ঈদে এখন আর টেলিভিশন সেটের সামনে বসে ঈদের অনুষ্ঠান বিশেষ করে নাটক, টেলিফিল্ম দেখা হয় না। এর পেছনে বিজ্ঞাপন বিরতির এক বিশেষ অবদান আছে। সে যা-ই হোক, এখন নাটক দেখার একমাত্র ভরসা হলো ইউটিউব। বিজ্ঞাপন বিরতির ঝক্কি নেই। সেক্ষেত্রে পছন্দের পরিচালক, অভিনেতা আর অভিনেত্রীদের ফেসবুক থেকে তাদের কাজের খোঁজ নিয়ে ঈদের নাটক ও টেলিফিল্ম দেখা হয়। এবারের ঈদের অনুষ্ঠানমালার ক্ষেত্রে একটু ভিন্নতা আছে। করোনার প্রভাবে ব্যাপকভাবে ঈদের অনুষ্ঠানমালা নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। অনেক চ্যানেল বিগত ঈদের ভালো নাটক ও টেলিফিল্ম পুনরায় প্রচার করেছে। এ সীমাবদ্ধতার মাঝেও কিছু ভালো কাজ হয়েছে। সেগুলো উপভোগ করেছি। তেমনি এ ঈদে দেখা ভালো গল্প ও পরিচালনার নাটক ও টেলিফিল্মের রিভিউ দিলাম।
গল্প যিনি ফেঁদেছেন তিনি নিজেই বানিয়েছেন—আশফাক নিপুণ
দর্শকরা যখন উপভোগ করবেন তখন মনে হবে বাবার সঙ্গে তাদের এমন অসংখ্য স্মৃতি আছে। বাবার সঙ্গে সম্পর্কটাকে তখন মনে হবে মধুর। ওটা শুধুই একটা অভিমান। অনেকটা বয়সের ভারসাম্যের একটা খেলা।
এরপর গল্প এগোতে থাকবে। গল্পের এক পর্যায়ে অভিভাবক হারিয়ে পরিবারটিকে টিকে থাকার সংগ্রাম করতে হবে। সংগ্রাম করতে থাকা পরিবারটিকে সামনে অনেক অপ্রত্যাশিত বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করা এ পরিবারের সন্তানরা সমাজ সংগ্রামে টিকে থাকার লড়াইয়ে নিজেদের এক অন্য বাস্তবতায় নিজেদের আবিষ্কার করবে, যে বাস্তবতায় তারা কখনো পড়তে চায়নি।
এমন সংগ্রামের মধ্যেই সন্তানরা আবিষ্কার করে সংসারে একজন মানুষ আছেন, যার ইচ্ছা-অনিচ্ছা ভালোলা গা মন্দ লাগা নিয়ে পরিবারের কেউ কখনো খোঁজ রাখে না। তিনি হলেন তাদের ‘মা’। মায়ের একটা ইচ্ছের কথা জানতে পারে বড় মেয়ে। সে সিদ্ধান্ত নেয় তার সেই ইচ্ছে পূরণ করবে। বড় ভাইকে জানায়, সে চায় তাদের মায়ের ইচ্ছে অপূর্ণ না থাকুক। তারা তাদের মায়ের ইচ্ছে শেষ অবধি পূরণ করার চেষ্টা করে।
পুরো গল্পটা আমি বলছি না। গল্পটা জানতে হলে দর্শকদের টেলিফিল্মটি সম্পূর্ণ দেখতে হবে। আশফাক নিপুণ তার গল্পের শেষে একজন মায়ের মনের কথা নিয়ে যে চিঠিটি লিখেছেন, সেটা শুনে দর্শক অঝোরে কাঁদবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দর্শক গল্পটি যখন উপভোগ করবেন তখন তার কখনো মনোযোগে ছেদ পড়বে না। পর্দায় আপনাকে ধরে রাখবে একাধারে গল্প এবং এ গল্পের চরিত্রগুলোর অভিনয়।
শিল্পী সরকার অপুকে দর্শকরা অনেকদিন পর পর্দায় দেখবেন। দর্শক তার অভিনয় দেখে আমার মতো তাকে একবার হলেও জড়িয়ে ধরে কাঁদতে চাইবেন।
ঈশিতা সেই নতুন কুঁড়ি এরপর বিটিভি; মোটকথা তার অভিনয় আমার মতো অনেক দর্শক ছোটবেলা থেকে দেখে বড় হয়েছেন। তিনি তার অভিনয়ে এখনো সেই মুগ্ধতার পরিচয় রাখছেন।
আফরান নিশোর কথা বলতে গেলে তিনি একজন পরীক্ষিত অভিনেতা। তার অভিনয় নিয়ে আমার মা একটা কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, নিশোর অভিনয় দেখে তার হুমায়ুন ফরীদির কথা মনে পড়ে।
গল্প ও নির্মাণ: আশফাক নিপুণ
গল্পে সমসাময়িক একটা সংকটকে তুলে আনা হয়েছে। #metoo হয়তো সরাসরি বলা হয়নি, কিন্তু ধরে নিয়েছি ও রকম একটা যৌন হয়রানিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেটা নিয়ে একজন ব্যক্তি, সংসার, সমাজ, কর্মস্থল সবকিছুই একটা টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যায় সেটাই উঠে এসেছে।
এখানে প্রধান চরিত্র রুশো হঠাৎ তার টিমের একজন সাবেক নারী কর্মীর করা যৌন হয়রানির এলিগেশনে তার কর্মস্থল থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন। এরপর সেটা তার স্ত্রী মাহাকে যখন তিনি জানান তখন সে এক রকম ভেঙে পড়ে। মাহা তার ব্যারিস্টার বন্ধুর সাহায্যের জন্য দেখা করে। মাহার বন্ধু তাকে বলে, যৌন হয়রানির সীমানা আসলে কতটুকু এটা কেউ নির্ধারণ করতে পারে না। সেক্ষেত্রে প্রমাণ ছাড়া কাউকে দোষী বলা যায় না। এতে মাহা আশ্বস্ত হতে পারে না। মাহার ভেতরে সন্দেহ বাসা বাঁধে এবং সে মানসিক সংকটে পড়ে যায়। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বদনাম ছড়িয়ে পড়ে। রুশো নিজেও ভেঙে পড়ে। মাহার সন্দেহ এতই বেশি কাজ করে রুশোকে সে আর বিশ্বাস করতে পারে না। অনেকেই মাহার ফিমেল সাইকোলজির কমপ্লিকেটেড ব্ল্যাকহোলে তাকে নিজেকে হারিয়ে যেতে দেখবেন। গল্পটা এমন একটা সংকটের মধ্য দিয়েই এগোতে থাকে।
তবে মজার বিষয়, শেষ পর্যন্ত ভিক্টিম কে সেটার কোনো উত্তর লেখক দেননি। দর্শক হিসেবে আপনি চাইলেই প্রধান চরিত্রদের ভিক্টিম করে এক একটা উপসংহার টানতে পারেন। তবে সমাজ বাস্তবতায় আমরা সবাই আসলে ভিক্টিম। এটাই হয়তো লেখক বলতে চেয়েছেন।
আশফাক নিপুণ আপনাকে হ্যাটস অফ! অপি করিম সবসময়ের মতো অসাধারণ। আফরান নিশো নিজে তার সেরাটা দিয়েছেন। বাবা হিসেবে মনসুর আলী ও মা হিসেবে শিল্পী সরকার অপুকে দর্শক পছন্দ করবেন।
একাই ১০০
গল্প ও পরিচালনা—মিজানুর রহমান আরিয়ান
অযান্ত্রিক
রচনা ও পরিচালনা—আশফাক নিপুণ
করোনায় থমকে আছে সব। অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। আমরা আপন মানুষদের হারাচ্ছি। এর মাঝেও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মানুষ। ঘুরে দাঁড়ানোর এমন সব গল্প নিয়েই তৈরি হয়েছে সেপনিল প্রেজেন্টস করোনাজয়ীর গল্প। এমনই একটি গল্প ‘অযান্ত্রিক’
করোনাকালে আমরা ঘরবন্দি হয়ে পড়ি। সবাইকেই বাসায় বসে থাকতে হয় এবং প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ। এ অবস্থায় আমরা অনলাইন দুনিয়ায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। অনির্দিষ্ট সময়ের গন্তব্যে পড়ে যায় দৈনন্দিন জীবন। তাতে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে সেসব মানুষ, যারা স্মার্ট জীবনে অভ্যন্ত হতে পারেনি। করোনা সংকটে এমনই একজন প্রবীণ শিক্ষকের করোনা ও অনলাইন সংগ্রামের গল্প দেখানো হয়েছে।
করোনার মধ্যে অনলাইন ক্লাস নিতে হবে বলে তিনি তার পুরনো ল্যাপটপ মেরামত করেন। নিজের বাসায় ওয়াই-ফাই সংযোগ নেন। এরপর তিনি নতুন এক অভিজ্ঞতা অর্জনের উৎসাহে ক্লাসরুম তৈরি করেন। এর মধ্যে উঠে আসে তার আধুনিক কিছু প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় না থাকার এক অসাধারণ গল্প। গল্পের এক পর্যায়ে তিনি করোনা আক্রান্ত হন এবং তিনি চিকিৎসার মধ্যেও তার ছাত্রছাত্রীদের এক মুহূর্তের জন্যও ভুলে যাননি, সেটাও দেখতে পারব পর্দায়। করোনাকে জয় করে নতুন উদ্যমে প্রযুক্তিকে জয় করার নতুন মিশনে তাকে আবির্ভূত হতে দেখবে দর্শক।
ভৌমিক স্যারের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সোলাইমান খোকা। তিনি একজন দারুণ অভিনেতা। তার সাবলীল অভিনয় মুগ্ধ করবে দর্শককে। ভৌমিক স্যারের মেয়ের ভূমিকায় আছে সাবিলা নূর। সেও চমত্কার অভিনয় করেছে। এছাড়া ভৌমিক স্যারের ছাত্রছাত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করা শিশুশিল্পীরাও দর্শকদের মাতিয়ে রাখবে।