কভিড-১৯

শনাক্তের সংখ্যায় ইতালিকে ছুঁতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হয় মার্চ, যে সময় ইতালিতে কভিড পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। শনাক্তের সংখ্যায় এখন ইতালিকেই ছোঁয়ার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। সংক্রমণ শনাক্তের তালিকায় বেশ কিছুদিন ধরে ইতালির পরে বাংলাদেশের অবস্থান। তালিকার ১৫তম স্থানে রয়েছে ইতালি। আর বাংলাদেশের অবস্থান ১৬তম।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস রিসোর্স সেন্টারের তথ্য আনুযায়ী, ইতালিতে সংক্রমিত মোট রোগীর সংখ্যা লাখ ৪৮ হাজার ৪১৯। এদিকে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৪ জন। সংক্রমণের দিক থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে মাত্র হাজার ৭৪৫ জনে। বাংলাদেশে প্রতিদিন যেভাবে সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে তাতে আজকালের মধ্যে ইতালিকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।

জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, সংক্রমণে বাংলাদেশ ইতালির অবস্থান কাছাকাছি হলেও এই দুটি দেশের মধ্যে মৃত্যুসংখ্যায় পার্থক্য অনেক বেশি। ইতালিতে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে মোট ৩৫ হাজার ১৭১ জনের। সেখানে বাংলাদেশে সংখ্যাটি হাজার ২৬৭। প্রায় সমানসংখ্যক সংক্রমণে ইতালি থেকে বাংলাদেশে ৩০ হাজার ৯০৪ জনের কম মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া হিসাব বলছে, সর্বশেষ দিনে আরো হাজার ৬৫৪ জন কভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৩ জন। গতকাল বেলা আড়াইটায় কভিড-১৯ সম্পর্কিত নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।

তিনি জানান, করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য সর্বশেষ দিনে নমুনা সংগ্রহ করা হয় ১১ হাজার ৯৬৪টি, নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১১ হাজার ১৬০টি। এবং এখন পর্যন্ত ১২ লাখ ১২ হাজার ৪১৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সুস্থ লাখ ৪১ হাজার ৭৫০ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার দশমিক ৩২ শতাংশ।

সর্বশেষ দিনে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ এবং আটজন নারী। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ হাজার ৫৭৪ এবং নারী ৬৯৩ জন। তাদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে দুজন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে একজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ছয়জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে আটজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে চারজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে দুজন।

পরিসংখ্যান বলছে, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে নয়জন, খুলনা বিভাগে একজন, রাজশাহী বিভাগে একজন, রংপুর বিভাগে তিনজন বরিশাল বিভাগে একজন। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩১ জন এবং দুজন বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেছেন।

অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৭৫৮ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছে ১৮ হাজার ৪৫৫ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছে ৭৯৪ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছে ৩৪ হাজার ৯৫০ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৪০৫ জনকে।

প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টিন মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে হাজার ৮৪৭ জনকে। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে লাখ ৪৩ হাজার ৬৭৯ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছে হাজার ৬১৩ জন। এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছে লাখ ৯০ হাজার ৩২৯ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছে ৫৩ হাজার ৩৫০ জন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত মার্চ। সেদিন তিনজন আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ওই মাসের ১৮ তারিখে কভিড-১৯- প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যু হয়। এরপর প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত হতে চললেও সংক্রমণ মৃত্যু এখনো সেভাবে কমছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন