এশিয়ার চালের বাজার

ভিয়েতনাম-থাইল্যান্ডে বাড়লেও ভারতে অপরিবর্তিত দাম

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর ধাক্কা সামলে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে এশিয়ার চালের বাজার। বাড়ছে রফতানি। একই সঙ্গে বাড়তির দিকে রয়েছে রফতানিযোগ্য চালের দাম। সর্বশেষ সপ্তাহে ভিয়েতনাম থাইল্যান্ডে রফতানিযোগ্য শতাংশ ভাঙা চালের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে সময় ভারতের বাজারে খাদ্যপণ্যটির দাম ছিল অপরিবর্তিত। খবর বিজনেস রেকর্ডার রয়টার্স।

ভিয়েতনাম বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ। সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটিতে চালের দাম বেড়ে প্রায় মাসের সর্বোচ্চে কাছাকাছি উন্নীত হয়েছে। সময় দেশটির বাজারে রফতানিযোগ্য শতাংশ ভাঙা চাল টনপ্রতি ৪৭০ ডলারে বেচাকেনা হয়েছে। আগের সপ্তাহেও খাদপণ্যটির দাম ছিল টনপ্রতি ৪৪০-৪৫০ ডলারের মধ্যে। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভিয়েতনামে রফতানিযোগ্য শতাংশ ভাঙা চালের দাম টনে সর্বোচ্চ ৩০ ডলার বেড়েছে।

হো চি মিন শহরের ব্যবসায়ীরা জানান, গ্রীষ্মের শেষভাগে এসে বাজারে চালের সরবরাহ অনেকটাই কমে গেছে। একই সঙ্গে বেড়েছে রফতানি চাহিদা। বিশেষত কিউবা, মালয়েশিয়া ফিলিপাইনে ভিয়েতনাম থেকে রফতানি হওয়া চালের চাহিদা বাড়তির দিকে রয়েছে। ফলে চাহিদা সরবরাহের ভারসাম্য না থাকায় দাম বাড়তে শুরু করেছে চালের। রফতানি চাহিদার চাঙ্গা ভাব আগামী দিনগুলোতেও দেশটিতে চালের বাজারে বিদ্যমান ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ধরে রাখতে পারে।

আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যটির মূল্য নির্ধারণে ভিয়েতনাম বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। ভিয়েতনামের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৩৯ লাখ টন চাল রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক শতাংশ কম। সময় চাল রফতানি বাবদ দেশটি ১৯১ কোটি ডলার আয় করেছে। এক বছরের ব্যবধানে চাল রফতানি বাবদ দেশটির আয় ১০ দশমিক শতাংশ বেড়েছে। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তি দামের কারণে রফতানি আগের তুলনায় কমলেও চাল রফতানি করে ভিয়েতনামিজ রফতানিকারকদের আয় বাড়তির দিকে রয়েছে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্টরা।

চাল রফতানিকারক দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় থাইল্যান্ডের অবস্থান দ্বিতীয়। সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটির বাজারে চালের দাম আগের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। সময় থাইল্যান্ডে রফতানিযোগ্য শতাংশ ভাঙা চাল টনপ্রতি সর্বোচ্চ ৪৮৫ ডলারে বেচাকেনা হয়েছে। আগের সপ্তাহেও খাদ্যপণ্যটির দাম ছিল টনপ্রতি সর্বোচ্চ ৪৮৩ ডলার। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে থাইল্যান্ডের বাজারে রফতানিযোগ্য শতাংশ ভাঙা চালের দাম টনে সর্বোচ্চ ডলার বেড়েছে।

ব্যাংককভিত্তিক ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশজুড়ে খরা পরিস্থিতির দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি। ফলে আগে থেকেই ধান-চালের উৎপাদন সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। তার ওপর যুক্ত হয়েছে মুদ্রাবাজারে থাই বাথের (স্থানীয় মুদ্রা) শক্তিশালী অবস্থান। সব মিলিয়ে এমন পরিস্থিতি দেশটিতে চালের দাম চাঙ্গা রেখেছে।

দেশটির ধান-চাল ব্যবসায়ীদের মতে, এবারের বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা মিলছে না। তাই ধান-চালের উৎপাদন নিয়ে বিদ্যমান আশঙ্কা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে চালের বাজার চাঙ্গা রাখতে পারে।

চালের বৈশ্বিক রফতানি বাজারে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ভারত। সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটির বাজারে খাদ্যপণ্যটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সময় ভারতের বাজারে রফতানিযোগ্য শতাংশ ভাঙা চাল টনপ্রতি ৩৮০-৩৮৫ ডলারে বেচাকেনা হয়েছে।

করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে এখনো লড়ে যাচ্ছে ভারত। তবে দিন দিন দেশটিতে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। বাড়ছে সংক্রমণ। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। পরিস্থিতিতে পরিবহণ শ্রমিক সংকটে পড়েছে ভারতের চাল রফতানি খাত। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজন অনুযায়ী চাল রফতানি করতে পারছেন না ভারতীয় রফতানিকারকরা। এটাই ভারতীয় চালের বাজারে স্থিতাবস্থার মূল কারণ।

তবে পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে পারে বলে জানান অন্ধ্রপ্রদেশের চাল ব্যবসায়ী রফতানিকারকরা। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সমুদ্রবন্দরগুলোয় শ্রমিক সংকট রয়েছে। তবে সড়ক কিংবা রেলপথে চাল রফতানি বাড়ানো যেতে পারে। বাংলাদেশ সরকার চাল আমদানির কথা ভাবছে। ভৌগোলিক নৈকট্য পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক বিদ্যমান থাকায় সম্ভাবনা ভারতীয় চাল রফতানিকারকদের আশার আলো দেখাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন