গত বোরো মৌসুমে দেশে রেকর্ড পরিমাণ চাল উৎপাদন হয়েছে। এ মৌসুমে প্রথমবারের মতো শস্যটির উৎপাদন দুই কোটি টন ছাড়িয়েছে। এর সুবাদে আগামী নভেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মিটিয়ে দেশে ৫৫ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। এ অবস্থায় চাল আমদানির বিষয়ে বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। গতকাল অনলাইনে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) উদ্যোগে আয়োজিত ‘কভিড-১৯ যুগে খাদ্যনিরাপত্তা: বাংলাদেশ কি শিগগিরই খাদ্য সংকটে পড়ছে?’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম, আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুত্ফুল হাসান, খাদ্য ম সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের এপিএ পুলের সদস্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডল, সাবেক কৃষি সচিব ড. এসএম নাজমুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এবার চালের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ দশমিক ৫৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বোরো ও আমন মৌসুমে উৎপাদন থেকে হিসাব করে জুন পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে ২ কোটি ৩ লাখ ১০ হাজার টন চাল ছিল। ফলে আগামী নভেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মেটানোর পরও ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টন চাল দেশের অভ্যন্তরে উদ্বৃত্ত থাকবে। চলতি বছর নতুনভাবে আউশ ও আমনের উৎপাদন যুক্ত হলে বাংলাদেশে আপাতত খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই। ফলে চাল আমদানির বিষয়ে বিকল্প ভাবতে হবে।
এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, খাদ্যশস্য আমদানির আগে কৃষকের স্বার্থ ও ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ কৃষক না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না—এ বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে আগে। খাদ্য মজুদের বিষয়টি আগে থেকেই ভালোভাবে সার্ভে করে দেখতে হবে, যাতে দুর্যোগকালীন যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে খাদ্যশস্য আমদানিও করা হবে।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, চলতি মৌসুমে বন্যাপীড়িত অঞ্চলগুলোয় খাদ্যের আবাদে কতটা ক্ষতি হয়েছে তা তাত্ক্ষণিক পর্যালোচনা করে খাদ্য আমদানির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। চালের বাজারদর কৃষক ও ভোক্তার স্বার্থ যথাযথ রাখতে সরকার, কৃষক ও মিলার মালিকদের সঙ্গে যৌথভাবে উদ্যোগ নেয়ার এখনই সময়। এছাড়া সারের প্রাপ্যতা ও ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, বীজের সরবরাহ ঠিক রাখা, ফসল বোনা থেকে শুরু করে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত সময়ে প্রতিদিনের পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও তদারকি করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধিদের আহ্বান জানান তিনি।
সেমিনারে আরো জানানো হয়, গত বছর বোরো মৌসুমে চাল উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৯৫ লাখ ৬০ হাজার টন। চলতি বছরে দুই কোটি টনের বেশি চাল উৎপাদন হয়েছে। ব্রির হিসেবে দেশে এবার বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ৩ লাখ ৩০ হাজার টন। অন্যদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে চাল হয়েছে ২ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টন। দেশের আবাদি জমির প্রায় ৭৪ শতাংশতেই হচ্ছে ধানের আবাদ। গত অর্থবছরে ধানের আবাদ হয়েছে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বোরো আবাদ হয়েছে প্রায় ৪৮ লাখ হেক্টর।