দ্বিতীয় ঝড়ের প্রস্তুতি ও ইউরোপের ডাক্তারদের ক্লান্তি

স্যাম জোনস, কিম উইলশের ও কেইট কোনোলি

সারা গায়াসো নামে মাদ্রিদের এক ডাক্তার মার্চে দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, কেন বিষয়গুলো এভাবে ঘটছে, তা নিয়ে রাগান্বিত বা বিস্মিত হওয়ার মতো সময় ছিল না।

তারপর এখন পঞ্চম মাস চলছে, গায়াসো এবং তার সহকর্মীরা স্পেন ইউরোপের বিভিন্ন অংশজুড়ে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন দ্বিতীয় ঝড়ের জন্য, প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য যথেষ্ট সময়ও তাদের হাতে ছিল।

দুই সপ্তাহ ধরে স্পেনে ৩৫ হাজার নতুন সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে। যার দুই-তৃতীয়াংশ কেবল তিনটি অঞ্চলের কাতালোনিয়া, আরাগোন মাদ্রিদ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, সারা দেশে বর্তমানে ৫৮০টি সক্রিয় প্রাদুর্ভাব রয়েছে।

প্রথম ঝড়ের মতো দ্বিতীয় ঝড়ের বিধ্বংসী হওয়ার ব্যাপারে গায়াসো বলেন, আমি এমনকি এটা নিয়ে চিন্তাও করতে চাই না। আমাদের অবশ্যই যা করার তা করতে হবে। কিন্তু আমরা এখনো এতটাই ক্লান্ত যে আমি জানি না আবারো এর ভেতর দিয়ে যাওয়ার শক্তি আমাদের থাকবে কিনা। যদি আসলেই প্রথমটির মতো আরেকটি ঝড় থাকে, তবে সেটি হবে আরো বিধ্বংসী।

অবশ্য অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও গায়াসোর হাসপাতাল বসন্তের দৃশ্যের অনুরূপ কিছু দেখছে না। তিনি বলেন, এই সময়ের পরিস্থিতি মার্চ এপ্রিলের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনীয় নয়। আমরা দৈনিক অল্প কিছু কেস মোকাবেলা করছি। যেখানে খুব বেশি বয়স্ক না হলে বেশির ভাগকেই ঘরে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

সে সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে জায়গামতো প্রটোকল রাখা আছে, ভেন্টিলেশন পিপিই মজুদ আছে। স্টাফদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে তাদের ছুটি কাটিয়ে নেয়ার জন্য। এসব করা হচ্ছে মূলত শরতে কভিড-১৯ ফ্লুর কথা বিবেচনায় রেখে।

বার্সেলোনার অদূরে মাটারো হসপিটালের অ্যানেস্থেটিস্ট জুয়ান কামিলো মেজা স্বীকার করেছেন যে যখন আক্রান্তের সংখ্যা ফের বাড়তে শুরু করবে, তখন আমরা কয়েক মাসে যে বাজে পরিস্থিতিতে ছিলাম তার কাছাকাছিও থাকব না।

মেজা অন্যরা ইঙ্গিত দিয়ে জানিয়েছেন, বেশির ভাগ নতুন সংক্রমণ উপসর্গহীন এবং যার অনেকগুলো গতবারের চেয়ে অধিক তরুণদের মাঝে শনাক্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি না আমরা আগেরটির মতো সংক্রমণের শক্তিশালী চূড়া আর দেখব। আমরা এখন কিছুটা বাড়তি সংক্রমণ দেখছি, কিন্তু এটা সব সময় ঘটত।

এদিকে সংক্রমণ ফ্রান্সেও বেশ বাড়তির দিকে। পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ একটি বৈঠকও করেছেন। যেখানে তিনি সর্বোচ্চ সতর্কতার কথা বলেছেন এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না হলে সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে বলেছেন।

তার মন্তব্য এসেছে যখন ২৭ জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে নতুন শনাক্ত হওয়া করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এক সপ্তাহ আগে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা লাফিয়ে ৫৭ শতাংশে উঠেছিল।

প্যারিসের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সের্গে স্মাদজা বলেন, দ্বিতীয় ঝড়ের বিবেচনায় মুহূর্তে আমরা হাসপাতাল আইসিইউতে মারাত্মকভাবে আক্রান্তের সংখ্যা যথেষ্ট দেখছি না। কিন্তু এখানে নিশ্চিতভাবে সংক্রমণের উত্থান ঘটেছে।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু কমে যাওয়ার পর ফের বাড়ছে তাই উল্লম্ফন বলতে হবে। এখানে এখনো ভাইরাসের অস্তিত্ব রয়েছে। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারব না, যতক্ষণ পর্যন্ত কিছুই না হওয়ার পরিস্থিতি ফিরে আসে।

তার অন্য সহকর্মীদের মতো তিনিও প্রথম সংক্রমণের ফিরে আসার কথা চিন্তা করতে চান না। তিনি বলেন, আমরা এর আগে যে অবস্থার ভেতর দিয়ে গিয়েছি তার আর পুনরাবৃত্তি চাই না। আমরা সামনের সারিতে আছি। অনেক ডাক্তারও কভিড-১৯- আক্রান্ত হয়েছিলেন। আমাদের সরঞ্জামের সংকট ছিল। হাসপাতাল তার স্যাচুরেশনের সীমায় ছিল। আমাদের রোগী ছিল, কিন্তু কোনো টেস্ট বা কী করতে হবে কিছুই জানা ছিল না।

কিন্তু সময়ে এসে অন্তত মানুষ জানে কীভাবে ঝুঁকি কমাতে হয়। সবাইকে বিষয়ে নমনীয় হতে হবে, যত্ন নিতে হবে এবং মনোযোগ দিতে হবে, যোগ করেন তিনি।

এদিকে বৃহস্পতিবার জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্পান বলেন, প্রতিদিন সংক্রমণের সংখ্যা হাজার করে বাড়ছে। যা বর্তমানে সামলানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। কিন্তু তার পরও সবাইকে সতর্ক করেছেন তিনি।

এদিকে জার্মানির ডাক্তারদের প্রধান অ্যাসোসিয়েশন দ্য মারবার্গার বান্ড বিশ্বাস করেন তার দেশ এরই মধ্যে দ্বিতীয় ঝড় মোকাবেলা করছে।

দ্বিতীয় ঝড় নিয়ে বিশেষজ্ঞ সার্জন পাবলো কেরেসেডা বলেন, মার্চ-এপ্রিলে আমরা বলতে পেরেছিলাম, এটা আমাদের হকচকিত করেছে। ভাইরাসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারার অজুহাত হিসেবে আমরা এটা বলেছিলাম। কিন্তু এখন আমরা বলতে পারব না যে আমরা সতর্কবার্তা পাইনি। আমরা তিন মাসের বিরতি পেয়েছি এবং যদি আমরা এর সদ্ব্যবহার করতে না পারি তবে সেটা হবে বিপর্যয়।

দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন