ইতিহাস গড়ে ২ হাজার ডলার ছাড়াল স্বর্ণের আউন্স

বণিক বার্তা ডেস্ক

স্বর্ণের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কোনোভাবেই এর লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না। ধারাবাহিকতায় বুধবার দিন শেষে স্বর্ণের বাজারে নতুন রেকর্ড হয়েছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আউন্সপ্রতি হাজার ডলারের উপরে থেকে দিন শেষ করেছে মূল্যবান ধাতুটির বাজার। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে স্বর্ণের দাম কমার দৃশ্যমান কোনো লক্ষণ নেই। ফলে আগামী দিনগুলোয় আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবান ধাতুটির দাম আরো চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে।

বুধবার দিনের শুরুতেই স্বর্ণের আউন্স হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরো চাঙ্গা হতে শুরু করে মূল্যবান ধাতুটির দাম। যুক্তরাষ্ট্রের স্পটমার্কেটে দিনের মধ্যভাগে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ওঠে হাজার ৫২ ডলার ৩০ সেন্টে। তবে দিন শেষে মূল্যবান ধাতুটির স্পটমূল্য দাঁড়ায় আউন্সপ্রতি হাজার ৩৫ ডলার ৯০ সেন্টে। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের স্পটমার্কেটে প্রতি আউন্স স্বর্ণ হাজার ৪০ ডলারে বেচাকেনা হয়েছে। ইতিহাসে আগে কখনই স্বর্ণের আউন্স হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়নি।

নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী চলতি বছরের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বাড়িয়েছে। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীন-মার্কিন রাজনৈতিক উত্তেজনা। এসব কারণে মূল্যবান ধাতুটির দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

বিষয়ে মাইনলাইফ করপোরেশনের সিনিয়র রিসোর্স অ্যানালিস্ট গেভিন ওয়েনডেট বলেন, সাধারণত বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা কিংবা ভূরাজনৈতিক উত্তেজনাদুই কারণে স্বর্ণের বাজার চাঙ্গা হয়। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দুটো উপাদান বিদ্যমান। করোনা মহামারীতে চরম অনিশ্চিত অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে বিশ্ব অর্থনীতি। অন্যদিকে চীন-ভারত সীমান্তে রীতিমতো যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছিল। অস্থিরতা রয়েছে দুই কোরিয়ার সীমান্তেও। এসব কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাবক হিসেব কাজ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সুদহার বন্ড বাজারও স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। দেশটিতে ট্রেজারি ইল্ড রেট শূন্যের নিচে নেমে গেছে। মূল্যস্ফীতির কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। মূলত কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিবেচনা করে স্বর্ণে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। কেননা এতে মূল্য হারানোর ভয় একেবারেই নেই। ফলে বাড়তির দিকে রয়েছে স্বর্ণের দাম।

বাণিজ্যযুদ্ধের পাশাপাশি করোনাভাইরাসের বিস্তারের পেছনে বেইজিংকে দায়ী করা নিয়ে চীন-মার্কিন বিরোধ আগে থেকেই ছিল। বর্তমানে বিরোধ রাজনৈতিক মাত্রা পেয়েছে। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ তুলে একে অন্যের কনস্যুলেট বন্ধের পথে হেঁটেছে ওয়াশিংটন-বেইজিং। পরিস্থিতি শেয়ার, মুদ্রা পণ্যসব বাজারেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অস্থিরতা অনিশ্চয়তা বেড়েছে। ফলে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে নিরাপদ বিবেচনা করে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণের প্রতি ঝুঁকেছেন। এতে মূল্যবান ধাতুটির চাহিদা দামদুটোই বেড়ে গেছে।

মার্কিন বাজার বিশ্লেষক মার্গারেট ইয়াং বলেন, আগামী দিনগুলোতেও চাঙ্গা থাকতে পারে স্বর্ণের বাজার। কেননা করোনা মহামারী এখনো সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি। চীনের সঙ্গে ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধও পুরোপুরি মেটেনি। তার ওপর সামনে বড়দিনের মৌসুম শুরু হয়ে যাবে। তার আগেই ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা অর্থলগ্নি নিরাপদ উেসর সন্ধানে নেমে পড়েছেন। যেকোনো ক্রান্তিকালে স্বর্ণ বিনিয়োগের নিরাপদ উৎস বিবেচিত হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সব মিলিয়ে দীর্ঘমেয়াদে চাঙ্গা থাকতে পারে স্বর্ণের চাহিদা দাম।

এক মাস আগে গেভিন ওয়েনডেট বলেছিলেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তার দাবি নাকচ করে দিয়েছিল মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল, স্বর্ণের আইন্স হাজার ডলারের মাইলফলক ছুঁয়ে যেতে আরো কিছুটা সময় লাগতে পারে। পরবর্তী ১২ মাসের মধ্যে মূল্যবান ধাতুটির আউন্স হাজার ডলারে উঠতে পারে। তবে স্বর্ণের দামের ক্ষেত্রে গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাস ভুল প্রমাণিত হয়েছে। গেভিন ওয়েনডেটের ভাষ্য অনুযায়ী, কয়েক সপ্তাহেই ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে স্বর্ণের দাম।

 

বিবিসি, মাইনিংডটকম ব্লুমবার্গ অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন