প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম খতিয়ে দেখবে এফআরসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বীমা খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি প্রগতি ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের আর্থিক প্রতিবেদনে বেশকিছু অনিয়ম খুঁজে পেয়েছেন নিরীক্ষক। এসব অনিয়মের বিষয়টি আর্থিক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন তিনি। প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের এসব অনিয়ম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) পাশাপাশি নিরীক্ষকের ভূমিকাও খতিয়ে দেখবে সংস্থাটি।

৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের নিরীক্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের নিরীক্ষক হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট তার মতামতে উল্লেখ করেছেন, কোম্পানিটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশ ১৯৬৯, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন ২০১৫ এবং আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর বিধান অনুসারে আন্তর্জাতিক হিসাব মান অনুযায়ী আর্থিক বিবরণীতে প্রস্তুত করেনি। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রজ্ঞাপন অনুসারে আর্থিক বিবরণীতে ডিসক্লোজার দেয়া হয়নি।

প্রগতি ইন্স্যুরেন্স আর্থিক বিবরণীতে ভিত্তি ছাড়াই বিভিন্ন ধরনের রিজার্ভ দেখিয়েছে। কোম্পানিটি দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষ ক্ষতির কারণে ৯৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা রিজার্ভ দেখিয়ে আসছে। এর মধ্যে সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরের কোটি ৯২ লাখ টাকাও রয়েছে। সমপরিমাণ অর্থ কোম্পানিটি লাভ-ক্ষতি হিসাবেও দেখিয়েছে। ২০১০ সাল থেকে কোম্পানিটি ১০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা আকস্মিক রিজার্ভ হিসেবে দেখিয়ে আসছে এবং এর যৌক্তিকতার বিষয়ে নিরীক্ষকের কাছে ব্যাখ্যা করেনি। কোম্পানিটি এর সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন করে ১৪১ কোটি টাকার পুনর্মূল্যায়িত রিজার্ভ দেখালেও আন্তর্জাতিক হিসাব মান অনুসারে নির্দিষ্ট সময় অন্তর এর ইম্পেয়ারমেন্ট টেস্ট করেনি।

৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ শেষে কোম্পানিটি কয়েক বছরের পুঞ্জীভূত ৫৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকার কর-দায় দেখিয়েছে। কিন্তু সম্পর্কিত তথ্য না পাওয়ার কারণে নিরীক্ষকের পক্ষে কোম্পানিটির কর-দায়ের বিষয়টি যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া কর মূল্যায়ন, বিরোধ, মামলাসহ সংক্রান্ত বিষয়গুলো সম্পর্কেও নিরীক্ষককে অবগত করেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। একইভাবে সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরের কর-দায় হিসেবে কোটি ২০ লাখ টাকার বিষয়টিও নিরীক্ষকের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া কোম্পানিটি আন্তর্জাতিক হিসাব মান অনুসারে বিলম্বিত কর হিসাব করেনি এবং দীর্ঘদিন ধরে খাতে দেখানো কোটি ৭৩ লাখ টাকার বিষয়টি যাচাই করতে পারেননি নিরীক্ষক।

প্রয়োজনীয় দলিলাদি না থাকার কারণে নিরীক্ষকের পক্ষে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ হিসাব বছর শেষে দেখানো ২২৯ কোটি ২২ লাখ টাকার স্থায়ী সম্পদের যথার্থতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, এগুলো বড় ধরনের কোনো অনিয়ম নয়। মূলত নিরীক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ ঘাটতির কারণেই এমনটি হয়েছে। কোম্পানির নতুন প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) গত বছরের ডিসেম্বরে দায়িত্ব নিয়েছেন। তার পক্ষে স্বল্প সময়ে কোম্পানির সবকিছু বুঝে নেয়া সম্ভব হয়নি। ফলে নিরীক্ষককে তিনি পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ করতে পারেননি।

এদিকে প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম নিরীক্ষকের ভূমিকার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এফআরসির কর্মকর্তারা। জানতে চাইলে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সাঈদ আহমেদ এফসিএ বণিক বার্তাকে বলেন, নিরীক্ষক তার মতামতে কীভাবে কোম্পানিটি আর্থিক বিবরণীতে হিসাব মান লঙ্ঘন করেছে সেটি সুনির্দিষ্ট করেননি, যা নিরীক্ষকের করা উচিত ছিল। নিরীক্ষক তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন বেশকিছু বিষয় তার পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আর্থিক বিবরণীর যথার্থতা স্বচ্ছতার বিষয়ে নিরীক্ষক যে প্রতিবেদন দিয়েছেন, সেটির বিষয়ে প্রশ্ন জাগবে। তবে ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষক যেসব অনিয়ম খুঁজে পেয়েছেন, সেজন্য তাকে কৃতিত্ব দিতে হবে। এফআরসির পক্ষ থেকে কোম্পানির অনিয়মের পাশাপাশি নিরীক্ষকের দায়-দায়িত্বের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন