টানা নয়দিন পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থানে

বাজার মূলধন বেড়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার বছর খানেক আগে থেকেই টালমাটাল অবস্থায় ছিল পুঁজিবাজার। ক্রমাগত সূচকের পতনে নাভিশ্বাস চরমে ওঠে বিনিয়োগকারীদের। খাদের কিনারে থাকা বিনিয়োগকারীরা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আরো আতঙ্কিত হয়ে উঠলে ভয়াবহ রূপ নেয় পুঁজিবাজারের পতন। দরপতন ঠেকাতে শেষ পর্যন্ত শেয়ারের দর একটি নির্দিষ্ট সীমার নিচে যাতে নামতে না পারে সেজন্য ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দিতে বাধ্য হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। করোনার কারণে সাধারণ ছুটিকালীন ৬৫ দিন বন্ধও ছিল পুঁজিবাজার। ৩১ মে থেকে লেনদেন শুরুর পর ফ্লোর প্রাইসের প্রভাবে প্রাণহীন অবস্থায় চলছিল পুঁজিবাজার। অবশ্য শেষ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে আবারো গতি ফিরে আসতে শুরু করেছে। টানা নয় কার্যদিবস ধরে পুঁজিবাজারের সূচকে ধারাবাহিক উত্থান হয়েছে। সময়ে বাজার মূলধন বেড়েছে ১৪ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। পাশাপাশি সময় লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ৩১ মে লেনদেন শুরুর পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেশের সার্বিক অর্থনীতি, তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক ব্যবসায়িক পারফরম্যান্স কী হবে সেটি নিয়ে শঙ্কা ছিল। তাছাড়া বরাবরই জুনে বাজেটকে ঘিরে পুঁজিবাজার কিছুটা ম্রিয়মাণ থাকে। আর সর্বোপরি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার কারণে বিনিয়োগকারীরাও আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। এসব মিলিয়েই প্রাণহীনভাবে চলছিল পুঁজিবাজার। তবে বাজেটের পর থেকেই ধীরে ধীরে বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। সর্বশেষ চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি পোশাক রফতানিতে ইতিবাচক প্রবণতার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে। তাছাড়া কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভীতি ধীরে ধীরে কাটছে। সংক্রমণ পরিস্থিতির আরো উন্নতি হলে সামনে হয়তো আগের মতোই অর্থনীতি আবার সচল হয়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা করছেন বিনিয়োগকারীরা। সার্বিকভাবে এসব কারণে বর্তমানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে এবং এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে সূচক লেনদেনে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল ডিএসইএক্স পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৩০৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা এর আগের দিন ছিল হাজার ২৯৯ পয়েন্টে। ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল পয়েন্ট কমে দিন শেষে ৯৯৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের দিন ছিল হাজার পয়েন্টে। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে প্রায় পয়েন্ট কমে গতকাল হাজার ৪৫২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ৪৫৫ পয়েন্টে।

গতকাল ডিএসইতে মোট ৭১৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৬৭৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৫২টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ১৫৫টির, কমেছে ১২৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৭৪টি সিকিউরিটিজের বাজারদর। 

খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের প্রায় ২৯ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে সাধারণ বীমা খাত। ১৬ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ওষুধ খাত। তৃতীয় সর্বোচ্চ শতাংশ দখলে নিয়েছে প্রকৌশল খাত। বস্ত্র খাতের দখলে ছিল প্রায় শতাংশ।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো লিমিটেড, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড।

দর বাড়ার শীর্ষ কোম্পানির তালিকায় ছিল বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম ফিন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড এসইএমএল লেকচার ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড।

অন্যদিকে গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে দর পতনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে সমতা লেদার, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, রিজেন্ট টেক্সটাইল, এএফসি এগ্রো, রানার অটোমোবাইল, নাহি অ্যালুমিনিয়াম, এভিন্স টেক্সটাইল, এডিএন টেলিকম, খুলনা পাওয়ার কনফিডেন্স সিমেন্ট লিমিটেড।

দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল সিএসসিএক্স সূচক দিনের ব্যবধানে ২৬ পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৪১১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল হাজার ৩৮৫ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ২৬৪টি কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১১৩টির, কমেছে ৯০টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৬১টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে মোট ১৭ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন