ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে হাতিয়ার তিন হাজার পরিবারের

বণিক বার্তা প্রতিনিধি নোয়াখালী

মাত্র দুই মাস আগে চোখের সামনেই মেঘনায় বসতভিটা বিলীন হতে দেখেছেন আক্তারী বেগম (৪০) এর আগেও দুই দফায় ভাঙনে বিলীন হয়েছিল তার বসতভিটাসহ প্রায় এক একর জমির বাড়ি। পর্যন্ত তৃতীয়বারের মতো বিলীন হলো তার বসতভিটা। বারবার ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব আক্তারী বেগম পরিবারসহ আশ্রয় নিয়েছেন বয়ারচর রক্ষা বাঁধের পাশে।

আক্তারী বেগম জানান, যখন তিনি বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেন তার কয়েকদিন পরই চতলার স্লুইচ গেইটটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ভেঙে যায় বেড়িবাঁধের বেশকিছু অংশ। এখন জোয়ারের পানি চলে আসে তার ঘরে। এখানেও হয়তো আর এক মাস থাকতে পারবেন। এক মাস পরই ভেঙে যাবে তার বর্তমান বসতভিটাও।

শুধু আক্তারী বেগম নয়। নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার উত্তরাংশে হরণী ইউনিয়নে অন্তত তিন হাজার পরিবার বসতভিটা হারানোর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে চেয়ারম্যান ঘাট, দক্ষিণ ইসলামপুর, মুফতি সমাজ, নম্বর দাগ সমাজ, টাংকি সমাজ, ১০ নম্বর দাগ সমাজ, দিদারবাজার টাংকির বাজারসহ অন্তত ১০টি সমাজ।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, হরণী ইউনিয়ন মেঘনার বুকেই জেগে ওঠেছিল মাত্র ২৫ বছর পূর্বে। ৯৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ইউনিয়নকে সরকার চর উন্নয়ন বসতি স্থাপন প্রকল্পের (সিডিএসপি) মাধ্যমে অনেকটা পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলেছিল। বেড়িবাঁধ, কৃষি ব্যবস্থা, বাজার সেচ প্রকল্প মিলিয়ে ভাঙনকবলিত হাজার হাজার পরিবারের আদর্শের বসতি হয়ে ওঠে জনপদ। কিন্তু আট বছর আগে থেকে পুনরায় স্বল্প পরিসরে শুরু হয় মেঘনার ভাঙন। আর ভাঙন তীব্রতা ধারণ করে তিনি বছর ধরে। চলতি বছর বর্ষার শুরুতেই বসতভিটা হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবার। নিয়ে গত আট বছরে বাস্তুহারা হয়েছে অন্তত তিন হাজার পরিবার। অনেকে একাধিকবার ভাঙনের কবলে পড়ে এখন নিঃস্ব।

হরণী ইউনিয়ন .লীগের সাধারণ সম্পাদক আশ্রাফ হোসেন জানান, ২০-২৫ দিন আগে চতলা স্লুইচ গেটটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। একমাত্র ভরসা বয়ারচর রক্ষা বেড়িবাঁধেরও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বিলীন হয়েছে। এতে প্রতিদিনই জোয়ারের পানি ঢুকছে বাড়িঘরে। বিলীন হওয়ার পথে নম্বর কলোনিটিও। যদি ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে ২৩টি সাইক্লোন শেল্টারসহ ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, সড়ক বিলীন হবে।

শুধু হরণী নয়। ভাঙছে হাতিয়ার সুখচর, নলচিরা চর ঈশ্বর ইউনিয়ন। বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় প্রতিনিয়তই জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে বেশির ভাগ গ্রাম।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, হাতিয়ার ভাঙনে তারতম্য রয়েছে। এর মধ্যে মূল হাতিয়া দ্বীপে প্রতি বছর ১০০-১৫০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়। আবার হাতিয়ার উত্তরাংশে চানন্দি ইউনিয়নের নাঙ্গলিয়ারচরের দিকে প্রতি বছর ৩০০-৪০০ মিটার করে ভাঙে। এছাড়া নলের চর বয়ারচরের দিকে প্রতি বছর প্রায় ১০০ মিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়।

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ভাঙন রোধে পাউবো একাধিক প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছে। এর মধ্যে নলেরচর-কেরিংচর ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রকল্প বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে।

শুধু হরণী ইউনিয়ন নয়, পুরো হাতিয়াকে রক্ষায় সুপার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান নোয়াখালী- (হাতিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার একটি মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শুধু হাতিয়া নয়, ভাঙন রোধ হবে সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জের এবং অঞ্চল দারুণ পর্যটন কেন্দ্র হয়ে ওঠবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন