যশোরের ৮০ শতাংশ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানই অনুমোদনহীন

আবদুল কাদের যশোর

যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় মুন হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দুটি শাখা ছিল। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আব্দুল হাই চিকিৎসক পরিচয়ে রোগীর চিকিৎসাসেবা, অস্ত্রোপচারে অংশ নেয়াসহ সব কার্যক্রম নিজেই পরিচালনা করে আসছিলেন। যদিও ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলা চিকিৎসাসেবা দেয়ার অনুমতি ছিল না তার। বিষয়টি জানতে পেরে মুন হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে স্বাস্থ্য বিভাগ। বিভিন্ন অনিয়ম অব্যবস্থাপনা চোখে পড়ায় দুটি শাখাই সিলগালা করা হয়। ভুয়া চিকিৎসক আব্দুল হাইয়ের প্রতারণার বিষয়ে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে।

শুধু মুন হাসপাতাল নয়, যশোর জেলায় মোট ২৬২টি হাসপাতাল ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক রয়েছে। এর মধ্যে ২১১টিই অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে, যা শতাংশের হিসেবে ৮০ দশমিক ৫৩। এর মধ্যে ১০৫টির লাইসেন্স নেই। ১০৬টির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অনলাইনে আবেদন করেই কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে এসব প্রতিষ্ঠান। হালনাগাদ লাইসেন্স রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫১।

শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের সততা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সম্প্রতি বুকের এক্স-রে ইসিজি করতে যান ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামের শুকুর আলী। পরে তিনি যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক তার পরীক্ষার এক্স-রে ইসিজি গ্রহণ করেননি ত্রুটির কারণে। অনুমোদনহীন সব ক্লিনিকে একই অবস্থা বিরাজ করছে।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযানে আটটি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ জুলাই যশোর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের সততা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আধুনিক হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক কার্যক্রম, মণিরামপুর উপজেলার মুন হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (হাসপাতাল মোড় শাখা), নিউ প্রগতি হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার মুন হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (কুয়াদা শাখা) ২৬ জুলাই খাজুরার মাতৃভাষা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ২১ জুলাই বসুন্দিয়ার মহুয়া ক্লিনিক সিলগালা করা হয়। আধুনিক হাসপাতাল ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেবিকা টেকনোলজিস্ট নেই। অবৈধভাবে সেখানে অপচিকিৎসা চলছিল।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, জেলায় মোট ২৬২টি ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকের মধ্যে যশোর শহর সদর উপজেলায় রয়েছে ৬৮টি, যার অর্ধেকের বেশি বর্তমান সময়ে অবৈধভাবে চলছে। তারা এখনো হালনাগাদ লাইসেন্স পায়নি। এছাড়া সাতটি নতুন প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে মালিকপক্ষ। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে বিভিন্ন উপজেলায় অবিস্থত হাসপাতাল ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সরকারের অনুমোদন না নিয়ে খুলে বসা এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসার নামে চলছে ব্যবসা। তাদের ফাঁদে পড়ে অনেক রোগীই হয়রানি শিকার হচ্ছেন। সাইনবোর্ড সর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মনীতির বালাই নেই, হাতুড়ে টেকনিশিয়ান দিয়েই চালানো হয় রোগ নির্ণয়ের যাবতীয় পরীক্ষা এবং দেয়া হয় মনগড়া রিপোর্ট। অপারেশনের জন্য ভাড়া করে আনা হয় চিকিৎসক। অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে।

সিভিল সার্জন জানান, প্রতিষ্ঠান মালিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন। কিন্তু এসব আবেদন সব ত্রুটিপূর্ণ। যে কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শনের জন্য কোনো চিঠি আসেনি। সরকারি অনুমোদনের প্রয়োজন মনে না করেই হাসপাতাল ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে বসেছে।

তিনি বলেন, লাইসেন্স না হলে কোনো প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়া হবে না। ২০১৭ সাল পর্যন্ত যাবতীয় রাজস্ব পরিশোধ করে যেসব হাসপাতাল ক্লিনিক যথাযথ অনুমোদন হালনাগাদ আছে, কেবল সেইসব প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম পরিচালনা করার আপাতত সুযোগ দেয়া হচ্ছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন