বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণে জীবন উৎসর্গ করে গেছেন বঙ্গমাতা —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন বলে জানিয়েছেন তাদের বড় মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মহিলা শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হন শেখ হাসিনা।

একাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমার মা জীবন ভিক্ষা চাননি। নিজে বাঁচতে চাননি। তিনি সাহসের সঙ্গে কথাই বলেছিলেন, আমার স্বামীকে হত্যা করেছ। আমি তার কাছেই যাব। সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার মা আমার বাবার একজন উপযুক্ত সাথী হিসেবেই চলে গেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আব্বার যে আদর্শ, সেই আদর্শটা তিনি খুব সঠিকভাবে ধারণ করেছিলেন। আর সেটা ধারণ করেই তিনি নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করে দিয়ে গেছেন। ত্যাগের মধ্য দিয়ে একটা সংসারকে সুন্দর করা যায়, একটা প্রতিষ্ঠানকে সুন্দর করা যায়, একটা দেশকে সুন্দর করা যায়। চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার চেয়ে বড় আর কিছু হয় না। আমার মা সেই দৃষ্টান্তই দেখিয়ে গেছেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, মহীয়সী নারী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন যোগ্য বিশ্বস্ত সহচর। ছিলেন বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের সহযোদ্ধা। বঙ্গমাতা অসাধারণ বুদ্ধি, সাহস, মনোবল, সর্বংসহা দূরদর্শিতার অধিকারী ছিলেন। তিনি আমৃত্যু দেশ জাতি গঠনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আজ (গতকাল) বঙ্গমাতার জন্মদিন।  জন্মের পর তিন বছর থেকেই পিতা মাতা সব হারিয়ে সারাটা জীবন শুধু সংগ্রামই করে গেছেন তিনি। কষ্টই করে গেছেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি যে কত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন সেটা আমরা জানি। এই দেশ স্বাধীন হবে, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি আসবে, বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকবেএটাই ভাবতেন সব সময়।

সংসার সামলে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তার সহধর্মিণী সহযোগিতা করতেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি কাজে আমার মাকে দেখেছি বাবার পাশে থেকে সহযোগিতা করতে। কখনো সংসারের কোনো সমস্যা নিয়ে বিরক্ত করেননি বা বলেনওনি। বেশির ভাগ সময়ই তো আমার বাবা কারাগারে ছিলেন। কিন্তু আমার মা যখন কারাগারে দেখা করতে যেতেন তখন নিজেই বলতেন চিন্তার কিছু নেই। সবকিছু তিনি নিজেই দেখতেন। আমাদের মানুষ করার দায়িত্ব আমার মায়ের হাতেই ছিল। তার পাশাপাশি বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ প্রতিটি সংগঠনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। নির্দেশনা দেয়া বা বাইরের অবস্থা জেলখানায় থাকা আব্বাকে জানানো, বাবার নির্দেশনা নিয়ে এসে সেগুলো পৌঁছে দেয়াএই কাজগুলো তিনি খুব দক্ষতার সঙ্গে করতেন।

বঙ্গমাতার মধ্যে কোনো অহমিকা বোধ ছিল না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা যখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে ফিরে এলেন তখনো কিন্তু আমার মায়ের মধ্যে অহমিকা বোধ কখনো ছিল না। তিনি কখনো সরকারি বাসভবনে বাস করেননি। না থাকার কারণটা হচ্ছে, তিনি বলতেন আমার ছেলেমেয়েকে নিয়ে সরকারি বাসভবন বা শানশওকতে থাকব না। তারা বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হোক সেটা আমি চাই না। বিলাসিতায় আমরা যেন গা না ভাসাই সেটার ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। তিনি সব সময় আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ১৯৩০ সালের আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের নির্মম বুলেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ সপরিবার নিহত হন তিনি।

গতকাল বঙ্গমাতার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তার কর্মময় জীবনের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র পরিবেশন করা হয়। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ প্রান্তে সংযুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি হাজার ৩০০ সেলাই মেশিন, ১০০টি ল্যাপটপ হাজার ৩০০ দরিদ্র নারীকেনগদমোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হাজার টাকা করে প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে মহিলা শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, মহিলা শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার উপস্থিত ছিলেন। গণভবন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব . আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন