কর্মঘণ্টা, মিটিং বেড়েছে ওয়ার্ক ফ্রম হোমে

বণিক বার্তা ডেস্ক

নিউইয়র্ক থেকে তেল আবিবকরোনাকালীন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক ব্যবহার মানুষের কর্মঘণ্টা বাড়িয়েছে প্রায় সব জায়গায়। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ মধ্যপ্রাচ্যের ১৬টি শহরে ২১ হাজারের বেশি কোম্পানিতে কর্মরত প্রায় ৩১ লাখ কর্মীর ওপর জরিপ চালিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে। খবর ব্লুমবার্গ।

করোনা মহামারী প্রতিরোধে লকডাউন আরোপের আগে পরে চার সপ্তাহ করে মোট আট সপ্তাহে কর্মীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছেন গবেষকরা। তারা কর্মীদের -মেইল মিটিং-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, লকডাউনের মধ্যে কর্মীদের দৈনিক কর্মঘণ্টা গড়ে ৪৮ মিনিট ৩০ সেকেন্ড বেড়েছে। অনলাইনে হওয়ায় মিটিংয়ে অংশগ্রহণ বেড়েছে ১৩ শতাংশ। আর কর্মীদের মধ্যে -মেইল আদান-প্রদানের সংখ্যা বেড়েছে দৈনিক গড়ে দশমিক ৪টি।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে লস অ্যাঞ্জেলেস শিকাগোর মতো কয়েকটি শহরে দৈনিক গড় কর্মঘণ্টা মহামারীপূর্ব অবস্থায় ফিরে গেছে। কিন্তু নিউইয়র্ক সিটি, সান হোসে ইউরোপের বেশির ভাগ শহরে তা এখনো বেশি রয়েছে।

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির পাঁচ গবেষক মিলে জরিপ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিলেশনস প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। গবেষক দলের মধ্যে অন্যতম হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের প্রাতিষ্ঠানিক আচরণবিষয়ক অধ্যাপক জেফ পোলজার। তিনি বলেন, মানুষ পরিস্থিতি মেনে তাদের কাজের ধরন বদলে ফেলেছে।

আলোচ্য দুই মাসে কর্মঘণ্টা, মিটিং -মেইল আদান-প্রদান বাড়লেও একটি জিনিস কমেছে। সেটি হলো মিটিংয়ের দৈর্ঘ্য। লকডাউনের মধ্যে দাপ্তরিক বৈঠকগুলো অনলাইন প্লাটফর্মে হওয়ায় সেগুলোর ব্যাপ্তি কিছুটা সংক্ষিপ্ত হয়েছে।

বাধ্যতামূলক ওয়ার্ক-ফ্রম-হোমের কারণে কর্মীদের কর্মদক্ষতা, মানসিকতা, সংস্কৃতি, খরচসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ে, কোম্পানিগুলো তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বাসায় বসে কাজ করার চর্চা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখা যাবে কিনা, আর গেলেও কোনো সংশোধন-পরিমার্জন আনতে হবে কিনা, তা জানার ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

এদিকে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মার্কিন নাগরিকরা লকডাউনের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ঘণ্টা অতিরিক্ত দাপ্তরিক কাজের পেছনে ব্যয় করছেন এবং তারা অফিসের কাজের জন্য নির্ধারিত সময়ের বাইরে অন্য সময়েও অনলাইনে যুক্ত থাকছেন। ব্লুমবার্গ নিউজের একটি জরিপে উত্তরদাতারা জানিয়েছেন, সন্তানদের দেখভাল, অফিস ঘরের কাজের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন করা এবং আর্থিক মন্দার চাপ সামাল দিতেই তাদের এখন ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। 

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দাবি করেছেন, করোনা মহামারীকালীন অর্গানাইজেশনাল বিহেভিওর নিয়ে তারা যে গবেষণা করেছেন, এখন পর্যন্ত এত ব্যাপক পরিসরে আর কোনো গবেষণা হয়নি। কারণ তাদের গবেষণায় ১৬টি মেট্রোপলিটন এলাকার পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে।

তাহলে কি করোনা-পরবর্তী সময়েও এমন কর্মপরিবেশ অব্যাহত রাখা হবে? মানুষ কি এই পরিবর্তিত চর্চার সঙ্গেই নিজেকে মানিয়ে নেবে? এখন যেমন কর্মীরা ঘরে বসেই কাজ করছেন, নির্বাহীরা অনলাইন মিটিংয়ের মাধ্যমে তাদের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছেন, করোনা সংকট কেটে গেলেও কি রীতি কোম্পানিগুলো অব্যাহত রাখবে?

জেফ পোলজার বলেন, মানুষের অভ্যাসে স্থায়ী পরিবর্তন এসেছে কিনা, সে বিষয়ে কোনো উপসংহারে পৌঁছতে আরো গবেষণা করতে হবে। তবে তিনি মনে করেন, কর্মপরিবেশ করোনার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে বেশ সময় লেগে যাবে। তিনি বলেন, আমার মনে হয় না, আমরা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে পারব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন