ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় রাঙ্গামাটির পর্যটন

প্রান্ত রনি রাঙ্গামাটি

নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে টানা চার মাস বন্ধ ছিল রাঙ্গামাটির সব পর্যটন কেন্দ্র। সময়ে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। অবশেষে গত সোমবার থেকে খুলে দেয়া হয়েছে সিম্বল অব রাঙ্গামাটিখ্যাত ঝুলন্ত সেতুটি। তবে সেতুতে প্রবেশের ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মাস্কবিহীন কারো কাছে প্রবেশের টিকিট বিক্রি করছে না কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ঝুলন্ত সেতুটি খুলে দেয়ার পরই খাতসংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। টানা চার মাস অলস সময় কাটানোর পর মৌসুমি ফল বিক্রেতা, ট্যুরিস্ট বোটচালক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাই স্বস্তিতে কাজে ফিরেছেন।

রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বণিক বার্তাকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই সরকারের নির্দেশনায় ১৮ মার্চ থেকে ঝুলন্ত সেতুতে প্রবেশসহ রাঙ্গামাটির সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ছিল। তবে এরই মধ্যে কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ অনেক জায়গায় পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে। তাই আমরা সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি পালনে কড়াকড়ি আরোপ করেই ঝুলন্ত সেতুটি খুলে দিয়েছি। চার মাস ধরে সেতুটি বন্ধের কারণে আমরা পর্যটন মোটেলেও কোনো বুকিং পাইনি। এতে প্রতি মাসেই কমপক্ষে আমাদের ২০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। চার মাসে ক্ষতির পরিমাণ কোটির টাকার কাছাকাছি। এখন আশা করছি, কিছু বুকিংও পাব।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অন্য বছরগুলোয় পর্যটন মৌসুম ছাড়াও দুই ঈদ কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটির পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। ঈদের টানা ছুটিতে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে হ্রদ-পাহাড় ঘেরা রাঙ্গামাটি। কিন্তু বছর করোনার প্রভাবে সবই ভেস্তে গেল। টানা বন্ধে ভেঙে পড়েছে অর্থনীতির চাকাও। গত ১৮ মার্চ থেকে রাঙ্গামাটির সব বিনোদন-পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল-মোটেল বন্ধের কারণে ঈদুল ফিতরের সময়ও বন্ধ ছিল সব। পরবর্তী সময়ে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-মোটেল খোলা হলেও বন্ধ ছিল পর্যটন বিনোদন কেন্দ্রে প্রবেশাধিকার। এতে পর্যটকের আগমন ঘটেনি রাঙ্গামাটিতে। হোটেল-মোটেল কর্মচারী-মালিক, বিনোদন-পর্যটন কেন্দ্রের উদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে স্থানীয় তাঁতশিল্পীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ট্যুরিস্ট বোটচালক নুর মোহাম্মদ মো. সেলিম জানান, টানা চার মাস ধরেই আমাদের চালক-সহকারীরা ঘরে বসে ছিলেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে যে জীবিকা নির্বাহ করেছি, একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন। এখন পর্যটন খোলার কারণে যদি পর্যটক আসেন, তাহলে হয়তো দুর্ভোগের সময়টা কেটে যাবে।

রাঙ্গামাটি আবাসিক হোটেল মতি মহলের স্বত্বাধিকারী শফিউল আজম বলেন, কোরবানির ঈদের আগে থেকেই হোটেল-মোটেল খোলা থাকলেও আমাদের বুকিং শূন্য ছিল। পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় রাঙ্গামাটিতে পর্যটক আসেননি, তাই আমাদের ব্যবসা হয়নি। মূলত বিনোদন কেন্দ্রের সঙ্গে হোটেল-মোটেল ব্যবসা জড়িত। করোনাকালীন হোটেল-মোটেল মালিকরা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। বড় বড় হোটেল মালিকরাও কর্মচারী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছেন।

তিনি জানান, চার মাস ধরে প্রতি মাসেই আমার ৭০-৮০ হাজার টাকার ক্ষতির হয়েছে। আমার মতো সব হোটেল ব্যবসায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এখন ঝুলন্ত সেতু যেহেতু খুলেছে, আশা করছি কিছু পর্যটক আসবেন। তবে স্থানীয় পর্যটন শিল্প টিকিয়ে রাখতে কড়াকড়িভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্যান্য পর্যটন বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেয়ার দাবি জানান ব্যবসায়ী।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, পর্যটন কর্তৃপক্ষ আমার কাছে এসেছিলেন। আমি বলেছি, আপনারা যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালাতে পারেন তবে চালু করুন। তবে মাস্কবিহীন যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে নজরদারি রাখতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন