সংকটকালেও যেভাবে কর্মীদের পাশে থাকছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান

করোনার প্রকোপে পুরো বিশ্ব আজ কাবু। প্রতিনিয়তই সম্মুখীন হতে হচ্ছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের। অন্য সব কিছুর মতোই ব্যবসায়িক নেতৃত্বকে দিতে হচ্ছে কঠিন পরীক্ষা। কারণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে যেকোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে নিতে হচ্ছে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। অনেকটাই ওয়ান-ওয়ে রুটের মতো। আর এক্ষেত্রে একটি প্রতিষ্ঠানের তিনটি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হচ্ছে। প্রথমত, ঘরে বসেই কর্মীদের কাজ করার পরিবেশ তৈরি করা, দ্বিতীয়ত, চাকরির নিরাপত্তা দেয়া এবং তৃতীয়ত, কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার মতো নানা উদ্যোগ। যারা তিন সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে নিতে পেরেছে, তারই আজ ব্যবসায়িক নেতৃত্বে সফল।

ফলে দেশে যখন মহামারীর প্রকোপ প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন কর্মীদের নিরাপত্তা এবং সুস্থতা নিশ্চিত করা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর তখনই বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের মতো কর্মীদের সুরক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রহণ করছে সুরক্ষা সতর্কতামূলক নানা পদক্ষেপ।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আমাদের দেশে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত ১৮ মার্চ। এর পরই কর্মীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বেশ কয়েকটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান (এমএনসি) ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম অপশন চালু করে। সেই থেকে কর্মীরা বাড়িতে বসেই নিরাপদে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। একইভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানও, যা মহামারীর প্রাদুর্ভাব কমাতেও সাহায্য করছে।

ভোগ্যপণ্যের কোম্পানি ম্যারিকো, নেসলে, ইউনিলিভার মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবি, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে তাদের কর্মীদের বাড়িতে থেকেই কাজ করতে বলেছে। এর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি সরকারের দেয়া লকডাউন ঘোষণার আগেই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল।

করোনাজনিত ব্যবসায়িক মন্দার কারণে যেখানে কোম্পানিরা বেতন হ্রাস, লে-অফসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেখানে ম্যারিকোর মতো কতিপয় কোম্পানি কর্মীদের কল্যাণের জন্য এগিয়ে এসেছে।ওয়ার্ক-ফ্রম-হোমঅপশন চালু করা ছাড়াও ম্যারিকো তার সব কর্মচারীকে অগ্রিম বেতন প্রদান করেছে। দেশের পরিস্থিতিতে যেন কর্মীরা আর্থিক সংকটের সম্মুখীন না হন এবং কর্মীদের ব্যক্তিগত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারেন, সেজন্যই ম্যারিকোর বিশেষ উদ্যোগ। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি কারখানার শ্রমিক সহকারী স্টাফ এবং পরিবেশক কর্মচারীদের জন্য নিঃশর্তভাবে মানবিক ভাতাও প্রদান করেছে। যদিও সময়ে অনেক কোম্পানি বেতন কমানোর জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু ম্যারিকোর মতো কোম্পানি অগ্রিম বেতন, বোনাস অন্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে চাকরির নিশ্চয়তার জন্য সব কর্মীকে আশ্বাস প্রদান করে আসছে

ম্যারিকো সেলসের রিজিয়ন হেড আহতাশামুল হক বলেন, মহামারীর শুরু থেকেই ম্যারিকো তাদের কর্মচারীদের সুরক্ষার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছে। দেশে লকডাউনের সিদ্ধান্ত আসার আগেই ম্যারিকো তার সব কর্মচারীকে বাসায় থেকে কাজ করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। এতে করে আমাদের কর্মীদের মনোবল কখনো ভেঙে পড়েনি। এছাড়া কর্মীদের চাঙ্গা রাখার জন্য তাদের কাজের ওপর ভিত্তি করে পুরস্কৃত উৎসাহিত প্রদান করা হয়েছে। ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ, চেঞ্জমেকার্স প্রতিযোগিতাসহ উদ্দীপনামূলক ব্যবসা সহায়ক প্রোগ্রাম চালিয়েছে। ফলে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আরো বেড়ে গেছে। যেখানে চলমান সংকটের কারণে পুরো বিশ্বই থেমে গেছে। সে সময় আমরা বাজারে নতুন করে তিন পণ্য নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। আর এসব সম্ভব হয়েছে ম্যারিকোর সব কর্মীর উৎসাহ-উদ্দীপনার কারণে। আমরা বিশ্বাস করি, কর্মীরাই প্রতিষ্ঠানের মূল চালিকাশক্তি।

ভোক্তাদের প্রয়োজনীয় সব পণ্য চাহিদা পূরণের জন্য ম্যারিকো ভোজ্যতেল, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড ওয়াশ, সাবান, শ্যাম্পু, নারকেল তেল এবং বেবি কেয়ার পণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। এরই মধ্যে মহামারীর সম্মুখীন হওয়া দেশগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ম্যারিকো তার কারখানা এবং ডিপোগুলোয় স্বল্প সংখ্যক কর্মচারী নিয়েশুধুমাত্র জরুরিকর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যেও তাপমাত্রা স্ক্যানিং, স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ পর্যবেক্ষণ, সব প্রবেশ প্রস্থানস্থলে অতিরিক্ত স্বাস্থ্যবিধি এবং ওয়াশিং সুবিধা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য প্রতিরক্ষামূলক গিয়ারস, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য প্রটোকলের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। যার সবগুলোই পরবর্তী সময়ে মহামারী চলাকালীন ডিজিএইচএস ডিআইএফই কর্তৃক জারীকৃত স্বাস্থ্যবিধির আওতায় চলে আসে।

আজকের কর্মীরা শুধু ভালো একটি চাকরি বা পেশা চায় না, তারা একটা ভালো কাজের উদ্দেশ্যও চায়। পাশাপাশি যে প্রতিষ্ঠান সমাজের জন্য কাজ করছে। সেই প্রতিষ্ঠান কর্মীদের জন্য কতটা যত্নশীল সে বিষয়েও তারা জানতে চায়। ম্যারিকোর মতো প্রতিষ্ঠানটি একটিনো প্রফিটপ্রতিশ্রুতিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার হ্যান্ড ওয়াশ বাজারে নিয়ে এসেছে। এছাড়া এই সময়ে যেসব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ত্রাণ প্রদানকারী সংস্থা মানুষের কল্যাণে এগিয়ে এসেছে। তারা সংকটেও সফল নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত।

এদিকে ম্যারিকো প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অবদান রাখার পাশাপাশি সাধারণ ছুটির সময় তাদের কারখানার আশপাশের পাঁচ হাজারের অধিক পরিবারকে খাদ্যসহায়তাসহ মিডিয়া কর্মীদের মাঝে হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রদান করে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের কর্মীদের স্বীকৃতি জানাতে #ThankingOurHeroes সিরিজ পরিচালনা করেছে, যা সামাজিক যোগাযোগ সুরক্ষা ব্যবস্থা বজায় রেখে ব্যবসায়ের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বিজ্ঞপ্তি

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন