দুর্যোগে প্রবাসীদের আয় অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে শক্তি জোগাচ্ছে —ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স শক্তি জোগাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, অর্থনীতির ক্ষতি পুষিয়ে জীবন-জীবিকার চাকা সচল রাখতে শেখ হাসিনা সরকার ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে। গতকাল সর্ব ইউরোপীয় শাখা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বাংলাদেশের এই সময়ে শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় অবস্থিত সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনা সভায় যুক্ত হয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্যোগে প্রবাসী আয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি জোগাচ্ছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা তৈরি পোশাক শিল্পের ক্রয়াদেশ বাতিলের প্রেক্ষাপটে নিজেই বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এরই মাঝে ক্রয়াদেশ আসতে শুরু করেছে। অর্থনীতি আকস্মিক স্থবিরতা কাটিয়ে পুরনো ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, লাখ লাখ বাংলাদেশী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। করোনার অভিঘাত ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বিশ্ব অর্থনীতির চালচিত্র। এর মাঝে প্রবাসীদের জীবন-জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্রায় ২০টি দেশে সহস্রাধিক প্রবাসী প্রাণ হারিয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। সংখ্যার হিসাবে কমবেশি যা- হোকপ্রতিটি মৃত্যুই আমাদের ব্যথিত করেছে। এরই মধ্যে করোনায় দেশে বিদেশে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাচ্ছি সমবেদনা।

প্রবাসীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিদেশে অবস্থান করলেও আপনাদের হূদয়জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের যেকোনো ভালো সংবাদ যেমন আপনাদের আনন্দিত করে, তেমনি খারাপ সংবাদ ব্যথিত করে। একটি মতলবি মহল দেশ বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে মিথ্যাচার অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে দেশের ইমেজ নষ্ট করছে। লাখ লাখ প্রবাসীর অবস্থানকে নড়বড়ে করছে। সম্প্রতি ইতালি বিএনপির এক নেতার এক বক্তব্যে ইতালি প্রবাসীদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নামক দলটি সরকারের কোনো ইতিবাচক প্রয়াস দেখতে পায় না। তারা সমালোচনা আর মিথ্যাচারের বৃত্তে আবর্তিত হচ্ছে। দিনের আলোতে দেখতে পায় রাতের অন্ধকার। প্রেস ব্রিফিং আর নেতিবাচকতার কাদামাটিতে আটকে আছে তাদের রাজনীতি।

তিনি আরো বলেন, প্রবাসে আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকুন। শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকুন। শেখ হাসিনা সরকারের ইতিবাচক অর্জন তুলে ধরুন, প্রচার করুন। প্রবাসে আপনাদের মধ্যে যারা তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে আছেন তাদের দায়িত্ব একটু বেশি। যারা সমস্যায় আছেন তাদের পাশে দাঁড়ান।

আমি জানি, আপনারা তা করছেন। সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে সেবা প্রদানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দূতাবাসগুলোকে সম্প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে। সময় তিনি দূতাবাসগুলোর সেবার মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে প্রয়োজনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীর নজরে আনার আহ্বান জানান। পাশাপাশি প্রয়োজনে তাকেও জানানোর পরামর্শ দেয়া হয়, যা তিনি নেত্রীকে অবহিত করতে পারবেন বলে জানান ওবায়দুল কাদের।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর বিষয়টি উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা যার যার অবস্থান থেকে প্রিয় নেত্রী, আমাদের আস্থার প্রতীক বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করি।

কাদের বলেন, চলছে শোকাবহ আগস্ট মাস। মাসে আমরা হারিয়েছি পরিবারের সদস্যসহ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার অমর স্থপতি, আমাদের সার্বভৌম মানচিত্রের চিত্রকর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে এক মর্মান্তিক ঘটনা। যে হত্যাকাণ্ডে নারী সন্তানসম্ভবা নারীও রেহাই পায়নি। বুলেটের আঘাতে বিক্ষত হয়েছে শিশুর দেহ, যা পৃথিবীর আর কোনো হত্যাকাণ্ডে দেখা যায়নি। সেদিন বিদেশে ছিলেন বলে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা নৃশংস হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যান।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আগস্ট মানে হারানোর বেদনা। হায়েনাদের অট্টহাসি আর ষড়যন্ত্রের গন্ধ। যে বুলেট ১৫ আগস্ট রাতের শেষ প্রহরে হানা দিয়েছিল, সে বুলেট ২১ আগস্ট আরো নির্মম হয়ে হানা দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে। ১৫ আগস্টে প্রাইম টার্গেট ছিল বঙ্গবন্ধু আর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রাইম টার্গেট ছিল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রের কুশীলবরা শুধু রূপ পরিবর্তন করে, হারায় না। আগস্ট এলে তাই আমাদের বেদনার মুকুরে ক্ষরিত হয় লোহিত শোণিত। ষড়যন্ত্রকারীদের অব্যাহত অপচেষ্টা আজও চলমান। আমাদের সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে উন্নয়ন অগ্রযাত্রাবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র সম্পর্কে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা, দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতির আকাশে বাংলাদেশ আজ এক দেদীপ্যমান সূর্য। উন্নয়ন অগ্রগতিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বমাঝে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত।

উন্নয়নের অভিযাত্রায় সম্প্রতি দুটি চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনার সংক্রমণ রোধ মানুষের সুরক্ষা এবং পাশাপাশি দেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে হয়েছে সাম্প্রতিক বন্যা। মানবিকতার উদাহরণ, আস্থার শেষ ঠিকানা আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা দিন-রাত পরিশ্রম বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন