চার দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো সংকোচনে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে অর্থনীতি। এ অবস্থায় মন্দা এড়ানো নয়, বরং এর গতি শ্লথ করার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে ভারত। আর এ কৌশল বাস্তবায়নে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ওপর জোর দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন। কিন্তু বর্ষার খামখেয়ালি আচরণ সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। খবর ব্লুমবার্গ।
অথচ ভারতে এবারের বর্ষার শুরুটা ছিল বেশ আশাব্যঞ্জক। জুনে বেশ ভালোই বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু জুলাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসেই প্রকৃতি বেঁকে বসে। ধান, তুলা ও সয়াবিনের মতো শস্য ও তেলবীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে জুলাইয়ে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়াটা খুবই জরুরি। কারণ নবীন চারাগাছগুলোর বেড়ে ওঠার জন্য পরিমিত বৃষ্টির পানি দরকার। অথচ সেই জুলাইয়েই ভারতে বৃষ্টিপাত হয়েছে অনিয়মিত।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতি অনেকটাই মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। বর্ষার মাঝামাঝি সময়টায় বৃষ্টিপাত আশানুরূপ হয়নি। এ কারণে সামনের দুই মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে বৃষ্টিপাতের ধরনই বলে দেবে দেশটির গ্রামীণ অর্থনীতির উত্তরণ প্রক্রিয়া কোন দিকে হাঁটবে।
ভারতের সংকোচনশীল অর্থনীতিকে দীর্ঘদিন ধরে একাই টেনে যাচ্ছে কৃষি খাত। এ কারণে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক করোনাকালীন সংকট মোকাবেলার জন্যও গ্রামীণ চাহিদা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে। ভারতের মোট কৃষিজমির অর্ধেকের বেশিতে পানির চাহিদা মেটানোর একমাত্র উৎস হলো মৌসুমি বৃষ্টিপাত। ফলে বর্ষার খামখেয়ালি আচরণের কারণে কৃষি খাতের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়লে ভারতের অর্থনৈতিক উত্তরণের গতিও থমকে যাবে।
ফিচ রেটিংস লিমিটেডের ভারতীয় ইউনিট ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চের প্রধান অর্থনীতিবিদ দেবেন্দ্র কুমার পান্ত বলেছেন, ‘কৃষি উন্নয়নে স্থান ও ভৌগোলিক সুষম বণ্টন খুবই জরুরি। কিন্তু আপনি ভারতে কিছু অঞ্চলের দিকে তাকালে উদ্বেগজনক ঘাটতি দেখতে পাবেন। এখন আমাদের দেখতে হবে আগামী কয়েক দিনে এ ঘাটতি মিটছে কিনা।’
তিনি আরো জানান, ‘গত জুন থেকে ভারতের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অংশে মৌসুমি বৃষ্টিপাত হয়েছে খুবই কম। প্রায় অর্ধেক জায়গায় বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক ছিল। আর বাকি অঞ্চলগুলোয় অতিবৃষ্টি ফসলের অনিষ্ট করেছে। এদিকে ভারতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় জুলাইয়ে। কিন্তু এবার বৃষ্টিপাত ১০ শতাংশ কম হয়েছে, যা ফসলের জন্য অমঙ্গলের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।’
ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় বৃষ্টিপাত হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ শতাংশ কম। মধ্যাঞ্চলেও ৭ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ১৪ শতাংশ বেশি বৃষ্টিতে ভিজেছে দক্ষিণাঞ্চল।
বর্ষাকালে ভারতে চাষ হওয়া অর্থকরী ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, তুলা, ভুট্টা, আখ ও তেলবীজ। মৌসুমি বৃষ্টির এমন অস্বাভাবিক আচরণে এবার এসব ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভারতে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের স্বাভাবিক সময়কাল হলো জুন-সেপ্টেম্বর। এবার বর্ষা শুরু হয়েছে স্বাভাবিক সময়েই। এখন সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলেই হয়। যদিও এখন পর্যন্ত যা বৃষ্টি হয়েছে, তাতে জলাধারগুলোয় কিছুটা হলেও পানি জমা হয়েছে। তবে কৃষির চাহিদা মেটাতে চলতি ও আগামী মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত খুবই জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ এ সময়ে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতেরই আশা করছে। তবে তাদের কথাই তো আর শেষ নয়, প্রকৃতির আচরণ হবে তার খেয়ালমাফিকই। এ কারণে অর্থনীতিবিদ ও কৃষকরা আগামী দুই মাস মৌসুমি বৃষ্টিপাতের গতিপ্রকৃতির দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছেন। কারণ এর ওপর ভারতের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অনেকটাই নির্ভর করছে।
