জলবায়ু পরিবর্তন রোধে লকডাউনের প্রভাব নগণ্য!

বণিক বার্তা ডেস্ক

নতুন এক গবেষণা বলছে, মহামারীর কারণে দেশে দেশে আরোপিত লকডাউন আসলে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বা সংকট উত্তরণে খুব নগণ্য প্রভাব রাখবে। বৈশ্বিক উষ্ণতার ঊর্ধ্বগতি হ্রাস করতে গ্রিনহাউজ গ্যাস যতটা কমানো প্রয়োজন ঠিক ততটা হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্গমন সংকোচনের সুবিধা ধরে রাখতে হলে নীতিনির্ধারকদের এখন সবুজ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কৌশল গ্রহণ করতে হবে।

মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড কমে গেলে বৈশ্বিক জলবায়ুর ওপর কতটা প্রভাব পড়ে তা স্টাডির নজিরবিহীন এক সুযোগ এনে দিয়েছে বর্তমান মহামারী। এখন পর্যন্ত, এটা দেখা যাচ্ছে যে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর লকডাউনের প্রভাব খুবই সামান্য হবে যদি না ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনায় সবুজ নীতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গত বৃহস্পতিবার নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে।

কিছুদিন আগের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, মহামারীতে মানুষের কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ার ফলে বিশ্বব্যাপী কার্বন ডাই-অক্সাইডের নির্গমন ১৭ শতাংশ কমেছে। বর্তমান নতুন গবেষণায় আরো নয়টি গ্রিনহাউজ গ্যাস অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং গুগল অ্যাপল ফোনের তথ্য ব্যবহার করে ৪০০ কোটি মানুষের গতিবিধি অনুসরণ করতে চেয়েছেন লিডস ইউনিভার্সিটির জলবায়ুবিজ্ঞানী পিয়ার্স ফস্টার তার মেয়ে হ্যারিয়েট। মহামারীর সময় ১০টি গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন আসলে কতটা পাল্টে যাচ্ছে তা ভালোভাবে বুঝতে তারা বাতাসের মান মানুষের গতিশীলতার সব তথ্য জড়ো করেন। কিছু তথ্য আবার সম্পর্কিত জ্বালানি ব্যবহারজনিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। যেমন কাজকর্ম, গাড়ি চালানো কিংবা শপিং, যা কার্বন নির্গমন ঘটায়।  

২০২০ সালের এপ্রিলে গবেষকরা দেখতে পান, মানুষজন ঘরে থাকায় এবং কলকারখানা সীমিত আকারে চলায় বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন ১০ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৩০ শতাংশে। তবে গবেষকরা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, নির্গমন এতটা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেলেও জলবায়ুর ওপর সামগ্রিক প্রভাব কমই হবে, কেননা আগামী পাঁচ বছরে বৈশ্বিক তাপমাত্রা মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।

স্টাডির অন্যতম গবেষক ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাংলিয়ার জলবায়ু বিজ্ঞানী করিন্নে লে কুয়েরে বলেন, কভিড-১৯-এর সময় আমরা নির্গমনের যে পতন দেখলাম তা সাময়িক এবং এটি জলবায়ু পরিবর্তনের গতি কমাতে কিছুই করবে না। তিনি মনে করেন, এই সময়টি বিশ্বনেতাদের সিদ্ধান্ত প্রণয়নের ক্ষেত্রে টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে, যদি তারা জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ানক ক্ষতি এড়াতে সবুজ পুনরুদ্ধার কর্মসূচি হাতে নেন।   

রোড ট্র্যাফিক এখনো অনেক জায়গায় বেশ কম এবং অপেক্ষাকৃত সবুজ পরিবহনে রূপান্তরিত হতে পারলে নির্গমন অনেক কমানো যেতে পারে, আর ভবিষ্যতেও বাসায় বসে কাজ করার সিদ্ধান্তটিও বহাল রাখা যেতে পারে। বর্ধিষ্ণু নবায়নযোগ্য প্রযুক্তি বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে বাড়তি অর্থ বিনিয়োগ করা যেতে পারে। গবেষকরা জোর দিয়ে বলছেন, বিশ্ব যদি জ্বালানি পোড়ানোয় আগের জায়গায় ফিরে যায় তবে প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়নের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

ফস্টারস আশাবাদী যে পরিবর্তন আসবেই। তার কথায়, কখনো কখনো ঐতিহাসিকভাবে বিপর্যয়ই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ঘটায়। সরকার, কিংবা জনগনের কণ্ঠস্বরসবাই ব্যাপারে একজোট যে সবকিছু ভালো রাখতে হলে সবুজ জীবনযাত্রা আর সবুজ বিনিয়োগ প্রয়োজন। আমাদের ঠিক এটিই করতে হবে।

দ্য সায়েন্টিস্ট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন