দেশে কমেছে সয়াবিন তেল আমদানি বেড়েছে পাম অয়েল

এ. কে. এম. ফখরুল ইসলাম

চলতি বছরের শুরু থেকে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্ববাণিজ্যে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি করে। স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। গতি হারায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। মহামারীর কারণে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি কার্যক্রমও ব্যাহত হয়। তবে দেশে ভোজ্যতেল আমদানিতে করোনা মহামারীর প্রভাব দেখা যায়নি। বরং বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) দেশের বাজারে পাম অয়েল, সয়াবিন তেলসহ সব ধরনের ভোজ্যতেল চর্বি আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় শতাংশ বেড়েছে। যদিও সময় বাংলাদেশে সয়াবিন তেল আমদানি আগের তুলনায় কমে এসেছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে এর বিপরীতে বেড়েছে পাম অয়েল আমদানি।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে দেশের বাজারে সব মিলিয়ে ১৬ লাখ হাজার ২৪৩ টন ভোজ্যতেল চর্বি আমদানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশের বাজারে সব মিলিয়ে ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৪০৩ টন ভোজ্যতেল চর্বি আমদানি হয়েছিল। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দেশীয় আমদানিকারকরা ভোজ্যতেল চর্বি আমদানি বাড়িয়েছেন ৭৩ হাজার ৮৪০ টন।

আমদানি করা এসব ভোজ্যতেল চর্বির মধ্যে প্রধান তিনটি পণ্য সয়াবিন তেল, পাম অয়েল এবং ক্যানোলা বা সরিষা তেল। গত ছয় মাসে দেশের বাজারে মোট ভোজ্যতেল আমদানির ৮৩ শতাংশ ছিল তিনটির দখলে। এছাড়া একই সময়ে দেশে সয়াবিন বীজ, পাম স্টিয়ারিন, পাম কার্নেল অয়েল, নারকেল তেল, সানফ্লাওয়ার অয়েল, বাটার অয়েল, পাম চর্বি বোতলজাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। জানুয়ারি-জুন সময়ে দেশের আমদানি বাজারে এসব আইটেমের সম্মিলিত বাজার হিস্যা ছিল বাকি ১৭ শতাংশ।

তবে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, চলতি বছরের শুরুর ছয় মাসে দেশে সয়াবিন তেল আমদানি আগের তুলনায় কমে এসেছে। এর বিপরীতে বেড়েছে পাম অয়েল আমদানি। ২০১৯ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে দেশে মোট লাখ ৫৭ হাজার ৩২৫ টন সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছিল। চলতি বছরের একই সময়ে ভোজ্যতেলটির আমদানির পরিমাণ ১২ দশমিক ৩৮ শতাংশ কমে লাখ ৮৮ হাজার ৩০১ টনে নেমে এসেছে। একই সময়ে দেশে পাম অয়েল আমদানি হয়েছে লাখ ৪৬ হাজার ২৮০ টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে দেশে মোট লাখ ৯১ হাজার ৯০৫ টন পাম অয়েল আমদানি হয়েছিল। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে দেশে সয়াবিন তেল আমদানি ৬৯ হাজার ২৪ টন কমলেও পাম অয়েল আমদানি বেড়েছে ৫৪ হাজার ৩৭৫ টন।

এদিকে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশের বাজারে সরিষা তেল আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৩ হাজার ২৬৬ টন বেড়ে ৯৪ হাজার ৯৯১ টনে উন্নীত হয়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে দেশে মোট ৩১ হাজার ৭২৫ টন সরিষা তেল আমদানি হয়েছিল। সময় দেশে অন্যান্য ভোজ্যতেলের সম্মিলিত আমদানি দাঁড়িয়েছিল লাখ ৪৯ হাজার ৪৪৮ টনে। গত ছয় মাসে তা ১০ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়ে লাখ ৭৪ হাজার ৬৭১ টনে উন্নীত হয়েছে।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে সয়াবিন তেল আমদানি কমার অন্যতম কারণ স্থানীয়ভাবে সয়াবিন মাড়াই বেড়ে যাওয়া। ফলে পরিশোধিত তেল আমদানির বদলে সয়াবিন আমদানি বাড়িয়েছেন আমদানিকারকরা। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়ভাবে তা মাড়াই করে তেল উৎপাদন করা হয়েছে। জানুয়ারি-জুন সময়ে দেশে সয়াবিন বীজ আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেড়ে ১৩ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। তা থেকে লাখ ৩০ হাজার টন পরিশোধিত সয়াবিন তেল পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালের একই সময়ে স্থানীয়ভাবে মাড়াইয়ের জন্য ১১ লাখ টন সয়াবিন আমদানি হয়েছিল।

গত জানুয়ারি-জুন সময়ে দেশীয় আমদানিকারকরা দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো থেকে সয়াবিন তেল আমদানি করেছেন। অন্যদিকে সয়াবিন আমদানি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো থেকে। দেশের বাজারে প্যাকেটজাত ভোজ্যতেলের ৩৫-৪০ শতাংশ হিস্যা থাকে সয়াবিন তেলের দখলে। আর পাম অয়েলের বাজার হিস্যা ৫৩-৫৫ শতাংশ। ২০০৩ সালের পর থেকে দেশে পাম অয়েলের ব্যবহার আমদানি দুটোই বাড়তির দিকে রয়েছে। আমদানি করা পাম অয়েলের সিংহভাগ আসে মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া থেকে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে তুলনামূলক সস্তায় কিনতে পারায় বর্তমানে দেশীয় আমদানিকারকরা ইন্দোনেশিয়ার তুলনায় মালয়েশিয়া থেকে পাম অয়েল আমদানিতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। মালয়েশিয়া সরকার পাম অয়েলের শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা দিচ্ছে। সুবিধা দেশের বাজারে আমদানি করা ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে মালয়েশীয় পাম অয়েলকে এগিয়ে রেখেছে।

লেখক: রিজিওনাল ম্যানেজার (বাংলাদেশ নেপাল), মালয়েশিয়ান পাম অয়েল কাউন্সিল (এমপিওসি)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন