দলবদলে মহামারীর বড় ধাক্কা

বণিক বার্তা ডেস্ক

গত দুই মৌসুম ধরেই শোনা যাচ্ছিল প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) ছেড়ে ফের বার্সেলোনায় ফিরতে যাচ্ছেন নেইমার। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল নেইমারের বার্সায় ফিরে আসা কেবল সময়ের ব্যাপার  মাত্র। এমনকি লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজের মতো  সুপারস্টাররাও  নেইমারকে বার্সায় ফেরাতে দুতিয়ালি শুরু করেছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত নেইমারের বার্সায় ফেরার  স্বপ্ন  অধরা  থেকে যায়। যা নিয়ে প্রকাশ্যে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন  মেসি  নিজে। এরপরও সম্ভাবনা ছিল আসছে  দলবদলে হয়তো নেইমার  ফিরে আসবেন বার্সায়। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাস মহামারী নেইমারের ফেরার প্রশ্নে ফের প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসিয়ে দিয়েছে। বার্সা  প্রেসিডেন্টে জোসেফ  মারিয়া বার্তেমেউ  সরাসরি বলেছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক  অবস্থার ভেতর নেইমারকে আনা  অসম্ভব। 

মার্চের মাঝামাঝি সময়ে যখন একে একে সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে  যায়, তখনই মোটামুটি বুঝা যাচ্ছিল ব্যাপক পরিবর্তন ঘটতে  যাচ্ছে ক্রীড়া দুনিয়ায়। যদিও শুরুর  দিকে বুঝা যাচ্ছিল না  কেমন হবে সেইসব পরিবর্তন। তবে লকডাউন যতই দীর্ঘ হয়েছে, খেলাধুলার  জগতের  হতাশা  ততই বেড়েছে। এখন খেলাগুলো  স্বরূপে ফিরতে শুরু করেছে।  ইতোমধ্যে ফুটবলের ঘরোয়া  লিগগুলোও শেষ  হয়েছে। এখন অপেক্ষা  আছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ  শেষ হওয়ার। এরপর  সবার  চোখ থাকবে  দলবদলে। কিন্তু মার্চ থেকে জুন  মাসের মাঝে বড় ধরনের অর্থনৈতিক  ক্ষতির ভেতর দিয়ে গিয়েছে  ক্লাবগুলো। এমনকি এখন খেলা  মাঠে  ফিরলেও, তাকে  মোটেই  স্বাভাবিক  অবস্থা বলা যাবে না। প্রচুর  নিয়ম কানুন মেনে এবং দর্শকবিহীন মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে খেলাগুলো। এই ‘নিউ নরমাল’য়ের  সঙ্গে এখন মানিয়ে নিতে হচ্ছে সবাইকে।  তবে মহামারীর সবচেয়ে বড় প্রভাব যে দলবদলের  ওপর পড়তে যাচ্ছে  তা বার্তেমেউর কথাতেই অনেকটা স্পষ্ট। আরো ভয়ের  কথা, বার্সা সভাপতি এই ধাক্কাকে কেবল এক মৌসুমের জন্য দেখছেন না।  দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি  দেখছেন তিনি। 

বার্তেমেউ  বলেন, ‘ইউরোপের সব  বড় ক্লাব আক্রান্ত হয়েছে। এটি  কেবল এক বছর থাকবে এমন নয়, তিন চার বছর থাকবে।’ এ সময় নেইমারের ফেরা নিয়ে  জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নেইমার? এ অবস্থায়য়? এটা অসম্ভব। এমনকি পিএসজিও এ অবস্থায় তাকে বিক্রি করতে  চাইবে না।’

মূলত  বার্সার  চোখ এখন ছোট ছোট দলবদলগুলোতে। যেসব ট্রান্সফারে বড়  ধরনের আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করতে  হবে না। গত মার্চ থেকে  জুন  মাসে  বার্সা প্রত্যাশার  চেয়ে  ২০০ মিলিয়ন ইউরো  কম আয় করেছে।  এমনাকি সামনের দিনগুলোতেও বড়  কোন আশার আলো দেখছেন না সভাপতি। বার্তেমেউর  মতে, ‘যদি  মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি  না হয়, তবে কোন দর্শক  আসবে না, মিউজিয়াম এবং  দোকানগুলোও বন্ধ থাকবে। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতিও  অব্যাহত  থাকবে।’

এ অবস্থায়  বার্সা কর্তৃপক্ষ এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে  এগিয়ে যাওয়ার কথা  ভাবছে। কোন খরচগুলো প্রয়োজনীয় এবং কোনগুলোর  প্রয়োজন নেই  তা নির্ধারণ করছে তারা। সেভাবেই সামনের দিনগুলোতে খরচ করা  হবে। 

বার্সা অবশ্য এখানে কেবল একটি উদাহরণ মাত্র। ছোট  থেকে বড় সব ধরনের ক্লাবকেই এমন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে  যেতে  হচ্ছে। সামনের দিনেও সবাইকে এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার নতুন নতুন উপায়ের সন্ধান করতে হবে। বড় ক্লাবগুলো অবশ্য ট্রান্সফারে খরচ কমিয়ে এবং আরো  নানা উপায়ে ক্ষতি  অনেকটা পুষিয়ে নিতে পারবে। তবে তাদেরকেও দেখতে হবে বড় ধস। গত মৌসুমে ইউরোপের পাঁচটি বড় ক্লাব  খেলোয়াড়দের পেছনে এক সঙ্গে খরচ করেছে ৫.৮ বিলিয়ন ইউরো।  যা কিনা তার  আগের মৌসুমের চেয়ে ১.১ বিলিয়ন ইউরো বেশি ছিল। যা এখন নিশ্চিতভাবে অনেকটাই নিচের দিকে নেমে যাবে। অন্যদিকে ছোট ছোট  অনেক ক্লাবকে পড়তে হচ্ছে অস্তিত্ব সংকটে। সম্মিলিতভাবে কার্যকর  কোন ব্যবস্থা না নিলে  সেসব থেকে মুক্তির তেমন কোন পথ নেই। 

তবে বার্তেমেউর কথা ধরেই  বলতে হয়, এই  পরিবর্তন  কেবল এক মৌসুম স্থায়ী  হবে না। আগামী কয়েক মৌসুমেও এই  ক্ষতি  সামলাতে বেগ পেতে  হবে ইউরোপের  হেভিওয়েট ক্লাবগুলোকে।  সে সঙ্গে গত কয়েক  মৌসুমে যেসব রেকর্ড দলবদলের সাক্ষী হয়েছিল ফুটবল দুনিয়া সেসবও এখন অতীত। ১৫০-২০০ মিলিয়নের দলবদলে গোটা বিশ্বের মাতামাতিও থামতে যাচ্ছে অনেক দিনের জন্য। পাশাপাশি সামনের দিনগুলোতে ক্লাবগুলোর প্রতি স্পন্সরদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে তার ওপরও নির্ভর করছে দলবদলের অনেক হিসাব নিকাশ। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন