বামবা, এমআইবি ও বিএফপিডিএর যৌথ সংবাদ সম্মেলন

কপিরাইট সুরক্ষার নামে ‘যথেচ্ছাচার’ বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি

কপিরাইট সুরক্ষার নামে ‘কতিপয় কুচক্রী মহলের’ হাতে দেশের মিউজিক লেবেল কোম্পানি, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি এবং সঙ্গীত শিল্পীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে এ অঙ্গনের তিনটি সংগঠনের নেতারা। তারা আজ বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ তুলে বন্ধে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সেই সঙ্গে এই ‘অপকর্মের’ জন্য দায়ী ব্যক্তি ও মহলবিশেষের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানান তারা।

বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন (বামবা), মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিজ ওনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইবি) ও বাংলাদেশ ফিল্ম প্রোডিউসারস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটরস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফপিডিএ) যৌথ এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বামবা সভাপতি হামিন আহমেদ, এমআইবি প্রেসিডেন্ট এ কে এম আরিফুর রহমান, বিএফপিডিএ সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, এমআইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অনুপম রেকর্ডিং মিডিয়ার সত্ত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন, এমআইবির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চেনা সুরের সত্ত্বাধিকারী হাসান মতিউর রহমান, ইবি সল্যুশনসের পরিচালক এনামুল হক এবং অভিনেতা ও প্রযোজক শাকিব খান।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বামবা সভাপতি হামিন আহমেদ সম্প্রতি দেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে কুচক্রী মহলের এসব অপতৎপরতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মিউজিক বা চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে আদৌ সংশ্লিষ্ট নন, ওলোরা আফরিন নামে নিজেকে আইনজীবী পরিচয়দানকারী একজন ব্যক্তি কীভাবে লাইসেন্সিং অ্যান্ড কালেক্টিং সোসাইটি ফর সিনেমাটোগ্রাফ ফিল্ম (এলসিএসসিএফ) নামে একটি সোসাইটির অনুমোদন পেলেন তা বিস্ময়কর। শুধু তাই নয়, ওই সোসাইটির ব্যানার কাজে লাগিয়ে কপিরাইট সুরক্ষার নামে তিনি নিজের স্বার্থ হাসিলে একের পর এক অপকর্মের মাধ্যমে এই শিল্পখাতে গভীর অস্থিরতা তৈরি করে চলেছেন।

তিনি ওলোরা আফরিনের বিরুদ্ধে বামবার শিল্পী ও এর সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গকে ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানিরও অভিযোগ তুলেন। তিনি বলেন, ‘কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের নীতিমালায় সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা আছে, কপিরাইট নিয়ে কোনো জটিলতা হলে প্রথমে কপিরাইট অফিসের সহায়তায় পারস্পরিক আলাপ ও সালিশির মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে বিষয়টি সুরাহা করার। অথচ এসব বিধির কোনো তোয়াক্কাই করছেন না তিনি। নিজের মর্জিমতো লেবেল কোম্পানি ও প্রযোজকদের কাছে নোটিশ পাঠাচ্ছেন। ওলোরা সম্প্রতি বামবার মিউজিশিয়ানদের বিরুদ্ধে তার অপতৎপরতা শুরু করেছেন। তার ‘অবৈধ, অনৈতিক ও অস্বাস্থ্যকর’ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কাইনেটিক নেটওয়ার্কের জুয়েল, জামশেদ, নাফিস ও সানজিকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। জুয়েল একজন গীতিকার ও কন্ঠশিল্পী এবং জামশেদ দেশের খ্যাতিমান রক ব্যান্ড পাওয়ারসার্জের শিল্পী এবং বামবার সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তিনি এ বিষয়ে বামবার সাথে কোনো আলোচনার প্রয়োজন অনুভব করেননি। উল্টো থানায় প্রভাব খাটিয়ে হয়রানিমূলক মামলা করিয়ে তাদের জেলে পর্যন্ত পাঠিয়েছেন। এটি সদাচার ও ভব্যতার চরম লঙ্ঘন। আমরা এসব ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি শিল্পীদের অধিকার ও মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সুষ্ঠু পরিবেশ সুরক্ষায় সরকারের সক্রিয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। একইসাথে ওলেরার এ ধরনের হয়রানিমূলক অপতৎপরতা বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

এমআইবি প্রেসিডেন্ট এ কে এম আরিফুর রহমান বলেন, ‘অভিযুক্ত ওলোরা আফরিন সিনেমাটোগ্রাফির জন্য জন্য সোসাইটির অনুমোদন নিয়েছেন অথচ ওই সোসাইটিতে এদেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তিই নেই। এখন ওই ব্যানার ব্যবহার করেই তিনি বিভিন্ন মিউজিক প্রোডিউসার, সার্ভিস প্রোভাইডার এবং প্রোডাকশান হাউসের মাথার ওপর ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। ঢালাওভাবে সবাইকে তার কথামতো চলার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। তার প্রস্তাবে রাজি না হলে মিউজিক লেবেল কোম্পানি এবং সার্ভিস প্রোভাইডারদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি, লিগ্যাল নোটিস ও মামলা দিয়ে চরম হয়রানি করে চলেছেন। আমরা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মিউজিশিয়ানদেও স্বার্থ সুরক্ষার ধোঁয়া তুলে তিনি এখন মিউজিশিয়ানদেরই উল্টো জেল খাটাচ্ছেন। কাইনেটিক সার্ভিস প্রোভাইডার আমাদের ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন মিউজিক প্রতিষ্ঠান, শিল্পী, সুরকার ও গীতিকারকে গত প্রায় অর্ধযুগের বেশি সময় ধরে ইউটিউবের টেকনিক্যাল সার্ভিস দিয়ে আসছেন। এখন সেই কোম্পানির বিরুদ্ধেই মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন তিনি। আমরা এই কুচক্রী মহলকে ধিক্কার জানাই এবং এর খপ্পর থেকে নিরাপদে থাকার জন্য মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিএফপিডিএ সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু এ ধরনের ‘উড়ে-এসে-জুড়ে-বসা’ কতিপয় ব্যক্তিবর্গের ‘অপতৎপরতায়’ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, তারা একটি সিনেমাটোগ্রাফিক সোসাইটির অনুমোদন নিয়েছেন যেখানে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র মাধ্যমের সাথে জড়িত কারো সংশ্লিষ্টতা নেই। কীভাবে তিনি এমন একটি অনুমোদন পেলেন তা খতিয়ে দেখা দরকার। এর অর্থ ঝোপ বুঝে কোপ মারার ‘আদর্শে অনুপ্রাণিত’ এক নব্য ডাকাত গোষ্ঠীর আনাগোনা দেখতে পাচ্ছি আমরা চারপাশে। এ বিষয়ে অবিলম্বে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক এর সঠিক ব্যাখ্যা দাবি করছি। দেশের শীর্ষ অভিনেতা ও প্রযোজক শাকিব খান ওলেরার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে জানান, ওই আইনজীবী কিছুকাল আগে তার চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত একটি গান কেন্দ্র করে বড় ধরনের আইনি জাল ফেলার চেষ্টা চালান। কিন্তু তিনি দ্রুত মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় ওই জটিলতা নিরসন করেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, চলচ্চিত্রের সাথে আদৌ সংশ্লিষ্ট নয়, এমন ব্যক্তি কীভাবে এ জাতীয় একটি সিনেমাটোগ্রাফি সোসাইটির অনুমোদন পেলেন।

অনুপম রেকর্ডিংয়ের কর্ণধার মো আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি সুদীর্ঘ ৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা চলচ্চিত্র এবং চলচ্চিত্রের গান নিয়ে সুনামের সাথে কাজ করে আসছি। এর আগে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিকে আমার কোম্পানির একজন আইনি পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দান করি। তিনি ‘ওলোরা আশফাক এন্ড অ্যাসোসিয়েটস’ নামে আমার সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। দুঃখের বিষয়, আমার আইনি পরামর্শক থাকা অবস্থাতেই তিনি আমারই ইউটিউব চ্যানেলের একটি বাণিজ্যক সত্ত্বাধীন গানকে ‘বেআইনি’ হিসেবে অভিযুক্ত করে কাইনেটিক নেটওয়ার্কের কাছে ৫০ লাখ টাকার একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। অথচ কাইনেটিক আমারই ইউটিউব চ্যানেলের কমিশন ভিত্তিক সার্ভিস প্রোভাইডার মাত্র। তাকে নোটিস দেয়া মানে তো প্রকারান্তরে আমাকেই নোটিস পাঠানো। আমারই আইনি পরামর্শক থাকা অবস্থায় কীভাবে তিনি এই কাজ করলেন আমার তা বোধগম্য নয়। এটি তার পেশাগত সতততার লঙ্ঘন এবং নীতিভ্রষ্টতার বহিঃপ্রকাশ। এ বিষয়ে আমি সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।’

সবশেষে প্রশ্নোত্তর সেশনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বামবা, এমআইবি ও বিএফপিডিএ নেতারা। জুম মাধ্যমে লাইভ হওয়া ওই কনফারেন্সে দেশের বাইরে থেকেও বহু   শিল্পী ও ব্যক্তিবর্গ যোগ দেন। এতে দেশের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা ছাড়াও সঙ্গীতভুবনের তারকা, চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, মিউজিক ডিরেক্টর ও এ শিল্পের অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন। গোটা আয়োজনে সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন শ্রাবণ্য তৌহিদা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন