টুইটারও টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম কিনতে আগ্রহী

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনভিত্তিক বাইটডান্স নিয়ন্ত্রিত শর্ট ভিডিও তৈরির সোস্যাল মিডিয়া অ্যাপ টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে চাপে রয়েছে। তথ্যনিরাপত্তা দুর্বলতার অভিযোগে টিকটক নিষিদ্ধ করতে এক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে টিকটকের প্যারেন্ট কোম্পানিকে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম মার্কিন কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির পরামর্শ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এরই মধ্যে জনপ্রিয় অ্যাপ টিকটকের মার্কিন কার্যক্রম ক্রয়ে আলোচনা শুরু করেছে সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট। এবার টিকটকের মার্কিন কার্যক্রম ক্রয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারও। সংশ্লিষ্ট দুই সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

গত আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধে এক নির্বাহী আদেশে সই করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম স্থানীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরে ৪৫ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ব্যবসা পরিচালনার পথ অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মালিকানা হস্তান্তরে ব্যর্থ হলে দেশটিতে আর কোনো আর্থিক লেনদেন করতে পারবে না টিকটক কর্তৃপক্ষ। টিকটক নিষিদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ ওয়াশিংটন বেইজিংয়ের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

সাম্প্রতিক বিবৃতিতে টিকটক জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যবসা ধ্বংস করতে অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এমনকি তাদের যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম বিক্রি করতে বাধ্য করার মতো পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তথ্য নিরাপত্তার অজুহাতে দেশটিতে তাদের সঙ্গে অবিচার করা হচ্ছে। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে তারা আইনের আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

টিকটক বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন। বেইজিংয়ের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় শর্ট ভিডিও তৈরির অ্যাপ টিকটকের স্থানীয় কার্যক্রম নানা অজুহাত অপকৌশলে বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন, যা কোনো পরিস্থিতিতেই মেনে নেয়া হবে না। বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পে প্রতিযোগিতা নয়; একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকা ফার্স্ট নীতি অনুসরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত হেনস্তার শিকার হচ্ছে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অগ্রগতি থামাতে একের পর এক অন্যায় অভিযোগ করা হচ্ছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেক্কা দিতে সক্ষম সব চীনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন তথ্য নিরাপত্তার অভিযোগ তুলছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসার দিক থেকে দাবিয়ে রাখতে পরিকল্পিত ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এমন অপকৌশলের জবাব দেয়ার যথেষ্ট সুযোগ পন্থা চীনের হাতে রয়েছে। চীন প্রশাসন তাদের পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চালানো শুরু করলে তা মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য খুব একটা ইতিবাচক হবে না।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে এর আগে টিকটকের প্রধান কার্যালয় চীন থেকে সরানোর উদ্যোগ নিয়েছিল বাইটডান্স। চীনের বাইরে প্রধান কার্যালয় নির্মাণে টিকটকের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে লন্ডন। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যে কারণে লন্ডনের পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চল নিয়েও ভাবতে হচ্ছে টিকটক কর্তৃপক্ষকে। কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে এর আগে ওয়াল্ট ডিজনির সাবেক কো-নির্বাহী কেভিন মেয়ারকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে টিকটক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। টিকটকের নতুন সিইও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ওঠা চীন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ এড়াতে চীনের বাইরে কার্যালয় নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছেন।

শুধু টিকটক নয়; একই সঙ্গে আরেক চীনা ইন্টারনেট কোম্পানি টেনসেন্ট নিয়ন্ত্রিত টেক্সট ভয়েস মেসেজিং অ্যাপ উইচ্যাটকেও যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করতে দ্বিতীয় আরেকটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। উভয় নির্বাহী আদেশ কার্যকর হবে ৪৫ দিন পর। অর্থাৎ দেড় মাস পর বাইটডান্স টেনসেন্টের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের আর্থিক লেনদেন বন্ধ হয়ে যাবে এবং বন্ধ থাকবে প্রতিষ্ঠান দুটি নিয়ন্ত্রিত সেবা টিকটক উইচ্যাটের কার্যক্রম।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগস্ট স্বাক্ষরিত নির্বাহী আদেশে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি টিকটক উইচ্যাট। যে কারণে সেবা দুটির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন চীনভিত্তিক সফটওয়্যার কোম্পানি বা তাদের সেবার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। ধরনের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করছে, যারা চীন সরকারের কাছে তথ্য পাচার করছে বলে আমরা মনে করছি। এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের মধ্যে রয়েছে ফেশিয়াল রিকগনিশন প্যাটার্ন, ঠিকানা, ফোন নম্বর কনট্যাক্ট।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন