ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

৯৫ কিলোমিটারে ফাঁড়ি মাত্র ৫টি বাড়ছে পণ্য লুটের ঘটনা

রাজু কুমার দে মিরসরাই

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামের সিটি গেট থেকে ফেনীর মহীপাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৯৫ কিলোমিটার এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের ফাঁড়ি রয়েছে মাত্র পাঁচটি। দীর্ঘ এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ ফাঁড়ি না থাকায় মহাসড়কের পণ্য লুট চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠছে। কয়েক মাসে একাধিক চুরি লুটের ঘটনা ঘটেছে। সবশেষ আগস্ট রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে চুরি হওয়া ট্রাকসহ আন্তঃজেলা গাড়ি চোর চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করে মিরসরাই থানা পুলিশ।

সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে গঠন করা হয় হাইওয়ে পুলিশ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রাম সিটি গেট থেকে ফেনীর মহীপাল পর্যন্ত ৯৫ কিলোমিটারে রয়েছে পাঁচটি হাইওয়ে পুলিশের ফাঁড়ি। এগুলো হলো সীতাকুণ্ডের বারআউলিয়া হাইওয়ে পুলিশ, কুমিরা পুলিশ ফাঁড়ি, মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ চৌধুরীহাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি, ফেনীর মুহুরীগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি ফেনীর মহীপাল পুলিশ ফাঁড়ি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্য লুট চক্রের একাধিক সদস্যকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে মিরসরাইয়ের অংশে চক্রের মূলহোতা আনোয়ারুল আজিম বাবু ওরফে তেল বাবুকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

জোরারগঞ্জ থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ জুন রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিনকির আস্তানা রেলস্টেশন এলাকা থেকে কাভার্ড ভ্যান লুটের সময় ৫০ লাখ টাকার গার্মেন্টস পণ্য উদ্ধার করে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। ৩৪৫টি কার্টনে ১৫ হাজার ৬৭৫ পিস বেবি সোয়েটার উদ্ধার করা হয়। এর আনুমানিক মূল্য ৪৭ লাখ হাজার ৫০০ টাকা। পরে আনোয়ারুল আজিম বাবুকে প্রধান আসামি অজ্ঞাতনামা ছয়-সাতজনের নামে জোরারগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

এর আগে গত ১৩ মে রাতে ৬০ বস্তা সরকারি চালসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ছোট কমলসহ এলাকার পণ্য লুটের অন্যতম হোতা নুরুজ্জামান নুরুকে গ্রেফতার করে র্যাব--এর একটি দল। তখন র্যাব--এর (ফেনী) ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মো. নুরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুরু মহাসড়কে পণ্যবাহী পরিবহন থেকে বিভিন্ন পণ্য লুট করত বলে র্যাবকে তথ্য দিয়েছে। গত জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চোরাই তেল বিক্রির মূল হোতা ছালেহ আহম্মদ দুলালকে গ্রেফতার করে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। সময় বিপুল পরিমাণ চোরাই তেল বিক্রির সরঞ্জাম তেল উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ গত আগস্ট রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ে চেকপোস্ট বসিয়ে চুরি হওয়া ট্রাকসহ আন্তঃজেলা গাড়ি চোর চক্রের সদস্য মাহমুদুল হাসানকে আটক করে মিরসরাই থানা পুলিশ।

চট্টগ্রাম আন্তঃজেলা পণ্য পরিবহন কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক মালিক সমিতির মহাসচিব নুরুল আবছার জানান, তিনি অসুস্থতার কারণে গত তিন মাস অফিসে যেতে পারেননি। তাই পণ্য লুটের সঠিক তথ্য সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে গত জুনে একটি কাভার্ড ভ্যান লুটের ঘটনা ঘটেছে, যা জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।

এদিকে হাইওয়ে পুলিশকে সব সময় মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে কাজ করতে হয়। এছাড়া দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি উদ্ধার, সড়কে যানজট নিরসনসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত থাকে হাইওয়ে পুলিশ। তাই স্বল্প সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়ে নিয়মিত অভিযান চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তবে থানা পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে হাইওয়ে পুলিশ নিয়মিত টহল জোরদার করছে বলে দাবি করেন জোরারগঞ্জ চৌধুরীহাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফিরোজ হোসেন।

মিরসরাই থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) দীনেশ চন্দ্র দাশ গুপ্ত জানান, রাষ্ট্রের প্রয়োজন অথবা যখন মাদক কিংবা অবৈধ পণ্য পাচারে গোপন সংবাদ পাওয়া যায়, তখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে মহাসড়কে চেকপোস্ট বসানো হয়ে। তবে মহাসড়কে যদি আরো ফাঁড়ি বসানো হয় তাহলে টহল কাজ আরো সহজ হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন