৯৬ বছর বয়সে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে স্নাতক হলেন ইতালীয়

বণিক বার্তা অনলাইন

গিসেপ্পে প্যাতার্নো ১৯৩০ এর দশকে সিসিলিতে যখন বেড়ে উঠছিলেন তখনই তার মনের ভেতরে সুপ্ত বাসনা ছিল একদিন বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক হবেন। কিন্তু দারিদ্র্য, যুদ্ধ এবং পরিবারকে সাহায্য করার তাগিদ তার সেই স্বপ্ন কেড়ে নেয়। এখন তার বয়স ৯৬ বছর এবং তিনি তার সেই লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হলেন। তিনিই এখন ইতালির বয়স্কতম বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক।

ইউনিভার্সিটি অব পালেরমো থেকে দর্শনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের অনুভূতি বলতে গিয়ে প্যাতার্নো বলেন, অবশেষে আমার স্বপ্ন পূরণ হলো। প্যাতার্নো এক সাবেক রেলকর্মী এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি অস্ত্র ধরেছিলেন। 

তিনি বলেন, পড়াশোনা করতে পারা ছিল আমার জীবনের সার্বক্ষণিক এবং সবচেয়ে বড় আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু আমার পরিবারের শিক্ষার ব্যয় বহনের সক্ষমতা ছিল না। আমরা খুব বড় পরিবার ছিলাম, আর ছিলাম খুব গরীব।

প্যাতার্নো সাত ভাই-বোনের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। ফলে তাকেই সবার আগে কাজে যেতে হয়েছিল। পালেরমোতে মদ তৈরির কারখানায় কাজ করতেন বাবা। সেখানে সেও বাবাকে সহায়তা করতে যেত। ১৯৪৩ সালের জুলাই মাসে সিসিলিতে যখন মিত্রশক্তির সেনাবাহিনী এসে হাজির হয় তখন প্যাতার্নো ত্রাপানিতে ইতালি সেনাবাহিনীর টেলিগ্রাফার হিসেবে কাজ করতেন।

তিনি বলেন, যুদ্ধের পর তিনি সরকারি রেলওয়েতে চাকরি নেন। এই চাকরিতে খুব একটা আগ্রহ তার ছিল না। কিন্তু ওই সময় তিনি বিয়ে করেছিলেন, একটি সংসার ছিল। তাই একটা চাকরি খুব দরকার ছিল। তবে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তখনো এক বিন্দু কমেনি।

৩১ বছর বয়সে নৈশবিদ্যালয়ে ভর্তি হোন প্যাতার্নো। জরিপকারী হিসেবে হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট হন। ওই সময় তিনি সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যায় স্কুলে যেতেন। আবার রাত জেগে পড়াশোনা করতেন। কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যাল স্নাতক হওয়ার।

অবশেষে ২০১৭ সালে প্যাতার্নো ইউনিভার্সিটি অব পালেরমোতে দর্শন বিভাগে ভর্তি হন। তিনি বলেন, দৈনিক সকাল ৭টায় উঠে পড়তে বসতেন। অ্যাসাইনমেন্ট করার জন্য ছিল একটি পুরনো টাইপরাইটার। বিকালে একটু বিশ্রাম নিতেন এবং আবার সন্ধ্যায় পড়তে বসতেন। মাঝরাত পর্যন্ত টানা পড়তেন তিনি। প্রতিবেশীরা বলতো, এই বয়সে কেন এতো চাপ নিচ্ছেন? কিন্তু তারা তো স্বপ্নের শিখরে পৌঁছানোর গুরুত্ব বুঝতো না!

এর মধ্যে কভিড-১৯ মহামারী এসে তার স্নাতক হওয়া প্রায় ঠেকিয়ে দিয়েছিল। মাত্র কয়েকটা পরীক্ষা বাকি ছিল। তবে অনলাইনে কোর্স স্থানান্তরের সুযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রযুক্তি লুফে নেন প্যাতার্নো। এর মধ্যে সন্তানেরা স্বাস্থ্য নিয়েও খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তার ছেলে নিনি প্যাতার্নো বলেন, আমরা বাবাকে বলেছিলাম, আপনি আপাতত পরীক্ষা স্থগিত করেন। আবার না হয় অটাম থেকে শুরু করবেন। কিন্তু স্রেফ না করে দিয়েছেন। তার ভয় গ্রীষ্ম আসতে আসতে যদি আর ডিগ্রিটাই না করা হয়ে ওঠে!

প্যাতার্নোর সেই স্বপ্ন পূরণ হলো গত শুক্রবার। তিনি তার ক্লাসে সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে পাস করেছেন। প্যাতার্নো বলেন, এটা আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন। আমার একটাই চাওয়া ছিল যদি এই সময় আমার স্ত্রী এখানে উপস্থিত থাকতো। সে ১৪ দিন আগে মারা গেছে।

তবে প্যাতার্নো এখানেই থামছেন না। তিনি এবার মাস্টার্স করবেন। কারণ তার বিশ্বাস, এতো তাড়াতাড়ি তার মরণ হচ্ছে না! তার মা বেঁচে ছিলেন ১০০ বছর। সেই জিন তো তার শরীরেও!

দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন