ভারত-ইরান বাসমতি চাল বাণিজ্য

নিষেধাজ্ঞায় আটকে আছে পেমেন্ট কমতে পারে রফতানি

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারত থেকে রফতানি হওয়া বাসমতি চালের অন্যতম শীর্ষ গন্তব্য ইরান। দীর্ঘদিন ধরে ভারত ইরানের চাল ব্যবসায়ীরা সুনামের সাথে ব্যবসা করে আসছেন। তবে সুনামে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে ইরানের ওপর চলমান মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে ইরানের কাছ থেকে বাসমতি চাল রফতানির বকেয়া অর্থ আদায় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পেমেন্ট সংকটের কারণে আর্থিক লোকসানের আশঙ্কা থেকে দীর্ঘদিনের পুরনো বাজারে আর বাসমতি চাল রফতানি করতে চাইছেন না ভারতীয় রফতানিকারকরা। ফলে চলতি অর্থবছরে ভারত থেকে ইরানে খাদ্যপণ্যটির রফতানি এক-পঞ্চমাংশ কমে যেতে পারে। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড রয়টার্স।

এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড প্রসেসড ফুড এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (এপিইডিএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৪০ লাখ ১০ হাজার টন বাসমতি চাল রফতানি হয়েছিল। ওই সময় খাদ্যপণ্যটির রফতানি বাবদ ভারতের আয় দাঁড়িয়েছিল ৪১৭ কোটি ডলারে। পরের অর্থবছরে দেশটি থেকে বাসমতি চাল রফতানি বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ লাখ ১০ হাজার টনে। আয় হয় ৪৭২ কোটি ডলার। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৪০ লাখ ৫০ হাজার টন বাসমতি চাল রফতানি হয়েছে। সময় বাসমতি চাল রফতানি করে ভারতীয় রফতানিকারকরা ৪৩৩ কোটি ডলার আয় করেছেন।

২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারত থেকে রফতানি হওয়া ৩০ শতাংশ বাসমতি চালের গন্তব্য ছিল তেহরান। পরিমাণের হিসাবে সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ টন। তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারত থেকে বাসমতি চাল রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধির বিপরীতে আয় কম হওয়ার চিত্র চ্যালেঞ্জের আভাস দেয়। ভারতীয় রফতানিকারকরা জানান, আয় কমার পেছনে বড় একটি কারণ ইরান। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানি আমদানিকারকরা যথাসময়ে পাওনা পরিশোধ করতে পারছেন না। আটকে আছে পেমেন্ট। কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারত থেকে বাসমতি চাল রফতানি বাড়লেও আয় কমেছে।

বিষয়ে ভারতের বিখ্যাত চালের ব্র্যান্ড কোহিনুর ফুডস লিমিটেডের সহব্যবস্থাপনা পরিচালক গুরনাম অরোরা বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা চাপের মুখে ফেলেছে ইরানের অর্থনীতিকে। ডলার সংকটে ভুগছে দেশটি। কারণে আন্তর্জাতিক ব্যবসায় যথাসময়ে পেমেন্ট পরিশোধ করতে পারছেন না ইরানের আমদানিকারকরা। দীর্ঘদিন আটকে থাকছে পাওনার অর্থ। পাওনা আদায় নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কারণে ভারতীয় রফতানিকারকদের অনেকেই ইরানে বাসমতি চাল রফতানিতে আগ্রহ হারাতে শুরু করেছেন। তারা মনে করছেন, এভাবে চলতে থাকলে আর্থিক লোকসানের মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আপাতত ইরানে রফতানি না করাই ভালো।

পরিস্থিতির জের ধরে চলতি অর্থবছরে ভারত থেকে ইরানে বাসমতি চাল রফতানি এক-পঞ্চমাংশ বা ২০ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে মনে করছে মুম্বাইভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্রিসিল। কেননা কোনো রফতানিকারকই আগে পণ্য পাঠিয়ে অর্থের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে রাজি নন। তবে গুরনাম অরোরা বলছেন, সংকট উত্তরণে নানা পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই বাসমতি চাল রফতানির পাওনা অর্থ আদায় করা সম্ভব হবে। আগামীতে আর ধরনের কোনো সমস্যা তৈরি হবে না।

তবে বসে নেই ভারতীয় বাসমতি চাল রফতানিকারকরা। কোনো কারণে ইরানে রফতানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে যাতে বড় ধরনের কোনো সংকট তৈরি না হয়, এজন্য আগাম বিকল্প বাজার খুঁজছেন তারা। ইরানের বিকল্প হিসেবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোয় বাসমতি চাল রফতানি বাড়াতে তাদের তত্পরতা বেড়েছে। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ উত্তর আমেরিকায়ও ভারতীয় বাসমতি চালের চাহিদা বেড়েছে।

বিষয়ে ভারতের দাওয়াত ব্র্যান্ডের বাসমতি চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এলটি ফুডসের পরিচালক অশ্বিনী অরোরা বলেন, ইরানে রফতানি বন্ধ হয়ে গেলেও ভারতের বাসমতি চাল রফতানি খাতে বড় কোনো প্রভাব পড়বে না। কেননা অন্যান্য দেশ অঞ্চলে ভারতীয় বাসমতি চালের চাহিদা রয়েছে। রফতানিকারকরা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই বিকল্প বাজার খুঁজে পাবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন