ভয়াবহ বৈরুত বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় একটি ভার্চুয়াল সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছেন বিশ্বনেতারা। খবর বিবিসি।
গতকাল লেবাননের স্থানীয় সময় ২টা বা গ্রিনিচ মান সময় ১২টায় ওই ভার্চুয়াল সম্মেলনটি আয়োজিত হওয়ার কথা রয়েছে। ফ্রান্স ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আয়োজিত সম্মেলনটিতে অংশ নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কর্তাব্যক্তিদের প্রাথমিক প্রাক্কলনে অনুমান করা হয়, বৈরুতের ওই ওয়্যারহাউজে দুই হাজার টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ছিল। গত মঙ্গলবারের বিস্ফোরণে লেবাননের ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণে অন্তত ১৫৮ জন প্রাণ হারিয়েছে ও আহত হয়েছে পাঁচ হাজার জন। এছাড়া তিন লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
শনিবার কয়েক হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে ক্ষোভ প্রকাশ করে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে এবং বিক্ষোভকারীরাও পুলিশের দিকে পাথর নিক্ষেপ করে। কিছু বিক্ষোভকারী সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ঢুকে পড়ে।
টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বলেন, চলমান সংকট থেকে উত্তরণে আগাম নির্বাচন আহ্বান করবেন তিনি। আজ বিষয়টি মন্ত্রিসভায় আলোচিত হবে বলে জানান তিনি।
বিস্ফোরণের আগেই নভেল করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় হিমশিম খাওয়া লেবানন গভীর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে।
আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি ও মুদ্রার দরপতনের জেরে গত অক্টোবর থেকেই লেবাননে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে।
বিস্ফোরণের জেরে পদত্যাগ করা প্রথম শীর্ষ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন তথ্যমন্ত্রী মানাল আবদেল সামাদ। পদত্যাগের কারণ হিসেবে বৈরুত বিস্ফোরণের বিষয়টি উল্লেখ করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে ব্যর্থতার কথা তোলেন।
গত বৃহস্পতিবার বৈরুত সফর করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। এ সময় দেশটির জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা কর্মসূচি সমন্বয় করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
গতকালের ভার্চুয়াল সম্মেলন নিয়ে এলিসি প্রাসাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এ সম্মেলনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে লেবাননের প্রধান আন্তর্জাতিক অংশীদারদের ঐক্যবদ্ধ করা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে জরুরি সহায়তা নিশ্চিত ও সমন্বয় করা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যদের প্রতিনিধিসহ চীন, রাশিয়া, মিসর, জর্দান ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিরা সেখানে অংশ নিচ্ছেন।
এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য জানায়, গতকালের আলোচনায় ২ কোটি পাউন্ড মানবিক সহায়তার ঘোষণা দেবে লন্ডন।
বেশ কয়েকটি টুইটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, তিনি মাখোঁর নেতৃত্বে আয়োজিত ওই সম্মেলনে অংশ নিতে চান এবং সব পক্ষ যে সহায়তায় আগ্রহী সে বিষয়টির দিকেও ইঙ্গিত করেন।
বেশ কয়েকটি দেশ লাখো ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি জাহাজ, স্বাস্থ্যকর্মী ও বিভিন্ন সহায়তা সামগ্রী পাঠিয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা আরো অধিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে যে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে সে বিষয়ে সতর্কবার্তা দিচ্ছে। অনেক বাড়িতেই এখন পানি ও বিদ্যুৎ নেই। কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে খাদ্যস্বল্পতা আরো উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে রোগীতে পরিপূর্ণ হাসপাতালগুলোয় আরো চাপ দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিসেফের মুখপাত্র ম্যারিক্সি মারকাডো বলেন, অবিলম্বেই বিশালাকার সহায়তা প্রয়োজন।
বিস্ফোরণ ঠেকাতে সরকারের অদক্ষতা ও ব্যর্থতা নিয়ে জনমনে অসন্তোষের মধ্যে আন্তর্জাতিক মহলের এ সম্মেলন আয়োজিত হতে যাচ্ছে। শনিবারের বিক্ষোভে পাঁচ থেকে ১০ হাজারের মতো বিক্ষোভকারী অংশ নিয়েছে।
বিক্ষোভে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে আহত ১১৭ জনকে চিকিৎসা দেয়ার কথা জানিয়েছে স্থানীয় রেড ক্রস অফিস। এছাড়া আরো ৫৫ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।