জি৭ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে গভীরতম মন্দায় যুক্তরাজ্য

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলতি সপ্তাহে মন্দায় পড়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করতে যাচ্ছে ব্রিটেন। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর এই প্রথম মন্দায় পড়তে যাচ্ছে জি৭ভুক্ত দেশটি। নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর ফলে সৃষ্ট মন্দা ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মন্দা হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। খবর গার্ডিয়ান।

আগামী বুধবার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিস্তারিত উপাত্ত প্রকাশ করতে যাচ্ছে অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস (ওএনএস) চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের জিডিপি যে ২১ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, তা ওই উপাত্তে ফুটে উঠতে পারে।

প্রথম প্রান্তিকে দশমিক শতাংশ সংকোচনের পর সর্বশেষ উপাত্তে দেশটি যে মন্দায় পড়েছে, তা ফুটে উঠেছে। নভেল করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করেছিল যুক্তরাজ্য সরকার। টানা দুই প্রান্তিকে কোনো দেশের অর্থনীতি সংকোচন হলে অর্থনীতিবিদরা তাকে মন্দা ঘোষণা করেন।

প্রবৃদ্ধি চাঙ্গায় দেশটি যখন লকডাউন নীতিমালা শিথিল করা না-করার মধ্যে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে, তখনই মন্দার বিষয়টি নিশ্চিত হতে যাচ্ছে। দ্বিতীয় দফায় কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়তে পারে আশঙ্কায় লকডাউন নীতিমালা শিথিলের বিষয়টিও পুনর্বিবেচনা করার কথা বলছেন অনেক বিশ্লেষক। গত চার মাস কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে থাকার কারণে অনেক কোম্পানিই মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়ছে এবং তাদের বেশির ভাগই কর্মী ছাঁটাইয়ে যাচ্ছে। নতুন করে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় অনেক জায়গায় স্থানীয়ভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে।

১৯৩০-এর দশকের মহামন্দার পর বৈশ্বিক অর্থনীতিই গভীর শ্লথগতিতে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইউরোজোন এরই মধ্যে মন্দায় পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে কভিড-১৯ মহামারীর কেন্দ্রস্থল চীন দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধিতে ফেরার মাধ্যমে মন্দা এড়িয়েছে।

ব্রিটেনের অর্থনীতিতে দ্বিতীয় প্রান্তিকে যে সংকোচন দেখা দিয়েছে, তা জি৭ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ হতে যাচ্ছে। লকডাউন নীতিমালা বহাল রাখা এবং কঠোর বিধিনিষেধ ধীরে ধীরে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়ায় অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে।

গত সপ্তাহে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড (বিওই) জানায়, অর্থনীতি চাঙ্গা হতে সময় লাগলেও অর্থনীতিতে মহামারীর যে রকম প্রভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তেমনটা পড়বে না। তবে বেকারত্ব হার বৃদ্ধিসহ দীর্ঘমেয়াদি বেশকিছু প্রভাব থেকে যাবে বলে সতর্কবার্তা দেয় বিওই।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল রিসার্চের উপপরিচালক গ্যারি ইয়াং বলেন, মহামারীপূর্ব সময়ের প্রবৃদ্ধিতে ফিরতে আগের চেয়ে আরো বেশি সময় লাগবে ব্রিটেনের। যে প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২০১৯ শেষ হয়েছে, তাতে ফিরতে ব্রিটেনের ২০২৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধ লেগে যাবে।

তিনি আরো বলেন, দ্রুত আরোগ্যের কিছু সম্ভাবনা রয়েছে, তবে যে ঝুঁকিগুলো রয়েছে, তাতে শ্লথগতিরই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আরেকবার যদি কভিড-১৯ সংক্রমণ ঘটে তাহলে ফের বিস্তৃত লকডাউন আরোপ করতে হবে এবং তাতে প্রবৃদ্ধিতে ফেরার প্রক্রিয়াটা বাধাগ্রস্ত হবে।

মহামারী আঘাত হানার আগে থেকেই অর্থনীতি চাঙ্গায় হিমশিম খাচ্ছিল ব্রিটেন। ব্রেক্সিট অনিশ্চয়তা এবং গত ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে ব্যবসায় বিনিয়োগ ভোক্তা আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাবের আগেই ২০১৯ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি সম্প্রসারণে ব্যর্থ হয়েছিল ব্রিটেন।

মাসওয়ারি উপাত্তে দেখা গেছে, লকডাউন নীতিমালা ধীরে ধীরে শিথিল হওয়ার কারণে ভোক্তাব্যয় বৃদ্ধিতে গত মে মাসে প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছিল ব্রিটেনের অর্থনীতি। বুধবার প্রকাশিতব্য উপাত্তে তত্পরবর্তী মাসগুলোর প্রবৃদ্ধি উপাত্ত ফুটে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অতি গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন দোকানপাটও চালুর ফলে ভোক্তাব্যয় বৃদ্ধির ফলে চলতি মাসে জিডিপি প্রবৃদ্ধি শতাংশে দাঁড়াতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

ব্রিটেনের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধিতে ফেরার ইঙ্গিত দিলেও সরকারের ভর্তুকি ভাতা বন্ধের ফলে বেকারত্ব হার বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া আতিথেয়তা অবকাশ খাতের মতো পণ্য সেবা খাতগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা মহামারী সময়ের আগের চেয়ে লক্ষণীয়ভাবে দুর্বল রয়েছে।  

সঞ্জয় রাজা নামে ডয়েচে ব্যাংকের এক অর্থনীতিবিদ বলেন, অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি রয়েছে বিভিন্ন কারণে। যার মধ্যে রয়েছে স্থানীয়ভাবে লকডাউন আরোপ, দুর্বল বৈদেশিক চাহিদা, ব্রেক্সিট অনিশ্চয়তা ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন