ঝড়ের মতো না, কভিড-১৯ এসেছে দাবানলের মতো

আইলিন উডওয়ার্ড

বসন্তের সময় মার্কিন বিশেষজ্ঞরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মহামারীর ভবিষ্যৎ কেমন হবে সেই ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য। অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছিলেন করোনাভাইরাস অনেকটা মৌসুমি ফ্লুর মতো হবে। দ্বিতীয় ঝড়ের তীব্রতা নিয়ে আসার আগে গ্রীষ্মে এর ব্যাপ্তি কিছুটা কমে আসবে। কিন্তু এপিডেমিওলজিস্টরা এখন সেসব ধারণা বর্জন করেছেন।

এপিডেমিওলজিস্ট মিকেইল অস্ট্রেহোলম বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন, এখনো করোনা সংক্রমণের কেস কমার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এটা কেবল আগুনে পুড়ে গরম হওয়ার মতো। অনেকটা বনের মধ্যে দাবানল লেগে যাওয়ার মতো করে মানুষ মরছে।

এপ্রিলে একটি রিপোর্ট লেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিলেন অস্ট্রেহোলম। যেখানে শরত্কালে দ্বিতীয় ঝড় কেমন হতে পারে, তার রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছিল। সেখানে তিনি সম্ভাব্য তিনটি দৃশ্যের কথা তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু এখন ধারণা বদলে গেছে তার। তিনি বলেন, কিন্তু আমরা এখানে কোনো ঝড় দেখছি না।

অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিসের মতে, এই মহামারী সম্ভবত একটি বড় ঝড় হিসেবে আসতে যাচ্ছে।

ভিন্ন ভিন্ন স্থানে সময়ে মহামারীর তীব্রতাও ভিন্ন হবে

অস্ট্রেহোলম  মিনেসোটাতে সিআইডিআরএপিতে ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন। এপ্রিলে তার দল দ্বিতীয় ঝড়ের যে দৃশ্যের কথা বর্ণনা করছিল তার ভিত্তি ছিল ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ইনফ্লুয়েঞ্জা ২০০৯ সালের এইচ১এন১ ফ্লু মহামারী।

রিপোর্টে দেখানো আরেকটি চিত্র বলছিল যে কভিড-১৯-এর প্রথম ঝড়ের সংক্রমণ সম্ভবত একটি সাইকেল অনুসরণ করে ঘটবে, যেখানে গ্রীষ্ম এবং তার পরও এর তীব্রতায় কিছুটা ওঠানামা থাকবে। তৃতীয় দৃশ্যটির সঙ্গে জড়িত ছিল সংক্রমণের ধীরে  প্রজ্বলন পদ্ধতি এবং নতুন কেসের সংখ্যা বসন্তে গিয়ে চূড়া স্পর্শ করবে। কিন্তু বাস্তবতা এই দৃশ্যগুলোর কোনোটাকেই সমর্থন করছে না।

অস্ট্রেহোলম বলেন, এপ্রিলে আমরা তাকিয়ে ছিলাম এটাই কি মহামারীর সেই অবস্থা কিনা, যখন আমরা সত্যিকারের ঝড় দেখব। যেখানে কিনা আমরা বাড়তি সংক্রমণ দেখতে পাব এবং এরপর একটু থেমে দ্বিতীয় ঝড়ের মুখোমুখি হব। ঐতিহাসিকভাবে যেমনটা অন্যান্য ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর সময় ঘটেছিল।

পরিবর্তে তিনি যোগ করে বলেন, মহামারী অনেকটাই এককালীন কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি দাবানলের মতো। সে অর্থে আমরা এখন দ্রুত জ্বলন্ত পরিস্থিতির মাঝামাঝি অবস্থায় আছি, যেখানে ভিন্ন স্থান সময়ে মহামারীর তীব্রতাও ভিন্ন।

এখন পর্যন্ত মহামারী মৌসুমি না

শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস অনেক মৌসুমি ফ্লুর মতো, কারণ ঠাণ্ডা তাপমাত্রা একটি জেলজাতীয় প্রতিরক্ষামূলক প্রলেপকে শক্ত করে তোলে, যা কিনা ভাইরাসকে ঘিরে রাখে। একটি শক্তিশালী খোলস নিশ্চিত করে যে এটি একজন ব্যক্তির কাছে অন্য ব্যক্তির কাছে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে। যেখানে উষ্ণ তাপমাত্রায় খোলসটি দ্রুত শুকিয়ে যেতে পারে।

ফ্লুর মতো নতুন করোনাভাইরাসটি ছড়িয়ে যেতে পারে ড্রপলেটের মধ্য দিয়ে, যা মানুষ নির্গত করে হাঁচি-কাশি কিংবা কথা  বলার মাধ্যমে। এমনকি যখন সংক্রমণের কোনো ধরনের লক্ষণ থাকে না তখনো সে এটি ছড়িয়ে দিতে পারে।

এই মিলগুলো শুরুর দিকে করোনাভাইরাসকে অতীতের মহামারীর সঙ্গে তুলনার জন্য উপযুক্ত করে তুলেছিল। বিশেষ করে ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু, যা কিনা সংক্রমিত করে ৫০০ মিলিয়ন মানুষকে। কিন্তু করোনাভাইরাস তার সমগোত্রীয় মৌসুমি ফ্লুগুলোর মতো নয়।

যদিও মানুষ এখনো মৌসুম নিয়ে চিন্তা করছে। মার্গারেট হ্যারিস বলেন, আমাদের যা মাথায় রাখা উচিত তা হলো এটি একটি নতুন ভাইরাস। তিনি আরো বলেন, যদিও এটা শ্বসনতন্ত্রের ভাইরাস এবং অতীতে এটি মৌসুমি ঝড় হিসেবে এসেছিল কিন্তু এবারের ভাইরাসটির আচরণ একেবারেই ভিন্ন।

মৌসুম কেন করোনাভাইরাসের ওপর প্রভাব ফেলছে না তার কিছু কারণ আছে। প্রিন্সটন এনভায়রনমেন্টাল ইনস্টিটিউটের গবেষক র্যাচেল বেকারের মতে, মহামারীর শুরুর দিকে একটি নতুন ভাইরাস জনগণের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে, যা কিনা এর আগে কখনো ছিল না। কারণে জনগণের মাঝে ইমিউনিটিও কম ছিল, যা কিনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার মূল চালিকশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। এমন সময় আবহাওয়া ভাইরাসটির জন্য বড় কোনো বাধা হয়ে সামনে আসতে পারে না।

তার সাম্প্রতিক গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে মে মাসে, যেখানে দেখানো হয়েছে উষ্ণ আবহাওয়া কেবল তখনই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়াকে আটকাতে পারে যখন জনগণের বড় একটি অংশ ইমিউন বা সংক্রমণ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে।

তবে বেকার মনে করেন, এটা সম্ভব যে ভ্যাকসিন আবিষ্কার বিতরণের পর করোনাভাইরাস শীতের মাসগুলোতে শীর্ষ বিন্দুতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে একটি ক্ল্যাসিক্যাল মৌসুমি প্যাটার্নে স্থির হতে পারে।

সায়েন্স অ্যালার্ট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন