সিএমএস উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক হতে পারে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম: বিল্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

কুটির, মাইক্রো ক্ষুদ্র (সিএমএস) উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থায়ন প্রক্রিয়াকে সহজ করতে প্রথমবারের মতো ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম (সিজিএস) চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট (এসএমইএসপিডি) গত ২৭ জুলাই -সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বেসরকারি খাতের থিংকট্যাংক বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, উদ্যোগ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে কভিড-১৯ মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সিএমএস উদ্যোক্তারা কিছুটা হলেও সুরক্ষা পাবেন।

সিএমএসএমইদের জন্য একটি ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালুর বিষয়ে বিভিন্ন প্লাটফর্মে দাবি জানিয়ে আসছিল বিল্ড। গত ২৩ জুন অনুষ্ঠিত একটি ভার্চুয়াল ডায়ালগেও বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটি। ওই অনুষ্ঠানে এসএমই খাতের প্রবৃদ্ধির জন্য অনানুষ্ঠানিক খাতকে আনুষ্ঠানিক খাতে রূপান্তরের বিষয়েও গুরুত্ব দেয়া হয়।

ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম ব্যাংক বা ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) ঋণঝুঁকি প্রশমনে থার্ড পার্টি হিসেবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে স্কিমটি সিএমএস উদ্যোক্তাদের বিতরণকৃত ঋণ থেকে উদ্ভূত লোকসানের একটি অংশ বহন করবে। সিএমএস উদ্যোক্তাদের জন্য কোল্যাটারালের পরিবর্তে ব্যবহূত হবে এই ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম। অনেকদিন ধরেই কোল্যাটারাল-সংক্রান্ত সমস্যার মধ্যে ছিলেন সিএমএস উদ্যোক্তারা। প্রাথমিকভাবে স্কিম সুবিধাটি ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য প্রযোজ্য হবে। সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদানে কোল্যাটারালমুক্ত চলতি মূলধন ঋণ বিতরণ করা হবে।

বিল্ড বলছে, ব্যাংকের সব ধরনের ঋণে শতাংশ সুদহার সীমার কারণে বেশির ভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংকই প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ প্রদানে অনাগ্রহ প্রদর্শন করেছে। বিশেষ করে উচ্চ পরিচালন ব্যয়ের কারণে সিএমএসএমই খাতে ঋণ প্রদানে প্রবল অনিচ্ছা জ্ঞাপন করে আসছিল ব্যাংকগুলো। ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় প্রত্যেক ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য সিএমএস খাতে চলতি মূলধন ঋণ বা বিনিয়োগের জন্য নির্ধারিত পোর্টফোলিও সীমার সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত পোর্টফোলিও গ্যারান্টি ক্যাপ প্রদান করা হবে। পোর্টফোলিও গ্যারান্টি ক্যাপের আওতায় কোনো একক উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত গ্যারান্টি কাভারেজ প্রদান করা হবে। সুতরাং চুক্তি অনুযায়ী, কোনো ঋণগ্রহীতা তার ঋণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংকগুলো ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম থেকে তহবিল পাবে। ফলে ব্যাংকগুলো এখন প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে চলতি মূলধন ঋণ বিতরণে আগ্রহী হবে।

সিএমএসএমই ঋণের ৩০ শতাংশ পোর্টফোলিওর আওতায়, ম্যানুফ্যাকচারিং সেবা খাতের জন্য ৭০ শতাংশ এবং বাকি ৩০ শতাংশ ট্রেডিং খাতের জন্য বরাদ্দ থাকবে। বিল্ড মনে করে, সীমা ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম বাস্তবায়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কারণ সিএমএসএমইদের একটি বড় অংশ ট্রেডিং খাতে ব্যবসা পরিচালনা করছে। অন্যদিকে সিএমএসএমই মাস্টার সার্কুলারে উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সাতটি খাত, অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ২৪টি খাত ৩২টি সেবা শিল্পকে শনাক্ত করা হলেও ট্রেডিং খাতকে শনাক্ত করা হয়নি।

ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের ব্যয় হবে ঋণের শতাংশ, যা তহবিলের ব্যয়কে বাড়িয়ে দিতে পারে। বিল্ডের মতে, এটি ব্যাংক সিএমএস উদ্যোক্তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা ঋণ বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো গ্যারান্টি সুবিধা পাবে (মাস্টার সার্কুলারে উল্লেখিত সিএমএস সীমা এক্ষেত্রে বিবেচ্য হবে নয়) চলতি ঋণ বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক বছরের গ্যারান্টি প্রদান করা হবে। তবে গ্যারান্টির সময়সীমা নবায়ন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিজিএস ইউনিট থেকে সময়সীমা বাড়িয়ে নিতে হবে। ব্যাংক অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সিজিএস ইউনিটের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছরের অংশগ্রহণ চুক্তিতে যেতে হবে।

ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রথমত গ্যারান্টি ফি প্রদান করতে হবে। স্কিমে অংশগ্রহণকারী ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পোর্টফোলিও সীমার আওতায় আবেদনকৃত ঋণের ওপর শতাংশ হারে গ্যারান্টি ফি পরিশোধ করতে হবে। গ্যারান্টি চলমান থাকা সাপেক্ষে এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে অব্যবহিত পূর্ববর্তী দিনের গ্যারান্টিলব্ধ ঋণ স্থিতির ওপর বার্ষিক ভিত্তিতে গ্যারান্টি ফি পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে যেসব ব্যাংকের অব্যবহিত পূর্ববর্তী বছরের ৩১ ডিসেম্বরভিত্তিক শ্রেণীকৃত ঋণ বা বিনিয়োগের হার শতাংশ বা এর কম, তাদের জন্য বার্ষিক দশমিক শতাংশ হারে এবং যেসব ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণ বা বিনিয়োগের হার শতাংশের বেশি, তাদের জন্য বার্ষিক দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে গ্যারান্টি ফি প্রদান করতে হবে।

বিল্ড বলছে, যেহেতু ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ নতুন একটি বিষয়, তাই স্কিমের যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংক এনবিএফআইগুলোয় ব্যাপক প্রশিক্ষণ প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ভারতে গ্যারান্টি ফি শতাংশ হলেও মালয়েশিয়ায় কোনো গ্যারান্টি ফি নেই। তবে এসব দেশে সময়সীমা একই, অর্থাৎ পাঁচ বছর।

বিল্ড আশা করছে, ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমটি সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকা চলতি মূলধন ঋণ বিতরণের প্রক্রিয়াকে সুগম করবে। উদ্যোগের ফলে সিএমএস উদ্যোক্তাদের মধ্যে অর্থায়নপ্রাপ্তির প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে কভিড-১৯-এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের মধ্যে উদ্দীপনা ফিরে আসবে। তবে স্কিম বাস্তবায়নের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন