেরবাজার ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ভূমি, খুরুমখলা শাহপুর, আখালিয়া (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি)

খাদিমনগর ইউনিয়নের কুমারগাঁও, খাদিমপাড়া ইউনিয়নের সাদিপুর প্রথম খণ্ড (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি), টিলাগড়, দেবপুর (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি), কসবা কুইটুক, সুলতানপুর চক, পেশনেওয়াজ।

টুলটিকর ইউনিয়নের সাদিপুর প্রথম খণ্ড (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি), টিলাগড়, দেবপুর (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি)

দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই ইউনিয়নের হবিনন্দি (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি), মণিপুর (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি), আলমপুর (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি), গোটাটিকর (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি)

বরইকান্দি ইউনিয়নের পিরিজপুর, ধরাধরপুর, বরইকান্দি (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি), গোধরাইল (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি)

তেতলী ইউনিয়নের ধরাধরপুর, বরইকান্দি (অবশিষ্টাংশ) (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি), বলদী (আংশিক)

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ১৮৭৮ সালে পৌনে দুই বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠন হয়েছিল সিলেট পৌরসভা। ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে পরিধি বাড়ে। তখন ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার করা হয় সিটি করপোরেশনের আয়তন। আয়তন লোকসংখ্যা কম হওয়ায় নগরীর ব্যয় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় সিসিক কর্তৃপক্ষকে। এছাড়া এবড়ো থেবড়ো মানচিত্রে নগর গড়ে ওঠায় নগর ব্যবস্থাপনায়ও সমস্যায় পড়তে হয়। ফলে সিটি করপোরেশন গঠনের প্রায় এক যুগ পর ১৬০ দশমিক ৬২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মহানগর করার প্রস্তাব দেয়া হয়। ওই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে সিসিকের ২৭টি ওয়ার্ডের সংখ্যা বেড়ে অর্ধশতাধিক হবে।

সিসিকের জনসংযোগ দপ্তর জানায়, সিলেট নগরীর বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। তবে নগরের আশপাশের এলাকার আরো কয়েক লাখ বাসিন্দা সিসিকের নাগরিক সুবিধা ভোগ করে। কিন্তু ওইসব এলাকা নগরের ভেতরে না হওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা যাচ্ছে না। এতে সিটি করপোরেশনের রাজস্বে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের গণবিজ্ঞপ্তিকে স্বাগত জানিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই নগর সম্প্রসারণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অবশেষে চেষ্টা সফল হতে যাচ্ছে। আশা করি, দ্রুত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। নগর সম্প্রসারিত হলে নাগরিক সেবাও বাড়বে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন