সস্তায় সয়াবিন কিনতে ব্রাজিলমুখী চীনা আমদানিকারকরা

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীন বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন আমদানিকারক দেশ। কারণে চীনে আমদানির উত্থান-পতন আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের মূল্য নির্ধারণে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। আর চীনের বাজার ধরতে সয়াবিনের অন্যতম শীর্ষ দুই রফতানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিলের মধ্যকার দ্বৈরথ বেশ পুরনো। সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যমান প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে অনেকটাই এগিয়ে গেছে ব্রাজিল। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক বিরোধ বাণিজ্যযুদ্ধের জের ধরে বাড়তি শুল্কারোপ করায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানিতে চীনা আমদানিকারকদের খরচ বেশি হয়। বরং ব্রাজিল থেকে তারা তুলনামূলক সস্তায় সয়াবিন কিনতে পারেন। কারণে চীনের সয়াবিন বাজারে ব্রাজিল ক্রমেই নির্ভরযোগ্য আমদানি উৎস হয়ে উঠেছে। খবর ওয়ার্ল্ডগ্রেইনডটকম রয়টার্স।

চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের সর্বশেষ মাসভিত্তিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে চীনা আমদানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সব মিলিয়ে কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার টন সয়াবিন আমদানি করেছিলেন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ শতাংশ। চীনের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এটাই সয়াবিনের সর্বোচ্চ মাসভিত্তিক আমদানির রেকর্ড। তবে জুলাইয়ে দেশটিতে কৃষিপণ্যটির আমদানি কিছুটা কমে এসেছে। সময় চীনের বাজারে সব মিলিয়ে কোটি হাজার টন সয়াবিন আমদানি হয়েছে, যা আগের মাসের তুলনায় প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টন কম।

তবে আগের মাসের তুলনায় কমলেও গত জুলাইয়ে চীনে সয়াবিন আমদানি ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে দেশটিতে মোট ৮৬ লাখ ৩০ হাজার টন সয়াবিন আমদানি হয়েছিল। এদিকে চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চীনা আমদানিকারকরা সব মিলিয়ে কোটি ৫১ লাখ ৪০ হাজার টন সয়াবিন আমদানি করেছেন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক শতাংশ বেশি।

একসময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন আমদানি করতেন চীনা আমদানিকারকরা। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত ধরে শুরু হওয়া চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। বাড়তি শুল্কারোপের জের ধরে চীনা আমদানিকারকরা সয়াবিন আমদানির জন্য মার্কিন মুলুক ছাড়িয়ে ব্রাজিলের প্রতি ঝুঁকেছেন। বর্তমানে ব্রাজিল থেকে রফতানি হওয়া ৭৫ শতাংশ সয়াবিনের গন্তব্য চীন। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক মাসে চীন-ব্রাজিল সয়াবিন বাণিজ্য আগের তুলনায় আরো জোরদার হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে চীনা আমদানিকারকরা ব্রাজিল থেকে কৃষিপণ্যটির আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ শতাংশ বাড়িয়েছেন। এর পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে সস্তার সয়াবিন।

কৃষিপণ্যবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কোফিডের বাজার বিশ্লেষক জি হুইলান বলেন, চলতি বছর ব্রাজিলে সয়াবিন উৎপাদন রেকর্ড ছুঁয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় আগামীতেও কৃষিপণ্যটির উৎপাদনে চাঙ্গা ভাব বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতি ব্রাজিলের বাজারে সয়াবিনের দাম অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। আর সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন চীনা আমদানিকারকরা। তুলনামূলক সস্তা দামে দেশটি থেকে কৃষিপণ্যটির আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে চীন। বিশেষত গত মার্চের পর থেকে চীন-ব্রাজিল সয়াবিন বাণিজ্য আরো জোরদার হয়েছে।

চীনে আমদানি করা সয়াবিনের বড় একটি অংশ পশুখাদ্য উৎপাদনে ব্যবহার হয়। তবে গত বছরের বেশির ভাগ সময় আফ্রিকান ফ্লুর সংক্রমণ চীনের পশুপালন খাতে সয়াবিনের চাহিদা কমিয়ে রেখেছিল। চলতি বছরের শুরু থেকে নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী আমদানি-রফতানি কার্যক্রম কার্যত স্থবির করে দিলে চাহিদা আরো কমে আসে। এখন পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। গতি ফিরেছে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে। পশুপালনে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জও আগের তুলনায় কমেছে। ফলে আগামী দিনগুলোয় চীনের বাজারে সয়াবিনের চাহিদা বাড়তির দিকে থাকার সম্ভাবনা দেখছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। বিষয়ে জি হুইলান বলেন, বাড়তি চাহিদার জের ধরে চীনা আমদানিকারকরা ব্রাজিল থেকে কৃষিপণ্যটির আমদানি আরো বাড়াতে পারেন। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সস্তা দামে ব্রাজিল থেকে সয়াবিন আমদানির সুযোগ তৈরি হয়েছে। আর ব্যবসায়িক সুযোগ কাজে লাগাতে পিছপা হবেন না চীনা আমদানিকারকরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন