কোরবানিকে ঘিরেও বাড়েনি মসলার চাহিদা, কমেছে দাম

আবু তাহের

প্রতি বছর ঈদুল আজহার আগে মসলার বাজার চাঙা হয়ে উঠলেও এবার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। ঈদকে কেন্দ্র করে চাহিদা বাড়েনি মসলাপণ্যের। অন্যদিকে দামেও তেমন একটা পরিবর্তন আসেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহামারী পরিস্থিতিতে হোটেল-রেস্তোরাঁয় চাহিদা কমে যাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় এবং এবার অনেকেই পশু কোরবানি না দেয়ার কারণে মসলাপণ্যের চাহিদা দামে কোনো ধরনের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে না।

এবারের ঈদে মসলাপণ্যের দাম পড়ে যাওয়ার বিষয়টি আমদানিকারকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। উৎসবকে সামনে রেখে যারা পণ্যগুলোর মজুদ গড়ে তুলেছিলেন, বাজার পরিস্থিতি তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে সবচেয়ে বেশি।

দেশে ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও দেখা গিয়েছে মসলাপণ্যের বাজার মন্দার বিষয়টি। দেশের ব্যবসায়ীদের বড় একটি অংশ এখান থেকেই মসলাপণ্য সংগ্রহ করেন। করোনা পরিস্থিতির প্রভাবে এবার কোরবানির মৌসুমেও মসলা বিক্রি কমেছে খাতুনগঞ্জে। বাজারে চাহিদা না থাকায় সেখান থেকে বাড়তি মসলা কিনছেন না পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এছাড়া সেখানে ক্রেতার সংখ্যাও আগের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।

খাতুনগঞ্জে বতর্মানে গুয়াতেমালা থেকে আমদানি করা এলাচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মূল্যে। ৬৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ভারত থেকে আমদানি করা লবঙ্গ। এছাড়া প্রতি কেজি দারুচিনি ২৫৫-৩২০ টাকা, ভিয়েতনামি গোলমরিচ ৩৫০, জায়ফল ৪০০, জয়ত্রী হাজার ১০০ থেকে হাজার ২০০, কাজুবাদাম ৬৫০, জিরা ২৫০, পেঁয়াজ ২৪ হলুদ ৮৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে কারওয়ান বাজারের পাইকারি মসলার দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে সেখানেও মসলার দাম কম। সেখানকার গ্রিন স্টোর, তাজ এন্টারপ্রাইজ, এমআর এন্টারপ্রাইজের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোয়ও ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়নি। এখানেও মসলাপণ্যের বাজার মন্দার কারণ সম্পর্কে অনেকের কোরবানি না দেয়ার পাশাপাশি করোনা আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বাজারের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, এখানে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে হাজার থেকে হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত দামে। এছাড়া দারুচিনি ৪৪০ টাকা, গোলমরিচ ৭০০-৮০০, জায়ফল  হাজার ৪০০, জয়ত্রী হাজার ৯০০, জিরা ৩৫০, লবঙ্গ ৯০০, কাজুবাদাম ৯৫০, চিনাবাদাম ১২০, রসুন ৮৫, আদা ১৫০ পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লকডাউনের সময়েও এসব পণ্যের কোনো কোনোটির দাম কেজিতে ২০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি ছিল।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মসলা ব্যবসায়ী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অমর কান্তি দাশ বণিক বার্তাকে বলেন, মূলত মসলার দাম কমানোর জন্য আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসেছিলাম। তবে রোজার ঈদের পর দামটা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কমে গেছে।

তিনি বলেন, অঞ্চলে মসলার বাজার এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ভারত। ভারতে কোনো মসলার দাম বাড়লে তার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও। বিশেষ করে জিরার দাম। বর্তমানে দেশে যে জিরা ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, সেটি ভারতে ৮০-১০০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। ফলে সেখানে দাম কমলে এখানে দাম পড়ে যায়। এছাড়া বাজারে আগে আফগানিস্তান, সিরিয়া থেকে জিরা আসত। সেগুলোর দাম ভারতীয় জিরা থেকে কেজিতে ৩০-৪০ টাকা করে বেশি। কিন্তু এখন সেটা আমাদের বাজারে চলে না।

সব ধরনের মসলার দাম কমার চিত্র উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও। টিসিবি জানিয়েছে, এক মাসে জিরার দাম কমেছে ৩০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এছাড়া আমদানি করা রসুনের দাম ৩২ শতাংশ দেশী রসুনের দার দশমিক ৭৬ শতাংশ কমেছে। এর বাইরে দেশী আমদানীকৃত শুকনা মরিচের দাম কমেছে যথাক্রমে ১০ দশমিক ৯১ ১০ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন