বৈরুত বিস্ফোরণে লেবাননের মজুদ খাদ্যশস্যের ৮৫% ধ্বংস হয়েছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

লেবাননের রাজধানী বৈরুতকে তছনছ করে দেয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণে লেবাননের মজুদ খাদ্যশস্যের ৮৫ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। বিষয়টি মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে খাদ্যসংকটের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ দেশটি আমদানীকৃত খাদ্যশস্যের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। খাদ্যশস্যের এখন যা মজুদ আছে, তা দিয়ে দেশটি বড়জোর আর এক মাস চলতে পারবে। খবর এএফপি গার্ডিয়ান।

বৈরুতে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩৭ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। বিপুলসংখ্যক হতাহতের পাশাপাশি প্রায় তিন লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে। এছাড়া বিস্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে বলে শহরটির গভর্নর মারওয়ান আবুদ জানিয়েছেন।

বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নতুন করে কোনো বাংলাদেশীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। গতকাল লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানা গেছে, ওই বিস্ফোরণের পর থেকে দুই বাংলাদেশীর খোঁজ মিলছে না। নিখোঁজ দুই প্রবাসী কর্মীর সহকর্মীরা দূতাবাসে এসে ওই তথ্য দিয়েছেন।

এদিকে লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল আরো দুই বাংলাদেশী আহত হয়েছেন। সব মিলিয়ে গতকাল পর্যন্ত ১০৬ জন বাংলাদেশী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫ জন প্রবাসী কর্মী ২১ জন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্য। বৈরুতের বন্দরের কাছে ওই বিস্ফোরণে চারজন প্রবাসী কর্মী মারা গেছেন। দেশটিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কাজে যুক্ত থাকায় বৈরুত বন্দরে উপস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজবিজয়’-এর ক্ষতি হয়েছে।

মঙ্গলবারের ওই বিস্ফোরণে বৈরুত শহরের অর্ধেক অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেকে আটকে থাকায় মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

কীভাবে বিস্ফোরণ হয়েছে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা থাকলেও লেবানন সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্দরের গুদামে কয়েক বছর ধরে পড়ে থাকা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারণেই বিস্ফোরণটি হয়েছে। সরকার জানিয়েছে, মঙ্গলবারের বিস্ফোরণ নিয়ে চলমান তদন্তের মধ্যেই বৈরুত বন্দরের দায়িত্বে থাকা বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। ছয় বছর আগে একটি কার্গো জাহাজ থেকে জব্দ করা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এতদিন বন্দরের গুদামে কেন পড়ে ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

এদিকে ওই গুদামে যে বিস্ফোরণ হতে পারে, সে বিষয়ে এর আগেও সতর্ক করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। লেবাননের সরকারি কর্মকর্তারাই বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, চাইলে দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। কারণ এর আগে বেশ কয়েকবার বিস্ফোরণের ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল।

২০১৪ সাল থেকে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বন্দরে পড়ে রয়েছে। ছয় মাস আগেও গুদামটি পরিদর্শন শেষে কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছিলেন, বিস্ফোরক পদার্থগুলো সেখান থেকে সরিয়ে না নেয়া হলে পুরো বৈরুত শহর উড়ে যেতে পারে।

লেবাননের কাস্টমস প্রধান বাদ্রি দাহের বলেছেন, তার সংস্থা গুদাম থেকে ওই রাসায়নিক পদার্থগুলো সরিয়ে ফেলার জন্য তাগাদা দিলেও কোনো কাজ হয়নি। পূর্ব সতর্কবার্তা থাকা সত্ত্বেও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সরিয়ে না নেয়ায় লেবাননে সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ বাড়ছে।  

মঙ্গলবার বিস্ফোরণের পর যে কমলা রঙের ধোঁয়ার মেঘ বৈরুতজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটি নাইট্রেটের বিস্ফোরণের কারণে হয়েছে বলে মত বিশ্লেষকদের। বিস্ফোরণের কারণে বাতাসে বিষাক্ত নাইট্রোজেন অক্সাইড ছড়িয়ে পড়েছিল বলে ধারণা তাদের। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মঙ্গলবারের মতো ভয়াবহ বিস্ফোরণ লেবানন এর আগে দেখেনি।

ব্রিটেনের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের ধারণা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার শক্তির ১০ ভাগের এক ভাগ বৈরুতের বিস্ফোরণে দেখা গেছে। তারা বলছেন, ‘সন্দেহাতীতভাবেই এটি ইতিহাসের অন্যতম বড় -পারমাণবিক বিস্ফোরণ।

বিস্ফোরণে নিহতদের স্মরণে তিনদিনের শোক পালন করছে লেবানন। দুই সপ্তাহের জন্য জারি হয়েছে জরুরি অবস্থা। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইরান, ইসরায়েল ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে লেবাননকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন