২০২০ সাল

বৈশ্বিক এআই বাজারের রাজস্ব ১৫৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) ব্যবহার বাড়ছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরির তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের পাশাপাশি উৎপাদন শিল্প এবং ব্যবস্থাপনায় এআই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এন্টারপ্রাইজগুলো ব্যবসায় সুবিধা পেতে ক্রমে এআই প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে চলতি বছর এআই সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার সেবা খাতের রাজস্ব ১৫ হাজার ৬৫০ কোটি ডলারে পৌঁছানোর প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যা গত বছরের চেয়ে ১২ দশমিক শতাংশ বেশি। সম্প্রতি বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) এক প্রতিবেদনে এমনটাই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। খবর টেলিকম লিড।

আইডিসির ওয়ার্ল্ডওয়াইড সেমিঅ্যানুয়াল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ট্র্যাকার শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্যান্য খাতের মতো নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট কভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এআই বাজারের প্রবৃদ্ধিতে। ভয়াবহ চলমান মহামারীর কারণে চলতি বছর এআই বাজারে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির দেখা মিলবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থাৎ বৈশ্বিক এআই বাজারে চলতি বছর শ্লথগতির প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে। কারণ এআই প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। অবশ্য এআই প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের চিত্র দ্রুতই আগের অবস্থায় ফেরার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়, ২০২৪ সাল নাগাদ এআই বাজারের রাজস্ব ৩০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছবে। সময়ের মধ্যে বাজারটির রাজস্বে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে ১৭ দশমিক শতাংশ। এআই বাজারের মোট রাজস্বের ৮০ শতাংশই আসবে সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার থেকে। সফটওয়্যার সেগমেন্টে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আসবে এআই অ্যাপ্লিকেশন থেকে, যা চলতি বছর ১২ হাজার ৪০ কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে।

এন্টারপ্রাইজগুলোয় এআই এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে কেন? সম্প্রতি ওরাকল এবং এন্টারপ্রাইজ স্ট্র্যাটেজি গ্রুপের এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বিশ্বজুড়ে যেসব প্রতিষ্ঠান আর্থিক অন্যান্য কার্যক্রমে এআই সম্ভাবনাময় প্রযুক্তির ব্যবহার করছে, তাদের বার্ষিক মুনাফা ৮০ শতাংশ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী ১৩টি দেশের ৭০০ শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর ইমার্জিং টেকনোলজিস: দ্য কম্পিটিটিভ অ্যাজ ফর ফিন্যান্স অ্যান্ড অপারেশনস শীর্ষক গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষণা ফলাফলে দেখা যায়, এআই, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), ব্লকচেইন, ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো সম্ভাবনাময় প্রযুক্তিগুলো ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠান অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করছে এবং প্রতিযোগিতামূলক নানা সুবিধা পাচ্ছে।

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, আর্থিক ব্যবস্থাপনায় যথার্থতা দক্ষতা বৃদ্ধি করছে এআই ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভুলের হার গড়ে ৩৭ শতাংশ কমেছে। বিশ্বব্যাপী ৭২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরো ভালোভাবে ব্যবসায়িক অবস্থান কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে পারছে। এছাড়া ৮৩ শতাংশ কর্মকর্তা মনে করেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় আর্থিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করবে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি। ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ৩৬ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। এআই প্রযুক্তি অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের গতি ৩৮ শতাংশ বেগবান করে।

ওরাকল এসএএএস (সাস) প্রডাক্ট মার্কেটিংয়ের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট জুয়াজেন লিন্ডনার বলেন, এআই, ইন্টারনেট অব থিংস, ব্লকচেইন ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো প্রযুক্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দ্রুততার সঙ্গে বিভিন্ন পণ্য সেবা উন্মোচনের সুযোগ করে দিচ্ছে। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে এগিয়ে থাকার সুযোগ সৃষ্টি করছে। যেসব প্রতিষ্ঠান প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় আরো পাকাপোক্তভাবে প্রযুক্তিগুলো গ্রহণ করেছে, তারা অধিক মুনাফা অর্জন করছে।

তিনি বলেন, এআই আইওটির মতো সম্ভাবনাময় প্রযুক্তিগুলো এখন মূলধারায় চলে এসেছে। যেসব প্রতিষ্ঠান এখনো প্রযুক্তিগুলো গ্রহণ করেনি, তারা তাদের ব্যবসাকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের গ্রাহকদের সহায়তা প্রদানের জন্য আমরা সর্বদাই বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ায় এসব প্রযুক্তির সম্মেলন ঘটিয়ে যাচ্ছি, যেন তারা পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে এবং তাদের ব্যবসায় এসব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে পারে।

এন্টারপ্রাইজ স্ট্র্যাটেজি গ্রুপের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিস্ট সার্ভিসের ইভিপি জন ম্যাকনাইট বলেন, গবেষণাটি স্পষ্টতই বলে দিচ্ছে, প্রযুক্তিগুলো পরীক্ষামূলক অধ্যায় পেরিয়ে এখন বিস্তৃৃত আকারে ব্যবহারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষত ব্যবসায়িক খাতে আর্থিক অপারেশনাল কাজে এআই আইওটি প্রযুক্তি দ্রুত পরিপূর্ণতা অর্জন করছে। এছাড়া গবেষণাটিতে প্রতীয়মান হয়েছে প্রযুক্তিগুলো একে অন্যের পরিপূরক এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন