কেন হার্ড ইমিউনিটি কাজে নাও আসতে পারে?

অ্যাডাম ক্লিজকোস্কি

প্রায় ১০০ বছর আগে দুজন ব্রিটিশ গবেষক উইলিয়াম টোপলি গ্রাহাম উইলসন ইঁদুরের ওপর ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তারা দেখলেন কতটি ইঁদুরকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে তার ওপর নির্ভর করছে স্বতন্ত্র একটি ইঁদুরের বেঁচে থাকা। সুতরাং স্বতন্ত্রের ওপর ইমিউনিটির ভূমিকাকে সমষ্টির ইমিউনিটি থেকে পৃথক করা প্রয়োজন।

একশ বছর পর এখন এসে হার্ড ইমিউনিটির এই ধারণাটি বিভিন্ন দেশের সরকারি বার্তা সংবাদপত্রের আর্টিকেলগুলোতে বিস্তৃতভাবে আলোচিত হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে এর মানে কী?

যখন কভিড-১৯-এর মতো কোনো রোগ জনগণের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে, এটি কিছু মানুষকে ইমিউন করে দেয়। অন্তত স্বল্প সময়ের জন্য হলেও। পরবর্তী সময়ে সংক্রমিত ব্যক্তিরা ইমিউন অর্জন করা ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে, যারা সংবেদনশীল তাদের সঙ্গে নয়। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস পাবে এবং একপর্যায়ে রোগের বিস্তৃতি থেমে যাবে। এটি ঘটতে পারে এমনকি জনগণের মাঝে কিছু মানুষ সংবেদনশীল হওয়ার পরও।

আর ভ্যাকসিন সংবেদনশীল মানুষকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহূত হতে এবং তাত্ক্ষণিকভাবে মহামারীর লাগাম টেনে ধরতে পারে।

এটা কীভাবে কাজ করে?

এমন একটি জনসংখ্যা কল্পনা করুন যেখানে সবাই সংবেদনশীল। সেখানে যদি একজন আক্রান্ত ব্যক্তি আসে ভাইরাসটি তখন ক্রমবর্ধমান নতুন সংক্রমণের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। এই মহামারী বিস্তৃত হতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না সর্বাধিক সংখ্যক ব্যক্তি ভাইরাসে সংক্রমিত হয় এবং ইমিউনিটি লাভ করে কিংবা মরে না যায়।

যদি কিছু মানুষ সুরক্ষিত হয়, উদাহরণস্বরূপ ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামের শুরুর দিকে রোগটি শ্লথভাবে বিস্তৃতি লাভ করে।

এমনকি যথেষ্ট অনুপাতে লোকদের সুরক্ষিত রাখা প্রয়োজন ভাইরাসকে পুরোপুরিভাবে থামাতে হলে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তা গোটা জনসংখ্যার মাঝে হওয়ার প্রয়োজন নেই।

১৯৭০-এর দশকে ম্যাথমেটিক্যাল এপিডেমিওলজিস্টরা দেখলেন, এই অনুপাতটি নির্ভর করছে রোগটি কতটা সংক্রামক তার ওপর। সহজ একটি ফর্মুলা দ্বারা এটি বের করা যায়। রিপ্রোডাক্টিভ নাম্বার অর্থাৎ R-এর মান কত তার ওপর। হামের ক্ষেত্রে এটি ছিল ৯৫ শতাংশ কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে এটি ছিল ৩৫ শতাংশ।

জনগণ যদি একবার হার্ড ইমিউনিটি লাভ করে, সেটি হতে পারে ভ্যাকসিনেশন কিংবা প্রাকৃতিকভাবে; তখন সংক্রমণের নতুন কোনো শৃঙ্খলা দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে। উপায়ে জনগণ ভবিষ্যতের প্রাদুর্ভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। কিন্তু সেটি ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ ইমিউনিটি লেভেল বজায় থাকে।

যদি ইমিউনিটি লেভেল নির্দিষ্ট মানের নিচে পড়ে যায় তখন রোগটির পুনরুত্থান ঘটতে পারে। নতুন জন্ম নেয়া শিশু, যারা সংবেদনশীল তাদের ভ্যাকসিন দেয়া জরুরি। আবার যাদের সময়ের সঙ্গে রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায় তাদেরও ফের ভ্যাকসিন নেয়া জরুরি।

কারোনাভাইরাসের হার্ড ইমিউনিটি

বর্তমানে কভিড-১৯-এর জন্য R-এর মান -এর আশপাশে, তবে সম্ভবত এটি সর্বনিম্ন . এবং সর্বোচ্চ পর্যন্ত। এই সম্পর্কিত হার্ড ইমিউনিটির স্তর হচ্ছে যথক্রমে ৬০ শতাংশ, ৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত।

তবে শেষ পর্যন্ত ভাইরাসকে পুরোপুরিভাবে নির্মূূল করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে, এমনকি হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হওয়ার পরও।

আমরা এখন কোথায় আছি?

আমরা হার্ড ইমিউনিটির কত কাছাকাছি আছি কিংবা আমরা কখনো তা পাব কিনা সেটা নির্ধারণ করা সহজ নয়। তবে মানুষ যদি সার্স-কোভ- ভাইরাসে একবারের বেশি আক্রান্ত হয়, যেমনটা সাধারণ সর্দিজ্বরের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে, তবে এটি হার্ড ইমিউনিটিকে অদৃশ্য করে দেবে। জনগণের ইমিউনিটি অনুমানের বৃহৎ গবেষণায় থেকে আমরা জানি এটি এখন থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। এরপর আসে রিপ্রোডাক্টিভ নাম্বার R, যা স্থানভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই রোগ প্রতিরোধের জন্য হার্ড ইমিউনিটির প্রয়োজন হয়। এছাড়া আরেকটি গবেষণা বলছে কিছু মানুষের উচ্চমাত্রার প্রতিরাধক্ষমতা থাকে, এর কারণ সম্ভবত তারা একই ধরনের রোগে ভুগেছে অথবা অন্য রোগের জন্য তারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে। সবশেষে অনেক কিছু নির্ভর করে ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিক্রিয়ার ওপরও এবং কত সময় ধরে একজন ব্যক্তি অ্যান্টিবডি ধরে রেখে লড়াই করতে পারে তার ওপরও। আর যারা কভিড-১৯- আক্রান্ত হয়েছে তাদের সবার মাঝে ইমিউনিটি লেভেলও সমান হয় না।

ব্যক্তি না সমষ্টি

হার্ড ইমিউনিটির ধারণা যদিও মহামারীর প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা করার জন্য উপযোগী, কিন্তু এটি একেবারে বিতর্কের বাইরের বিষয় নয়। এটি অর্জনের লক্ষ্যে যে ক্যাম্পেইন চালানো হয় তাতে জনগণকে রক্ষা করতে গিয়ে স্বতন্ত্রের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের জন্য অনেক ক্ষেত্রে লকডাউন কঠোর করা হয় না কিংবা শিথিল করে দেয়া হয়। যা করা হয় দ্রুত কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে মানুষকে ইমিউন করতে এবং তারপর হার্ড ইমিউনিটিতে পৌঁছার জন্য। কিন্তু এর ফলে দুর্বল স্বাস্থ্যের মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে।

স্ক্রলডটইন থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন