অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে রিলায়েন্স ফিন্যান্স এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পিকে হালদার) পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ১০ আগস্ট তাদের দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দেয়ার জন্য নোটিস পাঠিয়েছেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান।
দুদকের অনুসন্ধান বলছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহী পদে থেকে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন পিকে হালদার। এসব সম্পদের বড় অংশই পাচার করেছেন বিদেশে।
এমডির দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের মাফিয়া ডন হয়ে উঠেছিলেন পিকে হালদার। তিনি পরোক্ষভাবে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে নানা কাজের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সেখানে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য কায়েম করেছিলেন। ২০১৫ থেকে চলতি বছরের প্রথম দিকের মধ্যে তিনি প্রভাব খাটিয়ে পিপলস লিজিংসহ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
পিকে হালদার রিলায়েন্স ফিন্যান্সের এমডি থাকা অবস্থায় তার আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে আরো বেশ কয়েকটি লিজিং কোম্পানির স্বাধীন পরিচালক বানান এবং একক কর্তৃত্বে অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে পিপলস লিজিংসহ বেশ কয়েকটি
লিজিং কোম্পানির টাকা বিভিন্ন কৌশলে বের করে আত্মসাৎ করেন। পিপলস লিজিংয়ে আমানতকারীদের ৩ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন কৌশলে আত্মসাৎ করে কোম্পানিটিকে পথে বসিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তিনি এসব কোম্পানির স্থাবর সম্পদ বিক্রি করে দেন এবং আমানতকারীদের শেয়ার পোর্টফোলিও থেকে শেয়ার বিক্রি করে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেন।
অর্থ আত্মসাতের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে দুদক প্রশান্ত কুমার হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। একই সঙ্গে তাকে সহযোগিতার অভিযোগে শ ওয়ালেস বাংলাদেশ লিমিটেডের এমডি এম নুরুল আলম, পরিচালক রেজাউর রহমান, মিসেস সৈয়দা রুহি গজনভী এবং শ ওয়ালেস ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এবং ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের পরিচালক মিজানুর রহমানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদক।
এর আগে গত ৮ জানুয়ারি প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। মামলার এজাহারে ১ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা পাচারেরও অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।
দুদকের অনুসন্ধানে বলা হয়, প্রশান্ত হালদার তার নিজ নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবে ২৪০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, তার মা লীলাবতীর নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবে ১৬০ কোটি টাকা এবং নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে আরো ১ হাজার ২৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা জমা করেন এবং পরবর্তী সময়ে এ টাকা উত্তোলন করে অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলেন।
জানা গেছে, অবৈধ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ উৎস থেকে অর্জিত সম্পদের বেশির ভাগই বিদেশে, বিশেষ করে কানাডায় পাচার করেছেন প্রশান্ত হালদার। বর্তমানে নিজেও বিদেশে অবস্থান করছেন তিনি। তবে ঢাকায় তার নামে একাধিক বাড়ি, প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে এবং নামে-বেনামে একাধিক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
ক্যাসিনো-সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রথম যে ৪৩ জনের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে, তাদের একজন ছিলেন প্রশান্ত কুমার হালদার।