মহামারীতেও বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে রেকর্ড সংখ্যক যানবাহন পারাপার

ছিল না যানজট

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ

করোনাভাইরাসের মহামারীতে সরকারি-বেসরকারি সবধরনের প্রতিষ্ঠানেরই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থল ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরাও এসময় দূরযাত্রায় অনুৎসাহিত করেছেন। এমন পরিস্থিতিতেও ঈদ উদযাপনে বাড়ি ফিরেছেন উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। আর যাত্রী বহন করে এবছরর বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক যানবাহন পারাপার হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনের পর গত ২০ বছরের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ যানবাহন পারাপার বলে জানিয়েছেন সেতু কর্তৃপক্ষ। 

তবে রেকর্ডসংখ্যক যানবাহন চলাচল করলেও চলাচলে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও যানজটে দুর্ভোগের রুট হিসেবে খ্যাত সিরাজগঞ্জে ঢাকা-হাটিকুমরুল-রাজশাহী এবং পাবনা- হাটিকুমরুল- রংপুর মহাসড়কে কোন যানজট ছিল না। যার কারণে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে  দুর্ভোগ পোহাতে ও নাকাল হতে হয়নি। ভোগান্তি ও দুর্ভোগ এড়াতে বিপুল সংখ্যক জেলা ও হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার (৩১ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা-উত্তরাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চল-ঢাকার দিকে ৪৮ হাজার ৩২১টি যানবাহন পারাপার হয়। এরমধ্যে ঢাকা থেকে উত্তরের দিকে গেছে ৩২ হাজার ৮৫টি এবং উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকার দিকে যায় ১৬ হাজার ২৩৬টি যানবাহন চলাচল করে। গত বছরে কোরবানির ঈদের আগে সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার ২৪৮টি যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু পারাপার হয়েছিল বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবারও গাদাগাদিভাবে বাস-ট্রাকে করে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি ফিরেছেন উত্তরাঞ্চলের মানুষ। বৃহস্পতিবার থেকে যানবাহনের চাপ বাড়লেও হাটিকুমরুল মোড় দিয়ে শুক্রবারও নির্বিঘেœ ও নিরাপদে উত্তরাঞ্চলের দিকে মানুষজন চলাচল করতে পেরেছেন। 

বগুড়া থেকে হাটিকুমরুল মোড়ে এসে গত তিনদিন অবস্থান করে হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার মহাসড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ও পর্যবেক্ষণ ও কঠোর অবস্থান নেয়ায় এবার যানজট নেই। পাশাপাশি কোরবানির পশুবাহী ট্রাকেও কোনও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেনি সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ার মহাসড়কে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)’র টোল আদায় ব্যবস্থাপনার ইনচার্জ ও নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান নাসির বাপ্পি শুক্রবার বিকেলে বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৩২১টি যানবাহন পারাপার হওয়ায় দুই কোটি ৮৪ লাখ টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে। যা সেতু নির্মাণ হওয়ার পর সর্বোচ্চ।

সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে জেলা পুলিশের সিরাজগঞ্জ জেলার ১০২ কিলোমিটার মহাসড়ক জুড়ে তিন শিফটে ২৫০ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ১৮টি পেট্রোল টিম, ছয়টি গাড়ি ও ১৩টি মোটরসাইকেল দল এবং তিনটি তদারকি দল প্রতি শিফটে মহাসড়কেই অবস্থান করছে। এবার আগে থেকেই তারা মাঠে রয়েছেন। এছাড়াও হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছেন।

বগুড়া হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. শহিদউল্লাহ বলেন, সিরাজগঞ্জের দুটি মহাসড়কসহ বগুড়া ও রংপুরের মহাসড়ক পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশের ৬৫০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। তিনদিন আগে থেকে আমি নিজে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মোড়ে অবস্থান করছি।

তিনি আরও জানান, করোনার প্রভাবে মানুষজন কম চলাচল করবে যার কারনে যানবান কমচলবে আমাদের এমন ধারনা বদলে গেছে। তিনি জানান, বুধবার সিরাজগঞ্জের দুটি মহাসড়ক দিয়ে ৩৫ হাজার ৮৫৫টি যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু পারাপার হয়। 

বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে। সড়ক দুর্ঘটনা মোকাবেলায় হাইওয়ে পুলিশের পক্ষথেকে সিরাজগঞ্জসহ বগুড়া ও রংপুরের মহাসড়কে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স, চারটি র‌্যাকার ও হোন্ডা ট্রুপ ক্যারেড দল সার্বক্ষণিক প্রস্তত রাখা হয়েছে। ঈদে কোনও ভাবেই মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি বা কোরবানির পশুর ট্রাকে চাঁদাবাজি করতে দেওয়া হবে না বলেও তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন