গভর্নরের কাছে বিএমবিএর চিঠি

বিনিয়োগকারীদের মার্জিন হিসাবে ব্যাংকের লভ্যাংশ পাঠানোর অনুরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশী বিদেশী ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের ৩০ সেপ্টেম্বরের আগেই নগদ লভ্যাংশ পরিশোধে চলতি বছরের জুনে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সম্প্রতি ব্যাংকগুলো মার্জিন হিসাবধারী ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের প্রাতিষ্ঠানিক হিসেবে গণ্য করে লভ্যাংশ প্রদান থেকে বিরত থাকছে। অবস্থায় মার্জিন হিসাবধারীদের লভ্যাংশ দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)

সম্প্রতি বিএমবিএর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিধিমালা অনুসারে মার্জিন ঋণধারীদের লভ্যাংশ স্টক ব্রোকার বা মার্চেন্ট ব্যাংকে বিও হিসাবের মাধ্যমে বিতরণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে সম্প্রতি দেখা গেছে, ব্যাংকগুলো প্রাতিষ্ঠানিক লভ্যাংশ হিসেবে গণ্য করে মার্জিন ঋণধারীদের বিও হিসাবে লভ্যাংশ পাঠাচ্ছে না।

বিএমবিএর চিঠিতে মার্জিন হিসাবে নগদ লভ্যাংশ পাঠানো হলে ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীরাই লাভবান হবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এতে শুধু তাদের মার্জিন ঋণের বোঝাই কমবে না, বরং বিও হিসাবে তারল্য সরবরাহও হবে। এজন্য বিএমবিএর পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে নগদ প্রবাহ নিশ্চিত করার স্বার্থে ব্যাংকগুলোকে ব্যক্তিশ্রেণীর মার্জিন হিসাবে লভ্যাংশ বিতরণের জন্য নির্দেশ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, করোনায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক দুর্যোগ সামাল দেয়া এবং ব্যাংকগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে ২০১৯ সালের লভ্যাংশ বিতরণে বছরের মে মাসে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ১১ মে দেয়া এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো ২০১৯ সালের জন্য ঘোষিত নগদ লভ্যাংশ ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে বিতরণ করতে পারবে না। মূলধন সক্ষমতার ভিত্তিতে লভ্যাংশ ঘোষণার মানদণ্ডও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল তখন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, সঞ্চিতি সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এর আগে গৃহীত ডেফারেল সুবিধার অধীন নয় এরূপ বা ২০১৯ সালের জন্য কোনো ধরনের ডেফারেল সুবিধা গ্রহণ ছাড়া যেসব ব্যাংক দশমিক ৫০ শতাংশ ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১২ দশমিক শতাংশ বা তার বেশি মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে, সেসব ব্যাংক তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদসহ মোট ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে। এতে আরো বলা হয়েছিল, ন্যূনতম ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে অনূর্ধ্ব ১২ দশমিক শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হলে ওই শ্রেণীর ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে হবে। এক্ষেত্রে সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ দশমিক শতাংশ নগদসহ মোট ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে ব্যাংকগুলো। তবে দুই শ্রেণীর ব্যাংকের ঘোষিত নগদ লভ্যাংশই ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে বণ্টন করা যাবে না।

প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, সঞ্চিতি সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২০১৯ সালের জন্য গৃহীত বা এর আগে গৃহীত ডেফারেল সুবিধা পুরোপুরি সমন্বয় করা হলে যেসব ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধন ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ বা তার বেশি থাকে, সেসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে সর্বোচ্চ শতাংশ নগদসহ মোট ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে। নগদ লভ্যাংশ বণ্টন বন্ধ থাকবে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আর যেসব ব্যাংকের মূলধন ১১ দশমিক ২৫ শতাংশের কম কিন্তু ন্যূনতম সংরক্ষিত মূলধন ১০ শতাংশ হবে, সেসব ব্যাংক ২০১৯ সালের জন্য ঘোষণা করতে পারবে সর্বোচ্চ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ। এক্ষেত্রেও প্রয়োজন হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতির।

অবশ্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাংকের লভ্যাংশ বিতরণসংক্রান্ত নির্দেশনা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আগের সিদ্ধান্ত কিছুটা পরিবর্তন করে জুন আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বলা হয়, পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অধিকতর স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে শুধু ব্যক্তিশ্রেণীর স্থানীয় বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন এবং প্রচলিত অন্যান্য আইনের -সংক্রান্ত বিধিবিধান পরিপালন সাপেক্ষে ২০১৯ সালের জন্য ঘোষিত নগদ লভ্যাংশ চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে বিতরণ করা যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন