কভিড-১৯ স্মৃতিশক্তি হ্রাস করতে পারে!

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস মানুষের মস্তিষ্ক স্মৃতিশক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এটা এখন স্পষ্ট যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনেক রোগীর মধ্যে ঘ্রাণ না পাওয়া এবং প্রলাপ বকার মতো স্নায়ুজনিত লক্ষণগুলো দেখা দেয়, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া মায়ালজিক এনসেফ্যালোমেলাইটিস/ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম এবং গিলাইন-ব্যারে সিনড্রোমসহ মস্তিষ্কের দীর্ঘস্থায়ী পরিণতিও রয়েছে। মস্তিষ্কের টিস্যুগুলোতে সরাসরি ভাইরাল সংক্রমণের ফলে এই ক্ষতিগুলো হতে পারে।

অসুস্থতার সময় আচরণ পরিবর্তন এবং শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মস্তিষ্কে বিশেষায়িত প্রতিরোধ ব্যবস্থাও বেশ কয়েকটি ভূমিকা পালন করে। এটা সম্প্রতি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে মস্তিষ্কের কোষগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী নিউরোইমিউন কোষগুলো সাধারণ স্মৃতি গঠনের জন্য প্রয়োজনীয়। দুর্ভাগ্যক্রমে কোষগুলো আবার মস্তিষ্কে করোনাভাইরাসের আক্রমণ তীব্র স্নায়বিক লক্ষণ, দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার কারণ হতে পারে। অসুস্থতা প্রদাহের সময় মস্তিষ্কের বিশেষায়িত প্রতিরোধক কোষগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে, প্রচুর পরিমাণে সংকেত তৈরি করে এবং কীভাবে তারা নিউরনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা সংশোধন করে।

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ন্যাটালি সি ট্রনসন বলেছেন, যেহেতু কভিড-১৯ বৃহৎ আকারের প্রদাহজনিত সংকেতের সঙ্গে জড়িত, তাই স্মৃতির ওপর রোগের প্রভাব আমার কাছে বিশেষ আগ্রহের। কারণ এতে জ্ঞান মনোযোগের ওপর স্বল্পমেয়াদি প্রভাব এবং স্মৃতিতে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনের আশঙ্কা রয়েছে। বার্ধক্যজনিত সময় আলঝেইমার রোগসহ জ্ঞানীয় হ্রাস এবং স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকিও রয়েছে।

অসুস্থতার পর মস্তিষ্কে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনগুলো বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত কগনিটিভ ক্ষয় এবং আলঝেইমার রোগের ঝুঁকির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। নিউরোইমিউন কোষ এবং প্রদাহজনিত সংকেতের বিঘ্নিত ধ্বংসাত্মক ক্রিয়া স্মৃতিকে স্থায়ীভাবে ক্ষতি করতে পারে। এটা নিউরোনাল সংযোগ বা নিউরনগুলোতে নিজেরাই স্থায়ী ক্ষতির মাধ্যমে এবং নিউরনগুলো কীভাবে কাজ করে তার আরো সূক্ষ্ম পরিবর্তনের মাধ্যমে ঘটাতে পারে।

কভিড-১৯ স্মৃতিতে অবিচ্ছিন্ন প্রভাবগুলোর মধ্যে সম্ভাব্য সংযোগ মূলত অন্যান্য অসুস্থতার পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, অনেক রোগী যারা হার্ট অ্যাটাক বা বাইপাস সার্জারি থেকে সেরে ওঠেন তাদের দীর্ঘস্থায়ী জ্ঞানীয় ঘাটতি তৈরি হয়, যা বার্ধক্যের সময় তীব্র আকার ধারণ করে।

সুতরাং এটা অনেকটা স্পষ্ট যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণটি স্মৃতিশক্তি হ্রাস বা আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। তবে এই ঝুঁকিটি কভিড-১৯-এর চিকিৎসা প্রতিরোধের মাধ্যমে হ্রাস করা যেতে পারে। প্রতিরোধ চিকিৎসা উভয়ই অসুস্থতা, প্রদাহের তীব্রতা সময়কাল হ্রাস করার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। নতুন একটি গবেষণায় পরামর্শ দেয়া হয়েছে, ফ্লু শট নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিনসহ সাধারণ ভ্যাকসিনগুলো আলঝেইমারজনিত ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

অধিকন্তু কভিড-১৯-এর কয়েকটি উদীয়মান চিকিৎসা হলো ওষুধ, যা অতিরিক্ত ইমিউন সক্রিয়করণ এবং প্রদাহজনক অবস্থাকে দমন করে। সম্ভাব্য এই চিকিৎসাগুলো মস্তিষ্কে প্রদাহের প্রভাবও হ্রাস করবে এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কমিয়ে আনবে।

মনোবিজ্ঞানী ন্যাটালি সি ট্রনসন বলেন, মহামারীটি শেষ হওয়ার পরও কভিড-১৯ স্বাস্থ্য সুস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে থাকবে। আর এতে গবেষকরাও বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত জ্ঞানীয় অবনতিতে প্রদাহের ভূমিকা নিয়ে নতুন অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করবেন।

সায়েন্স অ্যালার্ট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন