রাজারহাটে চামড়ার জোগান কম হিলিতে বিপাকে আড়তদাররা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি যশোর ও হিলি

ঈদুল আজহার পর গতকাল প্রথম চামড়ার হাট বসেছিল যশোরের রাজারহাটে। কিন্তু সকাল থেকে ভারি বৃষ্টির কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তম এ চামড়ার হাট তেমন জমেনি। সেখানকার মোকামে গতকাল চামড়ার জোগান কম ছিল। দাম নিয়েও হতাশ হয়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, বেপারিরা যে দাম নির্ধারণ করছে, তাতে খরচই উঠছে না। অবশ্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা আশা করছেন, আগামী শনিবার হাট জমে উঠবে।

গতকাল হাটে ৩০ পিস ছাগলের চামড়া নিয়ে আসেন যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া গ্রামের রূপচান আলী। চামড়ার ন্যায্য দাম পাননি বলে দাবি তার। সব চামড়া তিনি বিক্রি করেছেন মাত্র ১৭০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি পিস চামড়ার জন্য তিনি পেয়েছেন ৬ টাকারও কম। অথচ প্রতি পিস চামড়ায় তার লবণ লেগেছে ১০ টাকার। খুলনার এক ব্যবসায়ী গতকাল রাজারহাটে ৩৭ পিস গরুর চামড়া নিয়ে আসেন। প্রতি পিস চামড়ার দাম পেয়েছেন ৪০০ টাকা হারে। তিনি বলেন, চামড়ার এমন দরপতন আগে কখনো দেখেননি তিনি। আসলে গতকাল হাটে যে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী চামড়া নিয়ে এসেছিলেন, তারা সবাই লোকসান দিয়ে চামড়া বিক্রি করে গেছেন।

খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাট। ঈদ-পরবর্তী হাটগুলোয় দেশের ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের নজর থাকে এ হাটের দিকে। তিন-চার বছর আগেও ঈদের সময় প্রায় ২০ কোটি টাকার চামড়া কেনাবেচা হতো সেখানে। কিন্তু সেই অবস্থা এখন আর নেই। এজন্য চামড়ার দরপতনকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চামড়া বিক্রি করে লবণের দামই উঠছে না। আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে চামড়ার ব্যবসা করতে গিয়ে পথে বসার উপক্রম তাদের। এ কারণে আগামী বছর থেকে এ ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার কথাও জানিয়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।

অবশ্য চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বাজার চাঙ্গা হওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেন, আগামী শনিবার পরবর্তী হাটের দিন বাইরের জেলা থেকেও বেপারি আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে চামড়ার দাম বাড়বে।

বৃহত্তর যশোর চামড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, ঈদ-পরবর্তী রাজারহাটে প্রচুর চামড়ার সমাগম ঘটে। কিন্তু গতকাল অতিবৃষ্টির কারণে বাইরে থেকে পাইকাররা আসেননি। এদিন হাটে মাত্র ১০ হাজার পিস চামড়া উঠেছে। আশা করছি, শনিবার হাট জমজমাট হয়ে উঠবে। তিনি আরো বলেন, সরকার কাঁচা চামড়া রফতানির উদ্যোগ নিলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।

এদিকে হাটের এ অবস্থাকে বিপর্যয় বলে মনে করছেন জেলা বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান। তিনি বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে খুচরা ব্যবসায়ীরা আর চামড়া কিনবেন না।

এদিকে দিনাজপুরের হিলিতে চামড়া কিনে এখন তা বিক্রি করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন আড়তদাররা। এখন পর্যন্ত কেউ চামড়া নিতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। তারা জানান, ট্যানারি মালিকরা সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনছেন না। দাম পুনর্নির্ধারণের পর তারা চামড়া কিনতে পারে বলে আড়তদাররা ধারণা করছেন।

হিলির চামড়াপট্টির আড়তদার আমজাদ হোসেন বলেন, গত বছর তারা যে চামড়া বিক্রি করেছেন, তার কয়েক লাখ টাকা এখনো পাননি। এর পরও তারা বিভিন্ন এনজিওসহ মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করে চামড়া কিনেছেন ও লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেছেন। কিন্তু এখন বিক্রি করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। কারণ খরচের অর্ধেক দামই পাচ্ছেন না তারা।

আড়তদাররা জানান, কোনো ট্যানারি মালিক বা মহাজন এখন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তারা নিজেরা কিছু ট্যানারি মালিকের সঙ্গে কথা বলেছেন। ট্যানারি মালিকরা তাদের জানিয়েছেন, তারা সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনতে পারবেন না। সরকার যদি মূল্য পুনর্নির্ধারণ করে, তবেই তারা চামড়া কিনবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন