মহামারীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্বে ঈদুল আজহা উদযাপন

বণিক বার্তা ডেস্ক

শুক্রবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ বিশ্বব্যাপী বহু দেশে ঈদুল আজহার প্রথম দিন উদযাপিত হয়েছে। আজ বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে শুরু হয়েছে ঈদুল আজহা। নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবারের ঈদ উদযাপনে ছিল ভিন্ন আবহ। সংক্রমণ রোধকল্পে মানুষ মাস্ক পরে ঈদের নামাজ আদায় করা ছাড়াও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেছেন। যদিও সর্বত্র একই চিত্র ছিল না। 

সৌদি আরবে মুসল্লিরা নির্দিষ্ট মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ ও মদিনার মসজিদে নববী। মুসল্লিরা নিজেদের জায়নামাজ নিয়ে যান এবং মসজিদে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মতো স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপকরণ ছিল। 

কভিড-১৯ ইদের অনেক ঐতিহ্যকে থামিয়ে দিয়েছে। যেমন, নামাজ শেষে সৌহার্দ্যরে প্রতীক হিসেবে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করতেন মুসলিমরা। কিন্তু এবার সেটি থেকে বিরত থেকেছেন সবাই, এমনকি হাত মেলানো থেকেও। সৌদি আরবে কর্মরত ভারতীয় নাগরিক জাকির খান বলেন, ‘নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে আমরা নামাজ আদায় করেছি, এমনকি আমরা একে অপরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে মুখে মুখে।’

কভিডে অপেক্ষাকৃত বেশি ঝুঁকিতে থাকেন বয়স্করা। এই বয়স্ক মানুষগুলো থেকে দূরে থাকা ও তাদের বাইরে না নেয়ার বিষয়টি মুসলিমদের কষ্ট দিয়েছে। ২৬ বছর বয়সী নারী রাহাফ মীর বলেন, এ বিষয়টি ইদের চেতনাকেই নষ্ট করে দিয়েছে। বলেছেন, বয়সের ভেদে তাদের পরিবারের মানুষগুলো বিভক্ত হয়ে আছেন। তার কথায়, ‘আমার চাচী শুধু বয়স্ক মানুষদের জন্য একটি জমায়েতের আয়োজন করেছেন। আমার দাদী  থাকায় আমরা সেখানে যেতে পারছি না এবং আমরা তার সঙ্গে কুশল বিনিময় কিংবা কোলাকুলি করতেও পারছি না। আমি তাকে অনেক মিস করছি।’

রিয়াদের গৃহিনী ইফফাত আব্রু বলেন, ‘সামাজিক জমায়েত না করে আমরা অনলাইনে পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে সাক্ষাত করেছি। আশাকরি, শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং আমরা বড় পরিসরে মিলিত হতে পারব।’ ১৭ বছর বয়সী সিরিয়ান শিক্ষার্থী আয়া করিম বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখের যে আমরা বড় পরিসরে পরিবারের সবার সাথে ঈদ করতে পারছি না।’

জেদ্দায় বসবাসকারী পাকিস্তানি নাগরিক ফাহাদ সিদ্দিকী এই ইদে বেশ কয়েকটি কাজ করতে পারেননি বলে আক্ষেপ করলেন। তার কথায়, ‘করোনাভাইরাসের কারণে মানুষজন এবার হজ্জে যেতে পারেননি, এমনকি তারা ভ্রমণও করতে পারেননি এবং আমি কুরবানিও করতে পারিনি, যা প্রতিবার করি।’

পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ইদের নামাজ আদায় করতে শুক্রবার ভোরেই জেরুজালেমের মুসলমানরা দলে দলে বেরিয়ে পড়েন। জেরুজালেম ওয়াক্ফ বিভাগের পরিচালক শেখ আজম খতিব আরব নিউজকে জানান, উপস্থিতির সংখ্যা তিনি খুশি। তিনি বলেন, ‘জেরুজালেমবাসীকে দেখে আমি খুবই খুশি হয়েছি। আমরা মসজিদের সর্বোত্তম ব্যবহারের চেষ্টা করেছি এবং মুসল্লিদের বলেছি যেন সমাজিক দূরত্ব মেনে মসজিদের বাইরে অবস্থান নেয়।’

করোনাভাইরাসের সঙ্গে ইসরায়েলি সরকারের দমন নিপীড়নের কারণে এবার জেরুজালেমবাসীর ঈদ নিরানন্দ হয়ে উঠেছে বলে জানান আল-আকসা মসজিদের নির্বাহী পরিচালক ওয়াসফি কাইলানি। ফিলিস্তিনের জেরুজালেম বিষয়ক মন্ত্রী ফাদি হিদমি জানান, অন্তত দশজন ফিলিস্তিনিকে আল-আকসায় ইদের নামাজসহ অন্য নামাজের জন্য প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। 

কভিড-১৯ এর সংক্রমণ অপেক্ষাকৃত কম হওয়ার কারণে জর্ডানে স্বাস্থ্যবিধি অনেকটা শিথিল ছিল। ইদের আগ পর্যন্ত মাত্র এক ডজন মানুষের সংক্রমিত হয় দেশটিতে। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রী সাদ জাবের জর্ডানিয়ানদের অনুরোধ করেছেন, সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন তারা ইদ পালন করেন। 

লেবাননে সংক্রমণের হার খুব বেড়ে যাওয়ায় সেখানে মসজিদে খুব সীমিত সংখ্যক মানুষকে ইদের নামাজের অনুমতি দেয়া হয়। মিসরের আল-সায়েদা মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই নামাজ পড়েন মুসল্লিরা, যা টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। মিসরের ক্যাবিনেট অবশ্য দেশের মসজিদগুলোকে পুরোপুরি উন্মুক্ত করে দেয়ার কথাটি প্রত্যাখ্যান করেছে। 

সূত্র: আরব নিউজ 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন