টানা পাঁচদিন কমতে থাকার পর সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর পয়েন্টে আবারও বাড়তে শুরু করেছে যমুনা নদীর পানি। এ নিয়ে গত দুই মাসের ব্যবধানে চতুর্থ দফায় পানি বাড়ছে। তবে এ দফায় বন্যা হওয়ার কোনো আশঙ্কা বা আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ।
আজ রোববার (২ আগস্ট) সকালে যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৭১ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার (১৩ দশমিক ৩৫ মিটার) ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অপরদিকে কাজিপুর পয়েন্টে রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৫৬ মিটার। যা গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার (১৫ দশমিক ২৫ মিটার) ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, যমুনায় পানি বাড়ছে। আরও দু’দিন বাড়তে পারে। তবে দু’দিন পর আবারও পানি কমতে শুরু করবে। তবে চতুর্থ দফায় যমুনায় পানি বাড়ার বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই বলেও তিনি জানান।
গত জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে চার দফায় বাড়লো যমুনার পানি। এদিকে দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কবলে পড়েছে জেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। বন্যার কারণে চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর সহ এখনো নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে আছে। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে অনেক স্থানে। বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষ রয়েছেন দুর্ভোগে।
এদিকে তিন সপ্তাহ আগে বাড়িতে পানি উঠায় কাজিপুর উপজেলার মাইজবাড়ির ১৫টি পরিবার কাজিপুর ইকোপার্কের ভিতরে উচুঁ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন এবং ঝুপড়িঘর তুলে বসবাস করছেন। এখানকার বাসিন্দা মোতালেব হোসেন জানান, বাড়িতে পানি উঠায় প্রায় তিন সপ্তাহ হয় ইকোপার্কে আশ্রয় নিয়েছি। বৃষ্টি, রোদে সন্তান নিয়ে কষ্টে আছি। বাড়িতে এখনো অনেক পানি, কবে ফিরতে পারবো জানি না।
এদিকে কাজিপুর উপজেলার ভাটিতে দক্ষিণে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের পাঁচঠাকুরি ও শিমলা গ্রামের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক। ২৪ জুলাই যমুনার ভাঙ্গনে পাউবোর শিমলা স্পার যমুনায় বিলীন হলে ওই দু’গ্রামের সাড়ে ৩০০ পরিবার মুহূর্তের মধ্যে নিঃস্ব হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি ও বাব-দাদার বসতভিটা হারিয়ে বর্তমানে খোলা আকাশের জীবন যাপন করছেন।
বাঁধে আশ্রয় নেওয়া আব্দুস সালাম তালুকদার জানান, ২৪ জুলাই তাদের চারভাইসহ অন্যান্য শরিকদের ঘরবাড়ি ও বসতভিটা, মুরগির ফার্ম, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘একটা জামা পর্যন্ত সরাতে পারি নাই। আমরা বেশ কিছু পরিবার নিমিষেই নিঃস্ব হয়ে পথের ফকির হয়ে গেছি। এখন বাঁধে খোলা আকাশের নিচে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। পরিবার নিয়ে আগামীতে কোথায় বসবাস করবো সেই চিন্তায় আছি।’