কভিড-১৯-এর জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত কোনো চিকিৎসা এখনো নেই। ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়া চলছে, যা এখন ট্রায়ালের পর্যায়ে। কিন্তু গত আট মাসে বিশ্বজুড়ে যে গুঞ্জনধ্বনি সবার মনোযোগ পেয়েছে তা হলো ‘ইমিউনিটি সিস্টেম’। কভিডে আক্রান্ত মানুষের সেরে ওঠা বহুলাংশেই নির্ভর করে শরীরের সহজাত সুরক্ষা ব্যবস্থা ইমিউন সিস্টেমের ওপর।
কিন্তু এই ইমিউন সিস্টেমের শক্তি বাড়াতে মানুষের চেষ্টার যেন কোনো শেষ নেই। ইমিউনিটি বুস্টার হিসেবে আয়ুর্বেদিক মিশ্রণ, ফলের জুস, ভিটামিন পিল, জিংক ট্যাবলেট—লকডাউনের মধ্যেও বাজারে এসব পণ্যে সয়লাব। এগুলো মানুষের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে বলে গল্প সাজানো হয়, আর মানুষজন তাতে বিশ্বাস করে দেদার সেগুলো কিনতে থাকে।
বিজ্ঞাপনের বার্তায় বলা হয়, নির্দিষ্ট পণ্য ব্যবহারে কিংবা খাবার খেলে তা শরীরের সহজাত সুরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। কিন্তু এসব পণ্য কি সত্যিই আপনাকে কভিড-১৯ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে? কিংবা নির্দিষ্ট ডায়েটারি সাপ্লিমেন্টই কি আপনার ইমিউনিটি বাড়াতে পারে?
বিজ্ঞান যা বলছে
ইমিউন সিস্টেম কি শক্তিশালী করা যায়?
সংক্ষেপে উত্তরটা হলো ‘না’। বিশেষজ্ঞ ইমিউনোলজিস্টরা বলছেন, খাদ্য কিংবা অন্য সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্কদের ইমিউনিটি বাড়ানোর কোনো উপায়ই নেই।
ভারতের খ্যাতিমান ইমিউনোলজিস্ট এবং দ্য কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিনের পরিচালক রাম বিশ্বকর্ম বলেন, ‘ইমিউনিটি শব্দটির খুব অপব্যবহার হচ্ছে, যার অর্থই মানুষ পুরোপুরি বুঝছে না। ইমিউন সিস্টেম তো খুবই জটিল বিষয়। ইমিউনিটি বৃদ্ধির দাবি আসলে অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক।’
এমন একটা কিছু শরীরের মধ্যে ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে যাকে শরীর নিজেই চিনতে পারে না। এগুলো হলো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস কিংবা অণুজীব, যা কিনা অ্যালার্জির সৃষ্টি করে। রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের মধ্যে অধিকাংশেরই শরীরের উপরিতল প্রোটিন দিয়ে তৈরি, ফলে তাদের বহিরাগত হিসেবে চিনে ফেলে ইমিউন সিস্টেম।
মানুষের শরীরে দুই ধরনের ইমিউন রেসপন্স থাকে। সবার আগে সাড়া দেয় সহজাত ইমিউন রেসপন্স, যা সব ধরনের প্রাণীর মধ্যে থাকে। ইমিউন সেল খুব দ্রুতই অ্যান্টিজেনের ওপর আঘাত হানে। পরবর্তী সময়ে তার জায়গা নিয়ে নেয় অভিযোজিত ইমিউন রেসপন্স, যা কিনা প্যাথোজেনের প্রকারভেদ হিসেবে সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয় এবং তাকে প্রতিহত করে।
নিউট্রোফিলস, ম্যাক্রোফেজ ও মনোসাইটের মতো সাদা রক্তকোষ নিয়ে গঠিত সহজাত ইমিউন রেসপন্স, আর অভিযোজিত রেসপন্সের মধ্যে থাকে ‘টি’ সেল, ‘বি’ সেল ও অ্যান্টিবডি। এসব সেল তৈরি ও ব্যবস্থাপনার কাজটি নিয়ন্ত্রণ করে সাইটোকিনস। প্রোটিন দিয়ে তৈরি সাইটোকিনস আবার ইমিউন সেলগুলোর মধ্যে সংকেত পাঠানোর কাজে মধ্যস্থতা করে। কোনো খাবার কিংবা পণ্যের মাধ্যমে এদের কর্মকাণ্ড কিংবা সৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
পুনের আইআইএসইআরের ইমিউনোলজিস্ট সত্যজিৎ রাথ বলেন, ‘ইমিউনিটি একটিমাত্র বিষয় নয়। শরীরের কোষগুলো কোনো কিছুই করে না যতক্ষণ না তারা বাইরের উদ্দীপক বস্তু কর্তৃক সাড়া না পায়।’
তিনি বলেন, ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। যেমন এর মধ্য দিয়ে প্রো-ইনফ্লামেটরি সাইটোনিকস প্রচুর সংখ্যায় ছাড়া পাবে, যা শরীরে ব্যথা ও যন্ত্রণার সৃষ্ট করবে।
দ্য প্রিন্ট