পেশাগত জীবনে প্রত্যাশিত সাংগঠনিক আচরণ ও সফলতার বুনিয়াদ

তারেক আহমেদ

আমরা অনেকেই অনেক সময় নিজের অজান্তেই প্রতিষ্ঠানে এমন আচরণ করে ফেলি, যার প্রতিফলন আমাদের খুব ভালো অভিজ্ঞতা দেয় না। আমাদের সচেতনভাবে জানতে হবে আসলে কোন ধরনের আচরণ প্রতিষ্ঠানে প্রত্যাশিত এবং সেই সকল আচরণ পেশাদার একজন মানুষ হিসেবে চর্চা করে যাওয়া। আমি আমার দীর্ঘদিনের বাস্তব পেশাগত জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে কতগুলো বিষয় উপস্থাপন করছি, যা পেশাদার জীবনের জন্য একান্ত কাম্য-

১. কাজকে ভয় না পাওয়া, এড়িয়ে না চলা। কাজ করার মধ্যে দিয়ে কাজ শেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কাজের মানুষকে সবাই পছন্দ করে। বিশেষ করে নতুন কোন কাজে ভুল হলেও খুব বেশি খারাপ লাগার কিছু নেই, বরং আছে ভালো লাগার অনুভূতি, কারণ আমার কাছে আপাত দৃষ্টিতে ৭টি-

ক. নতুন কাজ শিখতে পারছেন,

খ. ভুল করার কারণে ভুল কাজটি শনাক্ত করতে পারছেন,

গ. ভুল থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারছেন, 

ঘ. সঠিক কাজ করা করার সুযোগ পাচ্ছেন,

ঙ. নতুন কাজের মাধ্যমে নতুন দক্ষতার উন্মেষ ঘটছে,

চ. নতুন দক্ষতা মানে নতুন সম্ভাবনা,

ছ. আর নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে, সুন্দর একটি ভবিষ্যত ইনশাআল্লাহ।

প্রতিদিনের গতানুগতিক ধারার কাজের বাইরে নতুন কিছু করা ও নতুন ও সম্ভাবনাময় সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া একজন সত্যিকারের পেশাদার মানুষের মনোভাব।

২. সঠিক সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা ও আগামীর কাজ কিছুটা এগিয়ে রাখা। এর জন্য বিভিন্ন কৌশল রয়েছে, যেসব আমরা আমাদের কাজে ব্যবহার করতে পারি৷ সময় ব্যবস্থাপনার উপর দক্ষতার উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। 

৩. পেশায় নিযুক্ত বিভিন্ন মানুষের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা ও বজায় রাখা। তাদের নিয়মিত খোজ খবর রাখা ও নিজের অবস্থা সম্পর্কে মাঝে মাঝে অবহিত করা। নতুনত্ব কিছু করা হয়ে থাকলে, সেটা নিয়ে আলোচনা করা।

৪. নিজের জ্ঞানকে কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করা। সময় খারাপ গেলে চুপ করে থেকে পরিস্থিতির সাথে আস্তে-ধীরে মানিয়ে নেয়া। কথা কম বলা নীতি অনুসরণ করা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

৫. সবসময়ই শেখার আগ্রহ বজায় রাখা ও শেখার জন্য সময়, ইচ্ছা শক্তি ও প্রয়োজনে অর্থ বিনিয়োজিত করা। শেখার কোন বিকল্প নেই, শেখার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন ও দক্ষতার ধারাবাহিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে।

৬. পেশাগত বিভিন্ন ফোরামে যোগদান করা ও বিভিন্ন কাজে নিজেকে নিবেদিত করা। সবসময় নিজের সেরাটা দিয়ে কাজ করতে হবে, কারন প্রতিটি দিনের মতোন প্রতিটি কাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

৭. একজন মেনটর বেছে নেয়া, যার কাছ থেকে সব ধরনের পরিস্থিতিতে সহায়তা পাওয়া যাবে। একজন মেনটর সাথে থেকে সব ধরনের প্রয়োজন পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে থাকে। 

৮. নিজের আত্ম আত্মবিশ্বাস ও উন্নয়নের জন্য সবসময়ই নিবেদিত থাকা। অবসর সময় কে হেলায় শেষ না করে, তা ইতিবাচক ভাবে কাজে লাগাতে হবে।

৯. বর্তমান নিয়ে পড়ে না থেকে, আগামীর চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবেলা করবো, তার জন্য কাজ করা।

১০. এক বিষয় নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি, ভিন্ন বিষয়েও দক্ষতার উন্নয়ন করা।

১১. গতানুগতিক ধারার বাইরে কিছু শেখার বা করার প্রবণতা থাকা ও করে দেখানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবাই একটি প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি ব্যক্তি হতে পারে না, এর জন্য দরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও পরিশ্রম যা আপনাকে প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করবে। 

১২. সবসময়ই অন্যের কাছ থেকে প্রতিটি প্রাপ্তিতে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা। তার প্রতি ও অন্য সকলের প্রতি সবসময় সহযোগী মনোভাব রাখা।

১৩. যোগাযোগের আনুষ্ঠানিক মাধ্যম মেনে যোগাযোগ করা। সব ধরনের কাজে অফিসের রিপোর্টিং বসকে অবহিত করা। 

১৪. তেল না দিয়ে, সঠিক কাজের জন্য অবশ্যই প্রশংসা করা।

১৫. অন্যকে কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই মানুষ হিসেবে সম্মান করা একজন সত্যিকারের পেশাদারের গুণ। মানুষকে সম্মান করতে হবে একজন মানুষ হিসেবে। সম্মান এমন একটি বিষয়, যা একজন আরেকজনকে করলে, পাওয়া যায়। 

১৬. কাজ করতে গিয়ে অতিরিক্ত রকমের কিছু করার চেয়ে, পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে কাজ করা। বেশি কিছু করতে গিয়ে যেন খেই হারিয়ে না ফেলি।। 

১৭. কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করা। কাজের গুণগত মান বজায় রাখা। 

১৮. সব সময় নিজের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখা, পেশাগত জীবনের পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকেও সময় দেয়া।

১৯. নিজের মানুষিক প্রশান্তির জন্য, মনের মতো কিছু মানুষ খুঁজে বের করে, তাদের সাথে সময় অতিবাহিত করা ও তাদের থেকেও শেখার চেষ্টা করা।

২০. খুব কম মানুষই সত্যিকারে পেশাগত জীবনে সন্তুষ্ট আছে আর সব ধরনের কোম্পানিতেই কিছু ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক আছে, তাই এসব বুঝে নিজেকে সব ধরনের পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিয়ে কাজ করা।

লেখক: ক্যাপাসিটি বিল্ডিং কো-অর্ডিনেটর, সিডিডি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন