কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিকুলাম যুগোপযোগী নয়: কৃষিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিকুলাম সময়ের প্রয়োজনে যুগোপযোগী নয়। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটদের উৎপাদন সংক্রান্ত জ্ঞানের পাশাপাশি মার্কেটিং, সাপ্লাই চেইন, ম্যানেজমেন্ট, যোগাযোগ নেতৃত্ব প্রদানের দক্ষতা এবং প্রযুক্তি জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই। কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি উইং খোলা এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করে তরুণ উদ্যোক্তাদের ফান্ডিং করার প্রয়োজন। তাই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিকুলাম যুগোপযোগী করার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী . মো. আবদুর রাজ্জাক।

গতকাল সরকারি বাসভবন থেকে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত দক্ষ কৃষি গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে আধুনিক কারিকুলামের ভূমিকা শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি কথা বলেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সাত্তার মণ্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহম্মেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর . আতিউর রহমান, কৃষি গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ?উপাচার্য অধ্যাপক লুত্ফুল হাসান বলেন, সিলেবাসে প্রতিনিয়তই নতুন বিষয় সংযোজন করা হচ্ছে, তবু কিছুটা দুর্বলতা আছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই এটিকে পরিবর্তন করে যুগোপযোগী করতে হবে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সবার জন্য নিরাপদ পুষ্টিকর খাদ্য জোগানো। বৈশ্বিক উষ্ণতা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনিতেই কৃষি খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে। এর সঙ্গে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে কভিড-১৯। ফলে বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থা বা ফুড চেইনকে চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ প্রশিক্ষিত কৃৃষি গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে হবে। যুগোপযোগী, আধুনিক প্রায়োগিক কারিকুলামের মাধ্যমেই সেটি সম্ভব। কৃষিকে অধিকতর লাভজনক করতে হলে কৃষিপণ্যের বিপণন প্রক্রিয়াজাত বাড়াতে হবে। কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে কৃষিপণ্যের টেকসই বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। প্রক্রিয়াজাত করে মূল্য সংযোজন করতে হবে। উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিলেবাস কারিকুলাম যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। বাণিজ্যিক কৃষি কৌশল জ্ঞান সংবলিত সিলেবাস প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি।

কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, কৃষির ইতিহাস গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোকে কারিকুলামে নিয়ে আসতে হবে। কৃষির উন্নয়ন করতে হলে এর বিবর্তন সম্পর্কে জানা জরুরি। এর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কৃষক কৃষি গ্র্যাজুয়েটরা কী করে সফলভাবে মোকাবেলা করবে, তাও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

সাবেক শিক্ষা সচিব এনআই খান বলেন, শুধু কারিকুলাম পরিবর্তন করলেই হবে না, শিক্ষকদের জন্য উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগের নিয়মে পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ শিক্ষকরাই কারিকুলাম অনুযায়ী ছাত্রদের পড়ান। গ্র্যাজুয়েটরা যেহেতু কৃষকদের নিয়ে কাজ করেন, সেজন্য সিলেবাসে সামাজিক বিজ্ঞানের কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর . আতিউর রহমান বলেন, কৃষিকে কীভাবে নিরাপদ পরিবেশ সম্মতভাবে টেকসই করা যায় তার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। কারিকুলামে প্রায়োগিক শিক্ষার ওপর বিশেষ করে ইন্টার্নশিপের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষকের সঙ্গে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গ্র্যাজুয়েটদেরকে ইন্টার্নশিপে বেশি করে যুক্ত রাখতে হবে।

বক্তারা আরো বলেন, কৃষি দ্রুত বাণিজ্যিকীকরণের দিকে যাচ্ছে। দক্ষ প্রশিক্ষিত জনবলকে এসব জায়গায় সম্পৃক্ত না করতে পারলে এগুলো বিদেশী বিশেষজ্ঞদের হাতে চলে যাবে। কৃষিপণ্যকে কীভাবে বিভিন্ন পণ্যে রূপান্তর করে ভ্যালু অ্যাড করা যায় তা এদেশে গড়ে ওঠেনি। সেটি কীভাবে করা যায় তা বিবেচনা করে দেখতে হবে। কৃষিকে টেকসই করার জন্য কৃষির গ্র্যাজুয়েটদের বাণিজ্যিকীকরণ জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য কারিকুলামে মার্কেটিং, শিল্পোদ্যোগ, সাপ্লাই চেইন, যোগাযোগ নেতৃত্ব প্রদানের দক্ষতা, কৃষি প্রক্রিয়াজাত, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং তথ্যপ্রযুুক্তি জ্ঞান বিষয়ক কোর্স অন্তর্ভুক্তির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন বক্তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন